বাংলাদেশের শ্রাবন্তী অস্ট্রেলিয়াতে ছড়াচ্ছেন শিক্ষার আলো - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
বাংলাদেশের শ্রাবন্তী অস্ট্রেলিয়াতে ছড়াচ্ছেন শিক্ষার আলো - Shera TV
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের শ্রাবন্তী অস্ট্রেলিয়াতে ছড়াচ্ছেন শিক্ষার আলো

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারীদের শতকরা ত্রিশ জনেরই জন্ম অন্য কোন দেশে। সারা পৃথিবী থেকেই অভিবাসীরা এখানে আসেন। যে কোন নতুন দেশের মতোই অভিবাসীদের জীবন শুরু হয় অনেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে। নতুন দেশে ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন পরিবেশে জীবনযুদ্ধে নামতে হয়। নিজের ক্যারিয়ার ও প্রফেশনের সাথে অনেকটা কম্প্রমাইজ করেই টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হয়।

এতো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই অভিবাসীরা দেশটির অর্থনীতি ও সমাজ গঠনে অবদান রেখে যাচ্ছে। এর মাঝে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী-প্রবাসীরাও পিছিয়ে নেই। দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে আসা মেয়েদের সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা ছেলেদের থেকে কিছুটা বেশিই করতে হয়। তবুও প্রবাসের প্রতিযোগিতাময় আন্তর্জাতিক এক ক্ষেত্রে এসে অনেকেই বিপুল সফলতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠেন।

তাদেরই একজন শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন সদস্য। সিডনির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তিনি। এখানে পৃথিবীর প্রায় ৩৫টি দেশ থেকে আসা এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছে।

kazi-2

জানা যায়, ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন কুইন্সল্যান্ড ও ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের সাথে আর্টিকুলেশনের মাধ্যমে এখানে ১৫টি বিভাগে সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষা দেওয়া হয়। এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিতে পারে। এছাড়া স্কিলড মাইগ্রেশনের আওতায় পয়েন্টভিত্তিক মাইগ্রেশনের আবেদনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন অ্যান্ড কেয়ার কোর্সে পড়া শেষ করে করে নব্বই শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চমানের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে।

এ ধরনের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি বাংলাদেশি এ নারী সিডনিতে নিজস্ব কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ও চাইল্ড কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করেন। তার পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে একশ’রও বেশি মানুষ বর্তমানে নানা পর্যায়ে কাজ করছেন।

শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী জানান, তিনি ২০১০ সালে স্বামীর সাথে মাইগ্রেশন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। তখন তার সন্তানের বয়স তিন বছর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। সেখানে গিয়ে ডিপ্লোমা অব আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন কোর্সে ভর্তি হন। সব কাজ সামলে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। পরিবারের সব কাজের মাঝেও দুপুরে ক্লাস করতেন। অন্য সময়ে বাড়তি কাজ করে সামাল দিতেন।

kazi-2

প্রবাস জীবনে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন নতুন নতুন বিষয় শেখার কাজে। পড়াশোনার পাশাপাশি ড্রাইভিং শিখতে থাকেন। এক বছর পর সাফল্যের সাথে কোর্স শেষে এপ্রেন্টিস হিসেবে একটি চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে কাজ শুরু করেন। এসময় তার দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসে। এমন কঠিন সময়ে কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিলেও পেশাগত উন্নতি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা সংক্রান্ত বেশকিছু কোর্স করতে থাকেন।

দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর বাচ্চাদের দেখাশোনা, স্বামীর কর্মব্যস্ততা সবকিছু মিলে সংসারের ব্যস্ততা বেড়ে গেলে অন্য কোথাও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করে এসময় বাসাতেই শুরু করেন ফ্যামিলি ডে কেয়ার সার্ভিস। এতে নিজের বাচ্চাদের সাথে অন্য বাচ্চদেরও দেখাশোনার কাজ করতেন সমানভাবে।

kazi-2

সে সময় অনেকেই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করতো। মাস্টার্স পাস করে এ ধরনের কাজ করাকে ছোট করে দেখতো। কিন্তু সবকিছুকে উপেক্ষা করে তার স্বামী তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ফলে খুব অল্প সময়ের মাঝেই শ্রাবন্তীর ফ্যামিলি ডে কেয়ারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। একসময় তার প্রতিষ্ঠানে বাচ্চা রাখার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ২০১৩ সালে তিনি স্থানীয় কাউন্সিল থেকে ‘এডুকেটর অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি কাউন্সিলের আমন্ত্রণে অন্যান্য এডুকেটরদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে থাকেন। এসময় অনেক মেয়ে তার কাছে আসতে থাকে পেশাগতভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ নিতে। তার সহযোগিতা, পরামর্শ ও উৎসাহে এলাকার অনেক নারীই বাড়িতে ফ্যামিলি ডে কেয়ার গড়ে তোলেন।

এতকিছুর পাশাপাশি শ্রাবন্তী পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মানসম্পন্ন সরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেইফ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন। তাই ২০১৬ সালে নিজের জমানো টাকা এবং স্বামীর সহযোগিতায় সিডনিতে আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন অ্যান্ড কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেন। প্রথমে শুরু করেন ছোট একটি ক্যাম্পাস দিয়ে।

kazi-2

২০ জন নিয়ে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানে আজ ৩৫টি দেশ থেকে আসা হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। কাজ করছেন অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা। ছোট্ট ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে আজ সিডনির তিন প্রান্তে তিনটি সমৃদ্ধ এবং অত্যাধুনিক ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এর শিক্ষাদান ছড়িয়ে পড়েছে আইটি, বিজনেসসহ মোট ১৫টি কোর্সে। প্রতিটি টার্মে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।

শ্রাবন্তী কাজী বলেন, ‘সেসময় আমার প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী ছিল মোট বিশ জন। আমি পড়াতাম, আবার আমি নিজেই রিসেপশনের কাজগুলো করতাম। এমনকি ছোট্ট ক্যাম্পাসটি ক্লিনিংয়ের কাজও আমি করতাম। কিন্তু ধৈর্য হারাইনি। সবসময় আমার স্বামী সহযোগিতা করেছেন। ফলে আমি ভালো একটি টিম তৈরি করি। যারা আমার স্বপ্নকে বুঝতে পারে। সেই থেকে আজকের এই বিপুল প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু।’

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360