মসজিদ ভেঙে হবে মন্দির, রায় মেনে নিলেন মুসলিম নেতারা - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
মসজিদ ভেঙে হবে মন্দির, রায় মেনে নিলেন মুসলিম নেতারা - Shera TV
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

মসজিদ ভেঙে হবে মন্দির, রায় মেনে নিলেন মুসলিম নেতারা

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের বহুল আলোচিত উত্তরপ্রদেশের বাবরি মসজিদ ভূমি মালিকানার রায় ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশটির প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির।

রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অযোদ্ধার বিতর্কিত রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মিত হবে; বিকল্প হিসেবে বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি অন্যত্র প্রদান করা হবে।

রায় পড়ার সময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়। কাঠামো থেকে কোনো কিছুর মালিকানা দাবি করা যায় না। কারও বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার হরণ না হয়।

তিনি বলেন, ভারতের প্রত্মতাত্ত্বিক সংস্থা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, সেগুলো ইসলামিক নয়। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে কয়েক দশকের পুরোনো এই মামলায় রায় পড়ে শোনান বিচারপতি গগৈ। এ সময় তিনি বলেন, যে রায় ঘোষণা করা হলো; তা বিচারক বেঞ্চের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।

অযোদ্ধার বিতর্কিত এই ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুরা অযোদ্ধায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।

হিন্দুরা মনে করেন, তাদের দেবতা রামের জন্মভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন, বাবরি মসজিদের স্থানে রামের জন্মের কোনো আলামত নেই। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লির পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রধান ও পি সিং ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের প্রধান বার্তা হচ্ছে যেকোনো উপায়ে শান্তি রক্ষা করা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯২ সালে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়; তখন বিজেপির বর্তমানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা পৃথকভাবে সেই ধ্বংসযজ্ঞে ভূমিকা রেখেছিলেন।

২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।

উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বিজেপির নেতা ও মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।


শনিবার (৯ নভেম্বর) আদালতের রায়ের পর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় তারা নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরেন।

রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থা তুলে ধরেন শাহী ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি। তিনি বলেন, আমরা আদালতের রায় মেনে নিচ্ছি। দীর্ঘ সময় চলমান হিন্দু-মুসলিম ইস্যুটি এ রায়ের মাধ্যমে সমাপ্ত হওয়া উচিৎ।

রায়ের রিভিউ আবেদন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ বুখারি বলেন, বিষয়টি আর প্রলম্বিত করা উচিৎ হবে না।

তিনি বলেন, ভারতীয় মুসলিমরা এ দেশে শান্তি চায়। আদালতের রায়ের আগেই সব মুসলিমই বলেছে, কোর্ট যে রায় দেবে তা আমরা মেনে নেব।

এদিকে, এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। তবে তারা এ রায়ে ‘সন্তুষ্ট’ নয় বলে মন্তব্য করেছে।

রায় প্রকাশের পর ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরাইব জিলানি বলেন, ‘আমরা রায়কে সম্মান জানাই। কিন্তু, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করব।’


তবে রায় নিয়ে মুসলিমরা কোনো বিক্ষোভ বা প্রতিবাদের পথে যাবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।

রায় নিয়ে আজমির শরীফের দেওয়ান সৈয়দ জয়নুল আবেদিন বলেছেন, ‘এই রায়ে কারও জয় হয়নি, কারও পরাজয়ও হয়নি। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেওয়া উচিত। দেশের স্বার্থে আমাদের এখনই এই বিতর্কের ইতি টানা উচিত।’

এর আগে শনিবার বহুল প্রতীক্ষিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করেন দেশটির সর্ব্বোচ্চ আদালত। রায়ে মসজিদের ‘বিতর্কিত’ ওই জমি সরকার পরিচালিত একটি ট্রাস্টকে দেয়া হবে। তারা সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করবে। 

তবে অযোধ্যাতেই অন্যত্র একটি মসজিদ গড়ার জন্যও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘রামলালা বিরাজমান’ বা হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহকে। যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে।

ভারতের শীর্ষ আদালতে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে শনিবার এ রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক আদালত এ রায় দিয়েছেন।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360