সেরা ডেস্ক:
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিখ্যাত গোলাপি হ্রদ। এই লেক হিলিয়ার রয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মিডল আইল্যান্ডে। তবে নীল হোক বা গোলাপি, লেক হিলিয়ারের পানিতে গা ভাসাতে অনেকেরই উৎসাহের শেষ নেই।
এই হ্রদের পানিতে লবণের পরিমাণ এতটাই বেশি যে ডেড সি’র মতো এখানেও দিব্যি গা ভাসিয়ে থাকা যায়, ডোবার কোন আশঙ্কা নেই। তা হলে এখানে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় না কেন? আসলে এক্কেবারে ছোট্ট এই দ্বীপে পৌঁছনো খুব একটা সহজ নয়। বোট বা হেলিকপ্টারে যাওয়া গেলেও দ্বীপটি বেশি দুর্গম। হিলিয়ার লেকের পানি গোলাপি রঙের কেন? এ নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। দীর্ঘ দিন ধরে বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজে চলেছেন। অনেকেই ভাবতেন, লেক হিলিয়ারে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়াতেই তার পানির রং নীল নয়। অনেকের আবার মত ছিল, ওই লেকে মাইক্রোঅ্যালগি বেশি থাকাতেই তার রং গোলাপি। তবে সম্প্রতি সে রহস্য ভেদ হয়েছে।
২০১৫ সালে মিডল আইল্যান্ডের লেক হিলিয়ারের পানির রং নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এক্সট্রিম মাইক্রোবায়োমি প্রজেক্ট (এক্সএমপি)-এর এক দল বিজ্ঞানী। সে হ্রদের পানি কেন গাঢ় গোলাপি, তার সন্ধান শুরু করেন তারা।
এক্সএমপি’র বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, লেক হিলিয়ারের আশপাশের লবণাক্ত পরিবেশে বেশ কিছু এক্সট্রিমোফিল থাকার জন্য হয়তো তার পানির এ রকম রং। এক্সট্রিমোফিল হল তীব্র প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারা কিছু আণুবিক্ষনিক জীব।
মিডল আইল্যান্ডে গিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমেই লেক হিলিয়ারের পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। এর পর এক্সট্রিমোফিলগুলোর ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন তারা। পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা দেখেন, লেক হিলিয়ারের পানিতে রয়েছে দশ ধরনের ব্যাকটিরিয়া, যারা লবণাক্ত পরিবেশে থাকতে ভালবাসে। তা ছাড়াও এখানে রয়েছে, বিভিন্ন প্রজাতির ডানালিয়েলা অ্যালগি বা শ্যাওলা। যার বেশির ভাগের রংই সবুজের পরিবর্তে গোলাপি বা লাল রঙের।
এ ধরনের শ্যাওলার রঙের জন্যই কি লেক হিলিয়ারের পানির রং গোলাপি? না! এর থেকে অবাক করে দেওয়া তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ওই নমুনায় যে সব ব্যাকটিরিয়া মিলেছে, তার মধ্যে ছিল এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটিরিয়াও। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লেক হিলিয়ারের পানির যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা, তার ৩৩ শতাংশ জুড়ে ছিল স্যালিনিব্যাকটের রাবার নামের এক বিশেষ ব্যাকটিরিয়া।
এক্সএমপি-র বিজ্ঞানীদের দাবি, কোন শ্যাওলা নয়, বরং লেক হিলিয়ারের গোলাপি রঙের পানির পিছনে রয়েছে স্যালিনিব্যাকটের রাবার নামের ওই বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার হাত।
সেরা নিউজ/আকিব