বিশ্বের একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’ ৯ বছরের অলিভিয়া - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
বিশ্বের একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’ ৯ বছরের অলিভিয়া - Shera TV
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

বিশ্বের একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’ ৯ বছরের অলিভিয়া

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯

ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের কাছে হাডারফিল্ড নামে একটা শহর আছে। সেখানে বাস করে ফার্নসওয়ার্থ পরিবার। গৃহকর্তা রিড, তার স্ত্রী নিকি ও তাদের পাচ ছেলেমেয়ে নিয়ে গড়া সাধারণ মধ্যবিত্ত একটি ব্রিটিশ পরিবার। কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ চিকিৎসক আজ এই পরিবারটিকে চেনেন। এর কারণ হল তাদের দ্বিতীয় মেয়ে অলিভিয়া।

৯ বছর বয়সী অলিভিয়া পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। অলিভিয়ার এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে যা পৃথিবীতে কারও নেই। যা ওই একরত্তি মেয়েটিকে করে তুলেছে অতিমানব। ছোট্ট অলিভিয়া দিনের পর দিন, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে থাকতে পারে এবং যত বড় আঘাতই পাক না কেন অলিভিয়ার যন্ত্রণা লাগে না। ৯ বছরের জীবনে একদিনও কাঁদেনি এই মেয়ে।সারা দিন-রাত জাগে অলিভিয়া
৯ বছর আগে ফার্নসওয়ার্থ পরিবারে এসেছিল ফুটফুটে অলিভিয়া। কয়েক মাসের মধ্যে বাবা মা মেয়ের কাণ্ড দেখে আতঙ্কিত হয়ে মেয়েকে কোলে করে ছুটেছিলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বলছিলেন, এ মেয়ে ক্ষুধা পেলে কাঁদে না, দিনে রাতে একদম ঘুমোয় না। ডাক্তার হেসে দম্পতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন, বলেছিলেন এটা স্বাভাবিক, আপনারা বেশি খাইয়ে দিচ্ছেন তাই ক্ষুধায় কাঁদছে না। আর ঘুমটা নিয়ে সব বাবা মা’র চিন্তা, ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। কিছুদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে।

ধীরে ধীরে বড় হয়েছে অলিভিয়া, মা বাবা ক্ষুধার জ্বালায় মেয়ে কাঁদে না দেখে নির্দিষ্ট সময় অন্তর জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। অনেক চেষ্টার পর মেয়ে যদিও বা সামান্য কিছু খেত, কিন্তু ঘুমোতেই চাইতো না। সারাক্ষণ তাকে নিয়ে খেলতে হত। দিনে বা রাতেও ঘুমাতে দিত না মেয়ে। অলিভিয়ার ভাইবোনেরা যখন ঘুমে বিভোর অলিভিয়া ছোট্ট পায় টলতে টলতে সারা বাড়ি জুড়ে সারা রাত ধরে ঘোরাঘুরি করত। বাধ্য হয়ে বাবা-মা রাতে শিশু অলিভিয়াকে একটি খালি ঘরে খেলনা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। তাদেরও তো ঘুমোতে হবে। না ঘুমিয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন।

ডাক্তার বললেন এক জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার অলিভিয়া
কিন্তু এক বছরের মধ্যেও অলিভিয়ার এই সব অভ্যাসের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই অন্য এক ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। সব শুনে সেই ডাক্তার অলিভিয়াকে পাঠিয়েছিলেন একটি ল্যাবরেটরিতে। সেখানে অলিভিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল। রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। রিপোর্ট দেখে ডাক্তারের মুখ গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর ফোন করেছিলেন বিভিন্ন জায়গায়। রিপোর্টটি পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

কয়েকদিন পর অলিভিয়ার বাবা মাকে ডাক্তার বলেছিলেন, আসলে অলিভিয়া chromosome 6p deletion নামের একটি জটিল গঠনগত ত্রুটির শিকার। তাই অলিভিয়ার ক্ষুধা ও ঘুম পায় না। অলিভিয়ার বাবা মাকে ডাক্তার বলেছিলেন, এ রোগের কোনও ওষুধ নেই। অলিভিয়াকে বাঁচাতে গেলে তাকে সময়ে সময়ে খাইয়ে দিতে হবে, কিন্তু ঘুমের জন্য কিছু করতে পারব না। কারণ এইটুকু মেয়েকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া যাবে না। না ঘুমিয়েও সুস্থ আছে যখন সেটাই থাকতে দিন।

কী এই chromosome 6p deletion!  
মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ভ্রুণের কোষগুলো বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে, ফলে গর্ভস্থ সন্তানের দেহে কোষের সংখ্যা দ্রুত ও ক্রমাগত বাড়তে। কিন্তু অলিভিয়া যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠছিল, তার কোষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল, কিন্তু বিভাজনের ত্রুটির জন্য অলিভিয়ার দেহের কোষগুলোতে 6p ক্রোমোজোম উপাদানটি ছিল না। স্বাভাবিক ভাবেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল অলিভিয়া, কিন্তু কোষের ত্রুটি স্থায়ীভাবেই থেকে গিয়েছিল অলিভিয়ার দেহে। অলিভিয়ার দেহ থেকে 6p ক্রোমোজোম মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অলিভিয়ার খিদে ও ঘুম পাওয়ার অনুভুতিও তার জীবন থেকে মুছে গিয়েছিল।

অপমান করলে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয় অলিভিয়া 
ডাক্তারের কথা মতো অলিভিয়ার বাবা মা মেয়েকে বড় করতে থাকেন। স্কুলে ভর্তি হয় অলিভিয়া। সারাদিন সারারাত জেগেও স্কুলে সে মেধাবী ছাত্রী। টার্মে অলিভিয়ার নাম্বার সবচেয়ে বেশি। খেলাধুলাতেও সে স্কুলে পিছিয়ে থাকে না। তবে আপাতশান্ত ও হাসিখুশি অলিভিয়ার একটাই দোষ, কেউ তাকে অপমান করলে সে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তখন অলিভিয়া আক্রোশবশত কোনও জিনিস দিয়ে আঘাত করে সেই মানুষটিকে বা নিজের মাথা দেওয়ালে ঠোকে।

সাইকোলজিসট, সাইক্রিয়াটিস্ট কিছুই বাদ দেননি অলিভিয়ার বাবা মা, কিন্তু তারা বলেছিলেন তাদের কিছু করার নেই, এসব হচ্ছে অলিভিয়ার ক্রোমোজোমের গঠনগত সমস্যার উপসর্গ। ওষুধ দেওয়া যাবে না কারণ অলিভিয়া ওইটুকু সময় বাদ দিলে বাকি সময় সম্পুর্ণ সুস্থ ও হাসিখুশি থাকে।

ধরা পড়েছিল অলিভিয়ার আর এক অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট
রোজ বিকেলে বাড়ির সামনের পার্কে তার ভাইবোনদের সঙ্গে খেলা করতে যেত অলিভিয়া। একদিন অলিভিয়া একা গিয়েছিল পার্কে। পার্ক থেকে ফেরার পর অলিভিয়াকে দেখে আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন মা নিকি। অলিভিয়ার নীচের ঠোঁটের অর্ধেকটা কেটে ঝুলছিল। জামা রক্তে ভেজা, কিন্তু অলিভিয়ার মুখে হাসি। আতঙ্কিত মায়ের পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকে জুতো খুলতে শুরু করেছিল অলিভিয়া। মুখে একটুও ব্যথার অভিব্যক্তি ছিল না।

হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছিল অলিভিয়াকে, প্রথমে স্টিচ ও পরে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। পুরো সময়টিতে একটু কাঁদেনি অলিভিয়া। হাসিমুখে  ইঞ্জেকশনের পর ইঞ্জেকশন নিয়েছিল। ডাক্তাররা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ‘ইস্পাত’ কঠিন মানসিকতার মেয়েটিকে দেখে। তারপরে অসংখ্যবার আঘাত পেয়েছে অলিভিয়া, কিন্তু তার মুখ থেকে একবার ‘আহ” শব্দটিও বেরোয়নি। 

এরপর ২০১৬ সালে, অলিভিয়া তখন ৭ বছরের মেয়ে। মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই মায়ের হাত ধরবে না। ফলে না দেখে রাস্তা পার হতে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল অলিভিয়া। অলিভিয়ার ছোট্ট শরীরটাকে ধাক্কা মারার পর ঠেলতে ঠেলতে ১০০ ফুট দূরে নিয়ে গিয়েছিল একটি গাড়ি।

পথচলতি মানুষজন চিৎকার করে উঠেছিল। মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে ছুটে গিয়েছিলেন অলিভিয়ার মা। তিনি ও বাকি সবাই নিশ্চিত ছিলেন যে অলিভিয়া আর বেঁচে নেই। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে অলিভিয়া উঠে দাঁড়িয়েছিল ও মায়ের কাছে ফিরে এসেছিল। অলিভিয়ার মুখে ভয় বা আতঙ্কের লেশমাত্র ছিল না। অলিভিয়ার মুখের অভিব্যক্তি দেখে তার মায়ের মনে হচ্ছিল সে মাকে বলতে চাইছিল, কী হয়েছে এত চিন্তার কী আছে?

ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে কয়েকটি আঁচড়ের দাগ ছাড়া আর কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুরো শরীর স্ক্যান করেও ভেতরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ডাক্তাররা আগেই জানতেন অলিভিয়ার খিদে আর ঘুম পায় না, তারা এবার নিশ্চিত হলেন কোনও অবস্থাতেই অলিভিয়া যন্ত্রণাও অনুভব করে না।

অলিভিয়া  পৃথিবীর একমাত্র ‘সুপার হিউম্যান’
এই দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারদের সঙ্গে অলিভিয়ার ডাক্তারদের ফোন এবং ই-মেল চালাচালি এবং পৃথিবীব্যাপী সার্ভে রিপোর্টের আদানপ্রদান শুরু হয়েছিল। কিছুদিন পরে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অলিভিয়াকে পৃথিবীর প্রথম ‘বায়োনিক চাইল্ড” ঘোষণা করেছিলেন। এর অর্থ, অলিভিয়া অস্বাভাবিক সহ্যক্ষমতাযুক্ত একটি শরীর ও মন নিয়ে জন্মেছে, এই পৃথিবীতে অলিভিয়ার মত  সহ্যশক্তি কারও নেই।

সে কয়েকমাস না ঘুমিয়ে, কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে, আর অলিভিয়ার শরীর যেকোনও আঘাত ও যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে ঠিক রোবটের মতো। এই তিনটি বৈশিষ্ট সম্মিলিতভাবে বিশ্বে আর কোনও মানুষের দেহে কখনও দেখা যায়নি। সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে আজ অবধি ১০০ জনকে পাওয়া গেছে যাদের 6p ক্রোমোজোম ডিসঅর্ডার আছে। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে অলিভিয়াই প্রথম মানুষ যার শরীরে No pain, No sleep, No hunger এই তিনটি উপসর্গই আছে। ভাবলেই অবাক লাগে শারীরিক ত্রুটি আজ লৌহমানবী অলিভিয়াকে বিশ্বখ্যাত করে তুলেছে। করে তুলেছে বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম সুপার হিউম্যান। সূত্র : দ্য ওয়াল।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360