লাইফস্টাইল ডেস্ক:
হাঁপানি ফুসফুসের অতিসাধারণ একটি পরিস্থিতি যা যেকোনো বয়সেই হয়ে থাকে। যদিও প্রায় ক্ষেত্রে এটি শৈশব থেকেই শুরু হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে- “প্রাপ্তবয়স্করাও তাদের লাইফটাইমে যেকোনো সময়ে প্রথমবার হাঁপানির সমস্যায় ভুগতে পারে“। হাঁপানিজনিত সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তবে যদি আমরা প্রাকৃতিক সমাধানগুলো লক্ষ্য করি, সেক্ষত্রে কিছু যোগাসন রয়েছে যা মেডিকেল চিকিৎসার পাশাপাশি হাঁপানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক বেশি কার্যকর। আজ আমরা জানাবো হাঁপানির মুক্তিতে যোগাসন সম্পর্কে। তাহলে দেখে নিন এবার!
সুখাসন মনকে শিথিল করার পাশাপাশি আপনাকে শ্বাস নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ফোকাস করতে সহায়তা করে। যা পরবর্তীতে আপনার ফুসফুসের জন্য খুব ভালো কাজ করে। যদি সঠিকভাবে অনুশীলন করা হয় তবে সুখাসন আপনাকে হাঁপানির বা শ্বাসকষ্ট মুক্তিতে যোগাসন এর মাধ্যমেই শ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটিকে সহজ বসার ভঙ্গি বা “ইজি সিটিং পোজ” হিসাবেও ধরা হয়ে থাকে। এবার তবে চলুন সুখাসন ব্যায়ামটি কিভাবে করতে হয় তাই জেনেন নেই। প্রথমে সামনের দিকে পা প্রসারিত করে ইয়োগা ম্যাটের উপর বসুন। আপনার বাম পা ভাঁজ করুন এবং ডান উরুর ভিতরের দিকে টানুন। একইভাবে আপনার ডান পায়ের সাথেও প্রসেসটি রিপিট করুন। আপনি আরামদায়কভাবে বসে আছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। আপনার মেরুদণ্ড সোজা রাখুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। আপনি যতক্ষণ পারেন এই পোজটি ধরে রাখুন। প্রতিদিন কিছুক্ষণ এই সুখাসন ব্যায়াম আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তথা হাঁপানি রোগের জন্য অনেক ভালো।
এই আসনটি বেশ সাধারন একটি আসন। অনেকেই জানেন যে পবনমুক্তাসন হজমজনিত সমস্যা দূর করার জন্য ভালো। তবে জানেন কি, পেটের অঙ্গগুলোর সাথে কাজ করে হাঁপানি রক্ষা যোগাসন এর মধ্যে এটি অসাধারণভাবে কাজ করে? তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে করবেন এই ব্যায়ামটি! সবার আগে ম্যাটের উপর পিঠ টানটান করে শুয়ে থাকুন। এরপর আপনার পা প্রসারিত করুন। আপনার ডান পা-টি তুলুন, আপনার ডান হাঁটুকে ভাঁজ করে আপনার ডান উরুটি আপনার বুকে কাছে আনুন। কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এবার আপনার বাম পা প্রসারিত করুন এবং আপনার বাম পা দিয়ে একইভাবে বুকের কাছে আনুন। এভাবে দুই হাঁটু ভাঁজ করা অবস্থায় আপনার বুকের কাছে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার পা প্রসারিত করুন।
আপনার যদি শ্বাসকষ্টের কোনও ধরনের সমস্যা হয় তবে প্রাণায়ামের চেয়ে ভালো ইয়োগা আমার মতে হতে পারে না। তবে প্রাণায়াম নিজে না বুঝে করতে যাবেন না! একজন উপযুক্ত প্রশিক্ষকের কাছ থেকে শিখুন। “নাদি শোধান” (বিকল্প নাকের শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল) বা “কপাল ভাটি”, যে কোনও ধরনের প্রাণায়াম আপনাকে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে। এটি পরবর্তীতে হাঁপানি থেকে বাঁচতে অনেকাংশে নিশ্চয়তা দিতে পারে। এখন বেসিক প্রাণায়াম করার নিয়মগুলো বলছি। প্রথমে সুখাসনের মতো আরামদায়কভাবে বসুন। তারপর আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার দুই হাতের তালু দুই হাঁটুতে রাখুন। এবার আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন শ্বাস-প্রশ্বাসে। আপনার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নাকের ডানপাশ চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। আপনার নাকের বাম পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। আপনার ফুসফুস বাতাসের সাথে ভরাট করুন। শ্বাস নেওয়ার পরে, আপনার নাকের বাম পাশে আপনার ডান হাতের কনিষ্ট আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নাকের ডান পাশ ছেড়ে দিন। আপনার নাকের ডান পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। আবার আপনার নাকের বাম পাশের সাথেও একই প্রসেস রিপিট করুন।
এই ব্যায়ামটিকে ‘সিটিং হাফ স্পাইনাল টুইস্ট‘ – ও বলা হয়ে থাকে এবং এটি হাথা ইয়োগার একটি অংশ। অর্ধমৎসেন্দ্রাসন আপনাকে কেবল মেরুদণ্ডের স্নায়ু টানটান করতেই সহায়তা করে না, এটি আপনার ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহও বাড়িয়ে তুলতে পারে। অন্য কথায়, এটি আপনাকে হাঁপানি কমাতে সহায়তা করতে পারে। আসনটি করার জন্য প্রথমে মাদুরের উপরে বসে আপনার পা দুইটি প্রসারিত করুন এবং আপনার মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। আপনার বাম পা এমনভাবে বাঁকা করে আনুন যাতে করে আপনার বাম পায়ের গোড়ালিটি আপনার ডান মাজার পাশে থাকে। এখন আপনার ডান পা বাম হাঁটুর ওপরে নিন এবং এটি বাম হাঁটুর পাশে রাখুন। আপনার কোমরটি ডানদিকে মোড়ান এবং আপনার ডান কাঁধের উপর দিয়ে সোজা তাকান। আপনি আপনার পিছনে ডান হাত রাখতে পারেন এবং আপনি আপনার বাম হাতটি ডান হাঁটুর উপরে রাখতে পারেন। আপনার মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। কয়েক সেকেন্ড আসনটি ধরে রাখুন ও স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। কিছু সেকেন্ড পার করার পর স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসুন এবং আপনার ডান পা দিয়ে একইভাবে বিপরীত দিকে করুন।
এখানে কয়েকটি সহজ আসন দেখানো হয়েছে। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই আসনগুলো কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং উপযুক্ত ইয়োগা প্রশিক্ষকের সাথে সম্পূর্ণ পরামর্শের পরে অনুশীলন করা উচিত। আর নয়তো নিজে নিজে হাঁপানি নিরাময় করতে ইয়োগা করা ঠিক নয়।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম