লাইফস্টাইল ডেস্ক:
মানসিক অবসাদ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। টেনশন ছাড়া মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার।
অনেকেই শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর দিতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা একেবারেই ভুলে যায়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা করার বিষয় নয়। সারাদিন কাজের চাপে আমরা কমবেশি কাহিল হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময় মেজাজ খারাপ লাগে এবং এর কারণ স্ট্রেস। আমরা শারীরিক মানসিক দু’ভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি।মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক না হলে নানা মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নানা ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং সুস্থ থাকতে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগাসনের মাধ্যমে স্ট্রেসকে দূরে ঠেলে প্রাণোচ্ছল জীবনযাপন সম্ভব। ইয়োগা বা যোগব্যায়াম মানুষের ভেতরের শক্তিকে সুষমভাবে বিকশিত করে সম্পূর্ণ আত্ম-উপলব্ধি উপনীত করতে সাহায্য করে। এই ব্যায়াম শারীরিক কাঠামো নমনীয় বা উন্নত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য, মনযোগ বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তা ও উদ্ব্যেগ কমাতে সাহায্য করে।
একটা সময় যোগব্যায়াম সাধু সন্ন্যাসীদের ব্যায়াম হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন আর যোগব্যায়াম সাধু সন্ন্যাসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন সাধারণ মানুষের আয়ত্তে চলে এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ইয়োগা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। নির্জন একটি স্থানে একাগ্রচিত্তে ইয়োগা করতে হবে। এতে মানসিক দৃঢ়তা ও মনোযোগ বাড়বে এবং দূর হবে মানসিক চাপ।
যোগব্যায়ামে উত্তনাসন হলো এমন একটি তীব্র অগ্রবর্তী প্রসারণ প্রক্রিয়া যা পুরো শরীরের পেছনের পেশী প্রসারণ ও নমনীয় করে গভীরভাবে। উত্তনাসন শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন সক্রিয় করে দ্রুত মস্তিস্কে পৌঁছায়, যে স্থান থেকে রক্ত সরাসরি হৃদপিন্ডে গমন করে। নিয়মিত উত্তনাসন উদ্ব্যেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে শান্ত করে।
১) শুরুতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর হাঁটু সোজা রেখেই উপুড় হয়ে পা পর্যন্ত ঝুঁকে হাতের আঙ্গুল পায়ের আঙ্গুল বরাবর ছুঁতে হবে।
২) এবার এ অবস্থায় হাঁটু মোটেও ভাঁজ করা যাবে না, একবারে সোজা রাখতে হবে এবং মাথাও হাঁটু বরাবর ঝুঁকে রাখতে হবে।
৩) ধীরে ধীরে হাত দু’দিকে যতটুকু পারা যায় মাটিতে অথবা পায়ের গোড়ালি ছুঁয়ে রাখতে হবে। এভাবে ২০ সেকেন্ড থাকতে হবে এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
৫) তারপর ধীরে ধীরে হাত দু’টিকে তুলে কোমরে ছুঁইয়ে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। শুরুতে কম সময় করলেও আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ১ মিনিট পর্যন্ত করতে হবে।
এটা খুবই সহজ একটা আসন কিন্তু এই আসন উদ্ব্যেগ কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শরীর মনকে শিথিল এবং শান্ত করে আর স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। ভিপারিতা করনি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে বিষণ্ণতা ও অনিদ্রা দূর করে।
১) কোন একটা দেয়ালের পাশে সোজা হয়ে শুয়ে পা দু’টোকে দেয়াল ঘেষে উপরের দিকে সোজা করে তুলতে হবে। পিঠ, কোমর ও মাথা থাকবে ফ্লোরে আর পা দু’টো দেয়াল বরাবর সোজা উপরে থাকবে।
২) এ অবস্থায় কোমর আর মাথার নিচে একটা কম্বল অথবা কুশন রাখলে আরাম পাওয়া যাবে।
৩) হাত দু’টোকে শরীরের দুই পাশে সোজা করে ছেড়ে রেখে পা এর আঙ্গুলগুলো টানটান করে রাখতে হবে। এ অবস্থায় ৫ থেকে ১০ মিনিট থাকতে হবে।
৪) লক্ষ্য রাখবেন পা দু’টো কোনোভাবেই ভাঁজ করা যাবে না, দুই পায়ের গোড়ালি একসাথে লাগিয়ে রাখতে হবে এবং মুখমন্ডল সোজা উপরের দিক করে রেখে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে।
এই আসন হলো যোগব্যায়ামের শেষ আসন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শরীরকে শিথিল রাখতে এ আসন চমৎকার কাজ করে।
১) একটা সমতল জায়গায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়তে হবে এবং হাত দু’টোকে শরীরের দুই পাশে শিথিল করে ছেড়ে রাখতে হবে।
২) চোখ দু’টো বন্ধ রাখতে হবে এবং মুখমন্ডল একবারে সোজা রেখে স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে হবে। এভাবে আরাম করে ১০ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। এই হলো সবাসন।
যোগব্যায়াম শুরুর আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার।
১) যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, শ্বাস কষ্টের সমস্যা আছে অথবা আর্থ্রাইটিস আছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
২) এছাড়া যোগব্যায়াম যেহেতু একটু কষ্টসাধ্য ব্যায়াম, কাজেই এ আসন শুরুর আগে ভালোভাবে আসন সম্পর্কে জেনে বুঝে তারপর শুরু করতে হবে।
৩) কোন ভালো প্রশিক্ষকের মাধ্যমে এ বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে শুরু করাটাই ভালো হবে। নয়তো না বুঝে করলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪) কয়েকদিন ব্যায়াম করে ছেড়ে দিলেও কোন ফলাফল পাওয়া যাবেনা। ধৈর্য নিয়ে নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যাবে। মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য দিনে অন্তত একবার যোগব্যায়াম করা প্রয়োজন।
দেখলেন তো, কিভাবে খুব সহজে কিছু যোগাসনের সাহায্যে দূর করতে পারেন মানসিক অবসাদ। নিয়মিত এই আসনগুলো করুন নিজের যত্ন নিন সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত