তাহমিম আল আশিক:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধার সম্পাদক পদ থেকে সরে দাড়াতে হল রেজওয়ানুল হক শোভন ও গোলাম রব্বানিকে । তাদের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠে যা তাদের এই পরিনতির কারন ।
প্রথমত জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে চাঁদা দাবি:
শোভন ও রাব্বানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবি করেছেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের এক সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে খবর প্রকাশ হয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে গোলাম রাব্বানী এ বিষয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে রাব্বানী লিখেছিলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
“এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”
তবে তাতে ক্ষমা পাননি শোভন ও রাব্বানী। দুপুরেই সাংবাদিকদের কাছে রাব্বানীর অভিযোগ অস্বীকার করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। রাব্বানীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরনগরের উপাচার্য বলেন, “কী না করেছে সে (রাব্বানী), একজন ছাত্রনেতা, আমাদের ভবিষ্যৎ। শুধু যে এ গল্প (জাহাঙ্গীরনগরে চাঁদা দাবি) তা কিন্তু না, কুষ্টিয়া (ইবি), ঢাবি, জবিতেও ঘটেছে।
“এসব পটভূমিতে দাঁড়িয়ে প্রিয় ছাত্রলীগের পঁচন না ধরে সেজন্য হয়ত প্রধানমন্ত্রী তদন্তও শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ হয়ত আমার ঘটনা দিয়ে এটা শেষ হয়ে গেল।”
জ্যেষ্ঠ নেতারা ফোন দিয়ে না পাওয়া ও সভায় দেরীতে উপস্থিত হওয়া ঃ
২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সম্মেলন আয়োজিত হয় । শোভন রব্বানি সময়মত উপস্থিত হতে পারেনি । এ ব্যাপারে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্ষুদ্ধ হন । এ ব্যাপারে রব্বানি বলেন “২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনের দেরি প্রসঙ্গে- ১৮ জুলাই আপনি দেশের বাইরে যাবার আগে অনুমতি নিয়ে ১৯ তারিখ আম্মুর (সাধারণ সম্পাদক) ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এবং সভাপতি মাদারীপুর গিয়েছিলাম। ওই দিন সারারাত নির্ঘুম জার্নি আর বেশ কয়েকটি পথসভা (সর্বশেষ সকাল ৮টায় সাভারে) করে সকাল ৯টায় ঢাকা ফিরি। রেস্ট নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১২টার সম্মেলনে পৌঁছাতে আমাদের ৪০ মিনিট দেরি হয়, যা অনিচ্ছাকৃত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই অবগত। সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার বিষয়টিও অতিরঞ্জিত। গত ১ বছরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচিতে (সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত) আমরা উপস্থিত থেকেছি এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ডাকসুর জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে কম উপস্থিতি নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা অতিরঞ্জিত।”
তবে শোভন-রাব্বানীর অপরাধের প্রমাণ হাতে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন বলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
পদবিন্যাসে দুর্নীতির অভিযোগ:
শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন ছাত্রলীগ নেতাদের একটি বড় অংশও। তারা দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে সংগঠনটির ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এতে স্থান না পাওয়া কিংবা প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা।
তারা অভিযোগ করেন, বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামিসহ নানা অভিযোগবিদ্ধ অনেককে অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বঞ্চিত করা হয়েছে অনেক ত্যাগী নেতাকে।
এ নিয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে মারামারিও বাঁধে কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের। এরপর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে আশ্বাসে পিছু হটে বিক্ষুব্ধরা।
এছাড়াও মাদকের সাথে জড়িত থাকা , টেন্ডারবাজি এমন নানাবিধ অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে । যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই পরিনতি । উল্লেখ্য , ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। তার আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সেনি/এএমএস/