গোয়ালঘরে বৃদ্ধা মা কে শিকলে বেঁধে রেখেছেন ছেলে - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
গোয়ালঘরে বৃদ্ধা মা কে শিকলে বেঁধে রেখেছেন ছেলে - Shera TV
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

গোয়ালঘরে বৃদ্ধা মা কে শিকলে বেঁধে রেখেছেন ছেলে

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

পরম যত্নে সন্তানদের লালন-পালন করা বৃদ্ধা মায়ের ঠিকানা হয়েছে এখন গোয়ালঘরে। এমনকি মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে কোমড়ে শিকল পরিয়ে বেঁধেও রেখেছেন ছেলেরা। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের চরধুপতি এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ মাস ধরে মা খবিরুন্নেসাকে (৭৫) গোয়ালঘরে বিছনা পেতে গরু বাঁধার রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন তার দুই ছেলে। একদিন রশি খুলে তিনি মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে ফের তাকে ছেলেরা ধরে এনে একই স্থানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। শিকল বাঁধা অবস্থায় প্রায় ৫ মাস তিনি গোয়ালঘরেই জীবন-যাপন করছেন। বয়সের কারণে কানে একটু কম শুনলেও খবিরুন্নেসাকে তারা স্বাভাবিক হিসেবেই জানেন। মূলত জমি-জমা ভাগ হওয়ায় পর ছেলেদের কেউ বৃদ্ধা মায়ের যত্ন নিতে রাজি নন। যে কারণে তাকে অযত্ন অবহেলায় গোয়ালঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। যাতে কোথাও যেতে না পারেন সে কারণে কোমড়ে লোহার শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওই গোয়ালঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেয়া হয়।

প্রতিবেশী হুমায়ুন কবীর জানান, খবিরুন্নেসা দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী। দুই বছর আগে স্বামী আবদুল হামিদ খান মারা যাওয়ার পর তার সহায়-সম্পত্তি ছেলেমেয়েরা ভাগ করে নেন। মা খবিরুন্নেসার ভরণপোষণ নিয়ে ছেলেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বৈঠকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় উভয়ে অর্ধেক ভরণপোষণের ভার বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ছেলেদের কেউই ঠিকমত মায়ের যত্ন নেননি। ছেলেদের অযত্ন অবহেলার শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এছাড়াও রোগে শোকে কাতর খবিরুন্নেসার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে ছেলেরা মাকে গোয়ালঘরে বিছানা পেতে সেখানে ফেলে রেখে মাত্র এক বেলা খাবার দিচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গোয়াল ঘরের বিছানায় শিকলে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা একটি বিছানায় বসে তিনি নাতি-নাতনিদের ডাকছিলেন। শিকলে বাঁধা থাকায় তিনি বিছানা ছেড়ে নামতেও পারছিলেন না। এমনকি মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মশারীরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

এ সময় ছেলেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে খবিরুন্নেসা বলেন, ‘আপনারা কারা বাবা, মোর পোলারা ভালো, হ্যারা মোরো ঠিকমতো খাওন-দাওন দেয়। মোর পোলাগো যেন কোনো সমস্যা না অয় বাবা।’

নানাভাবে জানতে চাইলেও ছেলেদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেননি তিনি। খবিরুন্নেসা বারবারই বলছিলেন, ‘আমার পোলারা আপনাগো দোয়ায় মোরে ঠিকমতো খাওন-দাওন দেয়, হ্যারা অনেক ভালো।’

ছোট ছেলে বাচ্চুকে এ সময় ঘরে পাওয়া যায়। বাচ্চু জানান, তিনি মায়ের ঠিকমতোই ভরণপোষণ দিচ্ছেন। গোয়ালঘরে কেন রাখলেন- জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, ‘মায়ের মাথায় সমস্যা, আমি বাহিরে কাজে ব্যস্ত থাকি। মা কোথায় কখন চলে যায় তাই বেঁধে রেখেছি।’

বড় ছেলে বাদলের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, দামি সব আসবাবপত্র। বাদলকে বাড়িতে না পেলেও তার স্ত্রী বেবির সঙ্গে কথা হয়। বেবি বলেন, শাশুড়ি মানসিক রোগী। সে কারণে তাকে ছেলেরা বেঁধে রেখেছেন।

নির্মম এ ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। এ সময় তাকে পরিধেয় বস্ত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দেয়া হয়।

এ বিষয়ে গৌরিচন্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও তার ভরণপোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে ব্যাপারে ছেলেদের ডেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ওই বৃদ্ধাকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি চরম অমানবিক। এটি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া কিছু না। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে উদ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দিয়ে ছেলেদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360