ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন। ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের তৈরি এ সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে মারধরে অংশ নেয় ছাত্রলীগেরও বেশ কিছু নেতাকর্মী। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় মধুর ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় ছাত্রদলের অন্তত ৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া দুই নেত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। এর আগে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলকে ক্যাম্পাসে পিটানোর হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারানো গোলাম রাব্বানী। এরপরই ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার কথা স্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
হামলার ঠিক আগ মুহুর্তে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত
ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদিকে হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা ঘোষণা
দেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যতই তারা বাঁধার সম্মুখীন হন
তারা পিছ পা হবেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর সোয়া ১২টার
দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ছাত্রদলের
কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো মুক্তিযুদ্ধ
বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন করে তারা। এসময়
তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সংবাদ সম্মেলনে
উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন এবং
ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল সনেট মাহমুদ। যদিও এর আগে বেলা
১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের
ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার কথা জানিয়ে তা থেকে বিভিন্নরকম অপতথ্য প্রচার করা
হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সংবাদ সম্মেলন
শেষে ছাত্রদল নেতারা মধুর ক্যান্টিনের দিকে রওনা দিলে টিএসসিতেই শীর্ষ
নেতাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করে ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এসময় তারা ডিবি
পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান। পরক্ষণেই তাদের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল
মধুর ক্যান্টিনে যান। সেখানে তারা টেবিল চেয়ার না পেয়ে প্রতিবাদস্বরূপ
মেজেতে বসেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অন্যান্য
নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা করে। আতর্কিত হামলায় ছাত্রদলের নেতারা মধুর
ক্যান্টিন ত্যাগ করেন। এসময় তাদের ৯জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক
সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মামুন খান, জিয়া হলের যুগ্ম আহবায়ক শাহজাহান
শাওন, একই হলের তারেক হাসান মামুন, সূর্যসেন হলের সদস্য মাহফুজুর রহমান
চৌধুরী, সাবেক সহ মানবাধিকার সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম রুম্মন, সাবেক সহ নাট্য
বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মাজেদ এবং ওবাইদুল্লাহ নাঈম। এদের মধ্যে মামুন খান
গুরুত্বর আহত হন। এসময় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত কমনরুম ও
ক্যাফেটারিয়া বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী কানেতা-ইয়া-লামলাম এবং শামসুন্নাহার
হলের সহসভাপতি প্রার্থী মানসুরা আলমকে লাঞ্ছিত করা হয়। হামলার প্রতিবাদে
বিকেলে ঢাবির সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখা।
এসময় সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের
বর্বর হামলায় আমাদের ৯জন আহত হয়েছেন। তারা আমাদের দুই নেত্রীকে লাঞ্ছিত
করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাবি মুক্ত ও গণতন্ত্র চর্চার সর্বোচ্চ স্থান।
এখানে ছাত্রলীগ হামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না। এর
আগে যে হামলা হয়েছে তার বিচার দাবিতে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু
প্রশাসন কোন বিচার করেনি। তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এজন্য এমন হামলা
আবার হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবসময় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য
কথা বলছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও আমরা এই দাবি জানাচ্ছি। আমরা যখনই
সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে
হামলার শিকার হয়েছি। তারা প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের আতুরঘর
বানিয়েছে।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে দাবি শ্যামলের
এর
আগে বেলা ১১টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া এবং তা থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হওয়ার
প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। এসময় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, আমি এবং আমার সভাপতির বর্তমানে কোন ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট নেই। হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘৭৫ এর বিচার বহির্ভূত
হত্যাকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
শেয়ার হচ্ছে। যা দল ছাত্রদল সমর্থন করেনা।