মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহের মধ্যে কিডনি অন্যতম, যা মানুষের দেহের ছাকন যন্ত্র সরুপ। দীর্ঘ মেয়াদী কিডনি রোগ সারা বিশ্বে এক জটিল সমস্যা। কিডনি সমস্যায় মৃত্যু বরনের সংখ্যাও আতঙ্কজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে একটু সচেতনতাই হতে পারে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়।
কিডনি সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলে :
পাকা লাল মরিচঃ
আধাকাপ লাল মরিচে একগ্রাম লবণ ৮৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ১০ গ্রাম ফসফরাস আছে। এই মরিচে পটাসিয়াম সামান্য কিন্তু এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি- ৬ ছাড়াও ফলিক এসিড আছে যা শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এছাড়া এতে লাইকোপেন নামক একধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। কিডনি রোগীর খাবারে লাল মরিচ রাখলে এবং নিয়মিত খেলে কিডনির সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়। এটা তরকারীর সাথে খাওয়া যেতে পারে অথবা সামান্য সিদ্ধ করে ভর্তা করেও খাওয়া যাবে। ডিম মামলেটের মধ্যে দেয়া যাবে। মোটকথা কাঁচা মরিচের বদলে পাকা লালমরিচ খেলে কিডনী ভাল থাকবে।
বাঁধাকপি এবং ফুলকপিঃ
যদিও বাঁধাকপি এবং ফুলকপি শীতকালীন ক্রুসিফেরাস গ্র“পের সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোক্যামিক্যাল যা দেহের সৃষ্ট ফ্রি র্যাডিক্যাল শরীরের কোনো ক্ষতি করার পূর্বেই ধ্বংস করে ফেলে এবং কয়েক রকম ফ্রি র্যাডিক্যাল আছে যা ক্যান্সার কোষগুলিকে নিস্ক্রিয় করতে পারে। এছাড়া এই সবজিতে ভিটামিন কে, সি, বি-৬ এবং ফলিক এসিড আছে। পটাসিয়ামের পরিমাণ সামান্য আছে বলেই এটা কিডনির খাবারের মেনুতে রাখা যায়।
রসুনঃ
এক কোয়া রসুনে এক মিলিগ্রাম লবণ, ১২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস আছে। নিয়মিত রসুন খেলে দাঁতের গোড়ায় পাথর হয় না এবং রক্তে কোলোস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটা ডায়ালসিস রোগীর খাবারের মেনুতে রাখা যায়।
পেঁয়াজঃ
আধাকাপ পেঁয়াজে ৩ মিলিগ্রাম লবণ, ১১৬ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস আছে। এতে কয়েক রকম ফাইটোক্যামিক্যাল আছে যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, এর মধ্যে ক্রোমিয়াম নামক মিনারেল আছে যার ফলে শ্বেতসার, চর্বি এবং আমিষ জাতীয় খাদ্যদ্রব্য হজম হতে সাহায্য করে। কিডনির রোগীদের খাদ্য তালিকায় নানা রঙের পেঁয়াজ ব্যবহার করা যায়।
আপেলঃ
মাঝারি ধরনের আপেলে লবণ নাই শুধু ১৫৮ মিলি পটাসিয়াম এবং ১০ মিলি ফসফরাস আছে। প্রবাদ আছে প্রতিদিন একটা আপেল খেলে ডাক্তারকে দূরে রাখা যায়। এই প্রবাদকে মনে রেখে প্রতিদিন একটা আপেল খাওয়া উচিত। এটা রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে, হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এছাড়া যে-কোনো ধরনের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়া আপেল খেতে পারে। বিশেষ করে আপেল থেকে তৈরি ভিনেগার (Apple Seeder Vinegar) কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।
করমচা :
আধাকাপ করমচার জুসে আছে ৩ মিলিগ্রাম লবণ, ২২ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস আধাকাপ শুকনা করমচায় আছে ২ মিলিগ্রাম লবণ, ২৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস। উগ্র ঝাজযুক্ত টকজাতীয় ফল, করমচা খেলে মুত্রথলিতে কোনোরকমের ক্ষত বা ইনফেকশন হতে দেয় না এবং ক্ষতিকর রোগ জীবাণু থেকে মুত্রনালীকে রক্ষা করে। এছাড়া পাকস্থলিকেও জীবাণুগঠিত ক্ষত হতে রক্ষা করে। করমচার বিরল গুণের মধ্যে প্রধান, এটা দেহকে ক্যান্সার এবং হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ ঋতুর ফল হিসাবে করমচা কিডনি রোগের পথ্য হিসাবে একটি উৎকৃষ্ট ফল।
কালোজামঃ
আধাকাপ জামে আছে ৪ মিলিগ্রাম লবণ, ৬৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস। কালোজাম একটি উচ্চমানসম্মত এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোক্যামিক্যাল সমৃদ্ধ ফল। এতে ভিটামিন এবং ম্যাঙ্গানিজ আছে। হাঁড়ের স্বাস্থ ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দেহের জন্য উপযুক্ত ক্যামিক্যাল আছে যা মস্তিষ্ককে নানাভাবে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য রোধ করে। নানাভাবে খাওয়া গেলেও কালোজামের জুস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি যে-কোনো বয়সের লোকের জন্য খাওয়ার উপযোগী।
লাল আঙ্গুরঃ
আধাকাপ লাল আঙ্গুরে আছে ১ মিলিগ্রাম লবণ, ৮৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস। লাল আঙ্গুরে ফ্লাডোলয়েড নামক একধরনের ক্যামিক্যাল আছে যার কারণে এটাকে লাল দেখা যায়। ফ্লাডোলয়েড হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে এবং দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ফলে রক্ত চলাচলের গতিকে স্বাভাবিক পর্যায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধ করার বিরল গুণের অধিকারী এই লাল আঙ্গুর। নিয়মিত এই লাল আঙ্গুর গ্রহণ করলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কিডনি রোগগ্রস্থ হলে একে সারিয়ে তোলে।
ডিমের সাদা অংশঃ
২টি ডিমের সাদা অংশে আছে ৭ মিলিগ্রাম আমিষ, ১১০ মিলিগ্রাম লবণ, ১০৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস। ডিমের সাদা অংশ একটি নির্ভেজাল খাঁটি আমিষ যার মধ্যে প্রায় সবগুলি জরুরি এমাইনো এসিড বিদ্যমান। শরীরে ৮ প্রকার জরুরি এমাইনো এসিডের প্রয়োজন হয়। কিডনি রোগীদের জন্য ডিমের সাদা অংশ আমিষের প্রয়োজন মেটাতে পারে যেটা মাছ ও মাংস হতে উৎকৃষ্ট। এক্ষেত্রে কোয়েল পাখির পরিপূর্ণ সিদ্ধ ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার সর্বত্তম।