জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শিক্ষার্থী রুবেল পুরকাস্থ হত্যা মামলায় পিতা পুত্রসহ ৩জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
নিহত রুবেল পুরকাস্থ তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের রনজিৎ পুরাকায়স্থের জৈষ্ট পুত্র ও বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসপি পরীক্ষার্থী।
সোমবার সকাল ১১টায় এই দন্ডাদেশ প্রদান করেন সুনামগঞ্জের দায়রা ও জজ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হল, তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের মৃত জোয়াহের আলীর পুত্র মীর্জা হাছন আলী ও তাঁর দুই পুত্র নোমান মিয়া ও কালা মিয়া।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডিশনাল পি.পি সোহেল আহমদ সইল মিয়া এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এছাড়াও এই ঘটনায় মীর্জা মশ্রব আলী, নাছির উদ্দিন খান, শায়েস্তা মিয়া ও বাবুল মিয়া নামে ৪ জনকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
নিহত রুবেলের বাবা রনজিৎ পুরকায়স্থ এই রায়ে খুশি নয় বলে জানান, আমরা ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত যাবজ্জীবন দিয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
মামলা সূত্রে জানান যায়, ২০০০সালের ২০ আগস্ট রাতে তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের রনজিৎ পুরাকায়স্থের জৈষ্ট পুত্র রুবেল মিয়াকে পড়ার টেবিল থেকে কাজের কথা বলে বাড়ীর বাহিরে নিয়ে যায় প্রতিবেশি মীর্জা হাছন আলীর ছেলে নোমান মিয়া। মধ্যরাত হওয়ার পরও ছেলে না আসায় ঘুমিয়ে পড়ে রনজিৎ ও তাঁর স্ত্রী। রাত ২টায় বাহিরে চোর চোর চিৎকার শুনে রনজিৎ ও স্ত্রী উষারাণী এগিয়ে গেলে তখন প্রতিবেশি আলীর পুত্র মীর্জা হাছন আলী ও তাঁর দুই পুত্র নোমান মিয়া ও কালা মিয়া চোর অপবাদ দিয়ে ছেলে রুবেলকে খুনের হুমকি প্রদান করে শাসিয়ে যান। এসময় রনজিৎ ও স্ত্রী উষারাণী ছেলে রুবেলের রক্তাক্ত দেহ পুকুর পারে পড়ে থাকতে দেখেন। গুরুতর আহত রুবেল তাঁর মা বাবাসহ স্বাক্ষীগনের কাছে বলেন চোর অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশি মীর্জা হাছন আলী ও তাঁর দুই পুত্র নোমান মিয়া ও কালা মিয়া দারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে তাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে গেলে রুবেলকে তাহিরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় পরদিন চিকসা গ্রামের মৃত জোয়াহের আলীর পুত্র মীর্জা হাছন আলী ও তাঁর দুই ত্র নোমান মিয়া ও কালা মিয়াসহ ৭জনকে আসামি করে নিহত রুবেলের পিতা রনজিৎ বাদি হয়ে তাহিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মীর্জা হাছন আলী ও তাঁর দুই পুত্র নোমান মিয়া ও কালা মিয়ার বিরুদ্ধে জার্জশীট দাখিল করে তাহিরপুর থানা পুলিশ। সোমবার স্বাক্ষ প্রমাণ গ্রহন ও শুনানী শেষে দন্ডাদেশ প্রদান করেন বিজ্ঞ বিচারক।
এসময় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডিশনাল পি.পি সোহেল আহমদ সইল মিয়া, বাদী পক্ষের আইনজীবী রবিউল লেইস ও আসামী পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জামিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।