আধুনিক বরিশালের স্বপ্নদ্রষ্টা শওকত হোসেন হীরনের স্মৃতিচারণ - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
আধুনিক বরিশালের স্বপ্নদ্রষ্টা শওকত হোসেন হীরনের স্মৃতিচারণ - Shera TV
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন

আধুনিক বরিশালের স্বপ্নদ্রষ্টা শওকত হোসেন হীরনের স্মৃতিচারণ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

দিনটি ছিল শুক্রবার দুপুর ১২টা। সবাই হাঁটছিল বিভিন্ন সড়ক ধরে। বেলা একটায় সদর রোড, বাংলাবাজার, জীবনানন্দ দাশ সড়ক, পুলিশ লাইন, বান্দ রোডসহ আশপাশের সব সড়কে মানুষের ঢল নেমেছিল। লক্ষ্য, বঙ্গবন্ধু উদ্যান। না,সেদিন কোনো জনসভা ছিল না। দিনটি ছিল বিষাদের ।বদলে দেওয়া বরিশালের রূপকার শওকত হোসেন হিরনের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢল নেমেছিল মানুষের। মানুষকে ভালোবেসে হিরন যেন হিরণ্ময় জ্যোতি ছড়িয়েছিলেন বরিশাল নগরজুড়ে।

মানুষের জন্য ভালোবাসার প্রতিদান এমন হতে পারে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্ট। যে যেমন পেরেছিলেন সেদিন ছুটে এসেছিলেন। দোকানদার, ব্যবসায়ী, রিকশাশ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতা—সবাই এসেছিলেন প্রিয় মানুষ হিরনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

কেন এই মানুষের ঢল? কেন এই জনসমুদ্র? কী ছিলেন হিরন, কী কাজ করেছেন বরিশাল নগরের জন্য? কিসের প্রতিদান দিতে চৈত্রের রোদ উপেক্ষা করে মানুষের স্রোত বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। মাত্র তো সাড়ে চার বছর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। এর আগে তো অনেকে পৌর চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পর্যন্ত হয়েছেন। এখনো নির্বাচিত আছেন। তাঁদের ত্রুটি কোথায়? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বরিশালের সাধারণ মানুষ।

৯ এপ্রিল ২০১৪, হিরনের মরদেহ তখন বরিশালে পৌঁছেছে। তাঁকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ ছুটছিলেন তাঁর বাসভবনের দিকে। রাস্তায় এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, মেয়রের বাড়ি এদিক থেকেও যাওয়া যায়। হিরন তখন পরলোকগত, মেয়র নন—এই সত্য বরিশালের বাসিন্দারা জানতেন , তবু মানতে পারেন নি। তাই তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য যেকোনো দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মুখে হিরন হয়ে ওঠেন মেয়র হিরন। সেই নামেই পরিচিতি ঘটে তাঁর। এত বছর পরেও বরিশালের ওলি গলিতে কান পাতলে শোনা যায় মেয়র হিরণের কীর্তি গাঁথা।

এখন ও নগরের যেখানেই চোখ যায়, হিরনের কাজের ছাপের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়। বর্তমানে বরিশাল নগরের সবুজ বৃক্ষও অর্ধেকের বেশি হিরনের লাগানো। স্বপ্ন ছিল সবুজের নগর তৈরির। রাস্তায় টিস্যু, থুতু ফেলতে নিষেধ করতেন হিরন। সবাইকে নিজের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ দিতেন। সূর্য ওঠার আগে নগরের আবর্জনা সরিয়ে নিতেন তিনি। ৩০ ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে ময়লা অপসারণের উদ্যোগও তাঁর হাত ধরেই চালু হয়েছিল। নগরে বালুর গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং রাত জেগে তার তদারক সবই হিরনের দেখানো পথ। নগরের সড়ক প্রশস্তকরণ, আলোর নগরে পরিণত করা, ফুটপাত নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, বিনোদনকেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা—সর্বত্র অবদান ছিল হিরনের। তাই তো এত বছর পরেও হিরন সবার কাছে এত প্রিয় ।

হিরন বরিশাল সিটির মসনদে বাসার আগে যাঁরা বরিশালে এসেছেন, তাঁরা দেখেছেন, একটি দুর্গন্ধ জঞ্জালের নগর ছিল বরিশাল। সেই সব জঞ্জাল সরিয়ে বরিশাল নগরকে নান্দনিক সৌন্দর্য দিয়েছিলেন হিরন। দলমত-নির্বিশেষে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টিতে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে নগরে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাসহ দলের নেতা-কর্মীদের বিলবোর্ডে ছেয়ে যায়। দুই দিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরিশালে আসেন জনসভা করার জন্য। শওকত হোসেন হিরন ওই জনসভা সফল করার জন্য দলের সব বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলেন। সেই সব স্থানে মুহূর্তের মধ্যে খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাদের ছবি, বিলবোর্ড স্থান পায়। ওই জনসভা যাতে সফল হয়, সে জন্য আগের দিন বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন। বরিশালের ইতিহাসে কোনো ধরনের হামলা ও সহিংসতা ছাড়া বিএনপির ওই জনসভা সফল হয়। যা আজও বিএনপির অনেক নেতা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বরিশালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস, অন্য দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সব ঘটনা বন্ধ হয়ে যায় হিরন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর। পাশাপাশি অবস্থান করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দল রাজনীতি করেছেন। হামলা-মামলার ঘটনা প্রায় শূন্যে দাঁড়িয়েছিল হিরনের কল্যাণে। যার ফলশ্রুতিতে বরিশাল নগর শান্তির নগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ।

নগরের মানুষদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও হিরন ছিলেন নগরবাসীর প্রাণের মানুষ। জানাজায় যাওয়া এক ব্যবসায়ী সেদিন বলছিলেন, “আজ তো চকে কোনো মানুষ নেই। দোকান বন্ধ করে সবাই এসেছে হিরনের জানাজায়। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে কয়েক যুবক রোদে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, বরিশালে এত খারাপ মানুষ থাকতেও হিরন ভাই চলে গেল? তাহলে বরিশালের কী হবে? কে করবে উন্নয়নকাজ?”

পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন এক বয়স্ক লোক। তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, “আমরা কি অভাগাই থাকব? ৫০ বছরেও বরিশালের কোনো উন্নয়ন হলো না। যে মানুষটা মাত্র কয়েক বছরে নগরের রূপ বদলে দিল, সেই মানুষটা আমাদের মাঝে নেই। এটা কেমন বিচার বিধাতার।“ সেদিন এমন কান্নার শব্দ ছিল বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ পুরো নগরজুড়ে।

শওকত ওসমান হিরণ পরলোকগত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু তার স্মৃতিগুলো আজ এত বছর পরও জীবন্ত। কৃতজ্ঞতা চিত্তে শ্রদ্ধা , সম্মান ও ভালোবাসা জানাই সেরা নিউজের পক্ষ থেকে ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360