আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো সরাসরি কিংবা আকার ইঙ্গিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছেন। মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটির বিশেষ সুবিধা দেয়া সাংবিধানিক আইনটি বাতিল করার পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ।
অপরদিকে ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিল করেছে ভারতীয় সরকার।
চীন, আমেরিকা ও রাশিয়ার অবস্থান:
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সংকট নিয়ে যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে তখন থেকেই চীন পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। এ ছাড়া, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে সেখানেও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে বেইজিং।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে নিয়ে চীনা সামরিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তান হচ্ছে সময়ের পরিক্রমায় উত্তীর্ণ ও পরীক্ষিত বন্ধু। সেই সম্পর্ক থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান এই উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্যেই চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে পাকিস্তানের। এর আওতায় চীন পাকিস্তানকে সামরিক দিক দিয়ে আরও বেশি সক্ষম করে তোলার জন্য সহযোগিতা করবে।
অন্যদিকে কাশ্মীর সংকট সমাধানে জাতিসংঘের চার্টার ও রেজুলেশন অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশ রাশিয়া।
কাশ্মীর সংকট নিয়ে রাশিয়ার এমন আহ্বান ও বক্তব্যে অবাক হয়েছে মোদি সরকার। এর কারণ ভারতের পুরনো বন্ধু রাশিয়া। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থান বেশ ভালোই জানা রাশিয়ার।
তারপরও কাশ্মীর সংকট সমাধানে জাতিসংঘ চার্টার ও রেজুলেশন অনুসারে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাশিয়া আশা ব্যক্ত করায় তা ভারতকে বিস্মিত করেছে।
ভারতের ধারণা, কাশ্মীর ইস্যুতে বরাবরের মতোই অবস্থানে অনড় থাকবে রাশিয়া। ভারতের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানাবে তারা। তবে ভারতকে চমকে দিয়েই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে দেশটি।
সম্প্রতি পাকিস্তানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশির সঙ্গে আলোচনায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ সমাধানে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ের চেয়ে কোনও বিকল্প নেই।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে চীন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেও এই ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থানেই থাকতে চায় আমেরিকা।
চলতি মাসের শুরুতে কাশ্মীর সংকট সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেও ফ্রান্সে জি-৭ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাশ্মীর সংকট ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের ইতিবাচক পদক্ষেপেই নিরসন হবে বলে মনে করে, মধ্যস্থতার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি।
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান:
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতকে সমর্থন জানালেও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দুই দেশ তুরস্ক ও মালয়েশিয়া এর বিরোধিতা করেছে।
ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (স্বায়ত্বশাসন) বাতিল করার ঘটনায় সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির ইমরান খানকে বলেন, তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ অধিবেশনের ফাঁকে তিনি ইমরান খানের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হয়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
কাশ্মীর পরিস্থিতির বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকেও অবহিত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে চলামান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এরপর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এরদোগানকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি তার তুরস্কের সমকক্ষ মেভলুত কাভুসগলুর সঙ্গে টেলিফোনে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান।
তুরস্কের পাশাপাশি কাশ্মীরি মুসলমানদের প্রতি সমর্থন দেওয়ায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্খার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে ভারতকে পক্ষপাতহীন নীতি অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। পাশাপাশি মোদি সরকারকে কাশ্মীরিদের সাথে অন্যায় আচরণ না করার আহ্বান জানান ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় এই নেতা।
কাশ্মীর নিয়ে আরব দেশগুলোর অবস্থান
ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করায় কাশ্মীর নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। কাশ্মীর ইস্যুতে সৌদি আরব এখন পর্যন্ত সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন না করলে ভারতকেও সমর্থন জানায়নি।
তবে গত ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সঙ্গে প্রায় তিনবার ফোনালাপে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
শুরু থেকেই কাশ্মীরি ইস্যু নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মতামত না জানালেও ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষকে সহনশীলতার উপদেশ দিয়েছে সৌদি আরব।
তবে এইদিক থেকে ব্যতিক্রম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য দুটিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়েছে আরব আমিরাত।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে সেখানে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘জায়েদ মেডাল’ও দেয়া হয়েছে তাকে। এছাড়াও আবুধাবিকে নরেন্দ্র মোদির ‘দ্বিতীয় বাসস্থান’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।