ক্যাসিনো সেলিম ছিলেন মাফিয়াদেরও বস - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
ক্যাসিনো সেলিম ছিলেন মাফিয়াদেরও বস - Shera TV
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

ক্যাসিনো সেলিম ছিলেন মাফিয়াদেরও বস

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

ক্যাসিনো কাণ্ডে প্রিন্টিং ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের নাম বেরিয়ে আসার পর তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে পেরেছে র‌্যাব। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তার মতে, এই সেলিম ‘মাফিয়াদেরও মাফিয়া’। জি কে শামীম, সম্রাট, খালেদদেরও বস সে। তার যোগাযোগ আরও ‘ওপরে’।

র‌্যাবের অনুসন্ধানেও মিলেছে ‘ক্যাসিনো সেলিম’ হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধানের অদৃশ্য ক্ষমতার তথ্য। সবাই তাকে সমীহ করে চলতেন। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা এখন সেই ক্ষমতার উৎস খুঁজছে। সেলিম নিজেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে চমকপ্রদ বেশকিছু তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।

র‌্যাব সূত্র বলছে, ‘ক্যাসিনো সেলিম’ যে এত বড় মাফিয়ার মাফিয়া, তা অনেকের ধারণারও বাইরে। সম্প্রতি ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত যাদের নাম গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের চেয়েও বড় মাফিয়া এই সেলিম। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সঙ্গে এই সেলিমের যোগাযোগ অনেক আগে থেকে।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ পর্যায় থেকে সেলিমকে আটকের নির্দেশনা না থাকলে তাকে কেউ আটক করার সাহস পেত না।

সূত্র জানায়, রাজধানীর বনানীতে মাফিয়া সেলিমের একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। সেখানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেরই নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পার্লার ও ফ্ল্যাটে ছিল দেশি-বিদেশি সেলিব্রেটি-মডেলদের আনাগোনা। পুলিশ বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কেউ সেখানে গেলেও ভেতরে ঢুকতে পারত না। ওই ভবনের নিচ পর্যন্ত গেলেই ঊর্ধ্বতন কারও ফোন পেয়ে ফিরে আসতে হতো।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, অনেক জায়গাতেই ‘নারী এসকর্ট’ সরবরাহ করতেন সেলিম। ঢালিউড, বলিউড, থাই, হংকংসহ বিভিন্ন দেশের নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। ‘কাছের লোক’দের জন্য তিনি চাহিদামাফিক ‘নারী এসকর্টে’র জোগান দিয়ে যেতেন।

ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির সূত্র আরও জানায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডেও সবাই সেলিম প্রধানকে সমীহ করেই চলতেন তার প্রভাবের জন্য।

সূত্র জানায়, সেলিম প্রধানের প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা কেবলই লোক দেখানো। এর বাইরে তিনি কেবল অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যবসাই করতেন না, বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী একটি দেশের সোনা চোরাচালানের মূল হোতা তিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার চক্রের নেতৃত্বেও রয়েছেন এই সেলিম। এর ফলে দেশের ‘প্রভাবশালী’ ও ‘ক্ষমতাধর’ অনেকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। মূলত এখান থেকেই তার ক্ষমতার দাপট বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানিয়েছেন, চার দলীয় জোট সরকারের সময় হাওয়া ভবনের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়াদের বস বনে যান তিনি। ওই সময় তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়ে আলোচনায় আসেন। সরকারের পতন হলে সেই গাড়িটিও ফেরত নেন তিনি। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার আগেও সেই গাড়িটিই ব্যবহার করেছেন সেলিম।

সূত্র জানায়, সেলিম প্রধানের অনলাইন ক্যাসিনোর মূল সার্ভার ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে। সেখান থেকেই অনলাইন জুয়ার কপিরাইট কিনে ঢাকায় চালাচ্ছিলেন এই অবৈধ ব্যবসা। ম্যানিলাকেন্দ্রিক বিশ্বের কুখ্যাত বেশ কয়েকজন জুয়াড়ির সঙ্গেও রয়েছে সেলিম প্রধানের উষ্ণ যোগাযোগ। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন তিনি।

র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ক্যাসিনো সেলিম তিনটি বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীদের একজন জাপানি, একজন বাংলাদেশি, আরেকজন রাশিয়ান। এর আগে জাপানেও ক্যাসিনোর জাল পেতেছিলেন সেলিম। তবে সেখানে তার নামে তিনটি মামলা হওয়ার পর ফিরে এসেছেন। অপরাধ জগতে সুবিধা করতে না পেরে আমেরিকাতেও থাকতে পারেননি তিনি।

সূত্রগুলো বলছে, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান হবে— সেটা অনেক আগেই টের পেয়েছিলেন সেলিম প্রধান। এ কারণে আগে থেকেই তিনি তল্পিতল্পা গুটিয়েছেন। সবশেষ তিনি ভেবেছিলেন, তার যেহেতু থাই পাসপোর্ট রয়েছে, সহজেই বিমানবন্দর পার হয়ে যেতে পারবেন। তবে তার এই ভাবনা কাজে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ডগামী ফ্লাইটে উঠলেও সেই ফ্লাইট থেকেই তাকে নামিয়ে এনে আটক করেছে র‌্যাব।

সেলিমের নানা অপকর্মের চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, তাদের বিষয়েই এখন সন্ধান করছে র‌্যাব। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সাজায় আপাতত জেলে গেলেও মাদক ও মানি লন্ডারিং মামলায় ফের তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তার বিশাল চক্রের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, সে তথ্য উদ্ধার করাই হবে র‌্যাবের প্রধান লক্ষ্য।

এর আগে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩২২ নম্বর ফ্লাইট থেকে সেলিম প্রধানকে নামিয়ে এনে আটক করে র‌্যাব। ওই দিন রাত ১০টায় তার গুলশানের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ১৮ ঘণ্টার সেই অভিযান শেষ হয় পরদিন মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেল ৪টায়। তার বাসা থেকে বাংলাদেশি ৭ লাখ টাকা, ২৩ দেশের ৭৭ লাখ টাকা সমমূল্যের মুদ্রা, ৮ কোটি টাকার চেক, দুইটি হরিণের চামড়া ও বেশ কয়েক বোতল বিদেশি মদ জব্দ করে র‌্যাব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360