আজ থেকে সাড়া দেশে চালু হচ্ছে নতুন সড়ক আইন। এ আইনের অধীনে বেশ কিছু ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। যা মেনে চলা আর কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলা বাঞ্চনিয়। নতুন সড়ক আইনের উল্লেখ যোগ্য কিছু দিক হল
চালকের লাইসেন্সে গুরুত্বারোপ
কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পুরোনো আইনে এ অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ সাজা চার মাসের কারাদণ্ড, বা ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
দেশে যানবাহন আছে প্রায় ৪০ লাখ। চালক আছেন ২৩ থেকে ২৪ লাখ। বাকি ১৬ থেকে ১৭ লাখ যানবাহনের চালকের লাইসেন্স নেই অথবা ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে চালান। নতুন আইনে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের শাস্তি কমপক্ষে এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আইনে প্রত্যেক চালকের জন্য ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নানা অপরাধে পয়েন্ট কাটা গিয়ে শূন্য হয়ে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
যাত্রীবাহী বাসের কন্ডাক্টরদের (ভাড়া আদায়কারী) লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
যানবাহনের মালিকের দণ্ড
যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নিবন্ধন সনদ না নিয়ে রাস্তায় যানবাহন নামালে এর মালিককে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। ভুয়া নম্বরপ্লেট দিয়ে যানবাহন চালালে সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
দেশে এখনো প্রায় পাঁচ লাখ যানবাহন ফিটনেস সনদ ছাড়া চলছে। নতুন আইনে ফিটনেসবিহীন যান চালানোর দায়ে সর্বোচ্চ জরিমানা ২৫ হাজার টাকা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড। অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পুরোনো আইনে এসব অপরাধের শাস্তি ছিল তিন মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
রুট পারমিট (চলাচলের অনুমতি) না থাকলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে ট্যাক্স-টোকেন হালনাগাদ না থাকলে কারাদণ্ড নেই। জরিমানা ১০ হাজার টাকা। পুরোনো আইনে এসব অপরাধের শাস্তি খুব সামান্য ছিল।
ভাড়ার তালিকা নিয়ে অবহেলা নয়
গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় নৈমিত্তিক ব্যাপার। ভাড়ার তালিকা না থাকলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা এক মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে এটি চালকের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাঁর এক পয়েন্ট কাটা যাবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবে ভাড়ার মিটার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তবে এসব যানের প্রায় কোনোটারই মিটার সচল নেই। থাকলেও মিটার মেনে যাত্রী বহন করে না। আগের আইনে এর জন্য কোনো শাস্তির বিধান ছিল না। এখন মিটার বিকল থাকলে এবং যেকোনো গন্তব্যে যাত্রী পরিবহনে অস্বীকৃতি জানালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা আছে।
সংকেত না মানলে, নিষিদ্ধ হর্ন বাজালে…
যানবাহনচালককে যেমন সংকেত মেনে চলতে হবে, তেমনি পথচারীকে সড়ক-মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, পদচারী-সেতু, পাতালপথসহ নির্ধারিত স্থান দিয়ে পার হতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে চালক ও পথচারীকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে পড়তে হবে।
যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর অপরাধে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে এ অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সরকার নির্ধারিত স্থানের বাইরে গাড়ি পার্কিং করলে বা যাত্রী-মালামাল ওঠানামার দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার সুযোগ আছে।
পরিবহনে চাঁদা
দেশের পরিবহন খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি আগের আইনে উপেক্ষিত ছিল। এবার ফৌজদারি আইনের ১৭ ধারায় শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় চাঁদাবাজির দায়ে সর্বোচ্চ তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন আইন সঠিকভাবে কার্যকর হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কারণ, আগের আইনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার জরিমানা কেউ আমলে নিত না। ফিটনেসবিহীন যান চালিয়ে যে ২০ হাজার টাকা আয় করল, তার কাছে মাঝেমধ্যে ২০০ টাকার জরিমানা কিছুই না। তিনি বলেন, আইনটি কার্যকরের আগে পর্যাপ্ত প্রচারণা চালানো হয়নি। এটি একটি দুর্বলতা।