অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী বিক্ষোভকারিদের সাথে স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের সংঘর্ষ-সহিংসতায় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা একটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
এই সংঘর্ষে উর্দুভাষী বিক্ষোভকারিরা ইটপাটকেল ছুঁড়েছে এবং পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেটে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
উর্দুভাষীরা এখনও আটকে পড়া পাকিস্তানী হিসেবে শরণার্থী মর্যাদায় বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ দাবি করছে।
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, উর্দুভাষীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেয়ায় তারা এখন শরণার্থীর কোন সুবিধা পেতে পারে না।
উর্দুভাষী বিক্ষোভকারিরা বিক্ষোভ মিছিল করে মোহাম্মদপুরে তাদের জেনেভা ক্যাম্পের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন বেলা সাড়ে বারটার দিকে। তারা রাস্তার ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এই বিক্ষোভকারী কয়েকজন বলেছেন, তাদের কর্মসূচির একপর্যায়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর সেখানে পুলিশ তাদের ওপর একের পর এক কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুঁড়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারী কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় এবং আটকের সময়ই তাদেরকে পুলিশের বেধড়ক মারধোর করতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারিদের অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান বলেছেন,কোন নেতাকর্মী বা সমর্থক ছাড়া একাই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারিদের থামানোর চেষ্টা করে তিনিই তোপের মুখে পড়েছিলেন।
মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারি পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান বলছিলেন, উর্দুভাষী বিক্ষোভকারিরাই ইটপাটকেল ছুড়ে এবং যান বাহন ভাংচুর করে পুরো এলাকায় সহিংসতা ছড়ালে তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে।
এই বিক্ষোভ এবং তারপর সংঘর্ষ সহিংসতার পেছনে মুল বিষয় ছিল বিদ্যুতের দাবি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী-পুরুষ শিশুসহ প্রায় ৩০ হাজার উর্দুভাষীর বসবাসের জেনেভা ক্যাম্পে ৩১ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে।
সেজন্য গত মাসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, তবে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ঘণ্টা দুয়েক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
এখন বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভকারী উর্দুভাষীরা এখনও ক্যাম্পে শরণার্থীর মর্যাদার সব সুবিধা চাইছেন।
তারা বকেয়া মকুফ এবং বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ দাবি করছেন। সেখানে তাদের কয়েকজন বলছিলেন, “আমরা গরিব। আমাদের বিদ্যুৎ বিল দেয়ার মতো ক্ষমতা নেই।এছাড়া আমাদের শরণার্থী হিসেবে দেখিয়ে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য টাকা আনা হয়। সেই টাকা কি করা হয়?”
উর্দুভাষীরা নিজেরাই আদালতের আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে ভোটার হয়েছেন।
তবে তারা আবার শরণার্থী মর্যাদায় বিদ্যুতের বকেয়া মকুফের জন্য আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার প্রায় দেড় দশক আগে তাদের সব সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শাহ কামাল বলেছেন, উর্দুভাষীরা ক্যাম্পে থাকলেও এখন তারা শরণার্থী নয় এবং সেজন্য বিনা পয়সায় তারা বিদ্যুৎ পেতে পারে না।
“তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক। এবং তারা এখানে ভোট দিচ্ছে। তারা নাগরিক সব সুবিধাও ভোগ করছে। ফলে তারা নিজেদের বির নিজেরা দেবে। তারা তো এখন শরণার্থী না। পরে বিদ্যুৎ নিলে তাকে বিল দিতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।”
কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি কোটি টাকা বকেয়া মাফ করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু উর্দুভাষীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।