বেড়িয়ে এলো বুয়েটে নির্যাতনের আরও ভয়াবহ কাহিনি - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
বেড়িয়ে এলো বুয়েটে নির্যাতনের আরও ভয়াবহ কাহিনি - Shera TV
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:৫৫ অপরাহ্ন

বেড়িয়ে এলো বুয়েটে নির্যাতনের আরও ভয়াবহ কাহিনি

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

সেরা নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যারা প্রাণভয়ে এতদিন নির্যাতনের কথা গোপন রেখেছিলেন, তারা ফাঁস করছেন তাদের ওপর রোমহর্ষক সব নির্যাতনের ঘটনা। ‘ইউরিপোর্টার’ নামে বুয়েটের একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করছেন চরম নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা। এদিকে আবরার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত ছাত্রলীগের তিন নেতাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় তিতুমীর হলের সাবেক এক শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় না দিয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর অভিযোগে লিখেন, নিজেকে শিবির বলে স্বীকার করানোর জন্য তার ওপর চলে হুবহু আবরারের মতোই অকল্পনীয় নির্যাতন। ‘ইউরিপোর্টার’ নামে বুয়েটের ওয়েবসাইটে ওই শিক্ষার্থী তুলে ধরেছেন, তাকে বস্তাবন্দী করে কীভাবে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয়েছিল। তার অভিযোগ, ২০০৬ নম্বর রুমে তাকে ডেকে নিয়ে যায় ১২ ব্যাচের জাওয়াদ। তার কোনো ধারণাই ছিল না তাকে কেন ডাকা হয়েছে। সেখানে নবম ব্যাচের শুভ্র টিকাদার, সিয়াম, শুভম, দশম ব্যাচের কনক, রাসেল আর ১১তম ব্যাচের তানভীর রায়হান (টিআর নামে কুখ্যাত) তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ওই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আজগুবিভাবে আমি শিবির করি এটা প্রমাণ করার জন্য আমাকে টর্চার করে। প্রথমে তানভীর আমাকে গালে প্রচন্ড থাপ্পড় মারে। আমার মাথা ঘুরে যায়। ঠোঁট কেটে যায়। এটা ওদের টেকনিক। আচমকা আঘাত করে টর্চারের মুড ক্রিয়েট করে। এরপর তানভীর আমার বুকে প্রচন্ড এক লাথি মারে। আমি মেঝেতে পড়ে যাই। কেউ এসে তোলে আমাকে। এরপর আমাকে জোর করে স্বীকার করতে বলে যে আমি শিবির করি। স্বীকার না করলে আমার মাথায় একটা বস্তা পরিয়ে দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর শুধু মুহুর্মুহু রডের বাড়ি পড়তে লাগল পিঠের ওপরে। একজন মনে হয় টায়ার্ড হয়ে রডটা রাখতেই আরেকজন রড হাতে তুলে নেয়। এভাবে থেমে থেমে প্রায় এক ঘণ্টা বস্তাবন্দী হয়ে মার খেয়েছিলাম।’ রোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার সাবেক ওই ছাত্র অভিযোগে জানান, এ অবস্থায় যখন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অবস্থায় তখন বর্বর অত্যাচারীরা আশ্রয় নেন নতুন টেকনিকের। মাথা থেকে বস্তা খুলে একজন এসে খুব আদর করে তাকে রক্ষা করার ভান করে বলে, সে যদি বলে ‘আমি শিবির করি’ তাহলেই সে অন্যদের থেকে বাঁচিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি আল্লাহর রহমতে ঘোরের মধ্যেও বুঝতে পারি এটাও ওদের চাল। এরপর আবার মার দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেয়। শুভম এসে আমার পা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরামর্শ শুনে কাজল আর রাসেল মিলে আবার পূর্ণোদ্যমে আমার পা লক্ষ্য করে রড দিয়ে পেটানো শুরু করে। একপাশ হয়ে যাওয়ায় সব মার এসে লাগে বাম পায়ে। একপর্যায়ে আল্লাহপাক মুখ তুলে তাকায়। ওরা কোনো কারণে আমার ওপরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমাকে চলে যেতে বলে। আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ‘যাওয়ার সময় হলের গেটে আমাকে বলে, ‘কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি রাস্তায় এক্সিডেন্ট করছিস।’ পাঁচবার আমাকে দিয়ে মিথ্যা উত্তর প্র্যাকটিস করিয়ে যখন ছেড়ে দেয় তখন রাত ৩টা। আমি এখন কোথায় যাব হল থেকে? কোনো রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না। শরীরে একফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যত দ্রুত পারা যায় ওদের দৃষ্টির সীমানা থেকে চলে যেতে চাচ্ছিলাম, যদি আবার সেই জাহান্নামে ডাকে! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিতুমীর থেকে বের হয়ে পলাশীর কাছে এসে একটা রিকশা ডাকি শরীরের সব শক্তি জড়ো করে। তারপর আমার চাচার বাসায় চলে যাই। এর পরের বুয়েটের বাকি সময়টা একটা ট্রমা নিয়ে কাটিয়েছি।’ এভাবেই সাবেক ওই শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন হল প্রভোস্ট বরাবর অভিযোগে। নির্যাতনের শিকার এমন বহু শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যুর পর মুখ খুলছেন। বুয়েটে ছাত্রলীগের নির্যাতনের চিত্র সামনে নিয়ে আসেন মো. এনামুল হক নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী। নিজের ফেরিভাইড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে পোস্টজুড়ে দিয়েছেন সেদিনের নির্মম নির্যাতনের দুটি ছবিও। যেখানে দেখা গেছে, নির্যাতনের কারণে পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের নানা চিহ্ন। এনামুল হক বলেছেন, এসব মারের দাগ আবরারের নয়; এগুলো তার শরীরেরই ছবি। আবরার মারা গেলেও সেবার ছাত্রলীগ কর্মীর নির্যাতনের পরও প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তিনি।

ছাত্রলীগের আরও তিনজন রিমান্ডে : আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগের আরও তিনজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ডে পাঠানো তিন আসামি হলেন- শামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১) ও মো. আকাশ (২১)। এর মধ্যে আসামি রাফাত বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মনির বুয়েটের পানিসম্পদ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এবং আকাশ একই ব্যাচের সিই বিভাগের ছাত্র। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর জিগাতলা থেকে রাফাতকে, ডেমরা থেকে মনিরকে ও সন্ধ্যার পর গাজীপুরের বাইপাল থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আবরার নিহতের ঘটনায় তার বাবা ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ১৩ জন রিমান্ডে আছে। এর আগে রবিবার দিবাগত রাতে আবরারকে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে অচেতন এ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360