বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
দেশে মোবাইল ব্যবহারে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন সিলেটের নারীরা। একই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) দক্ষতায়ও পিছিয়ে রয়েছেন এই অঞ্চলের নারীরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু উন্নয়ন তহবিল প্রকল্পের (ইউনিসেফ) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার র্যাঙ্কিংয়ে দেশের মধ্যে সিলেট বিভাগের অবস্থান ছয় নম্বরে রয়েছে।
সিলেটকে ডিজিটাল বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। ‘দেশের প্রথম ডিজিটাল নগর’ হিসেবে সিলেটকে গড়ে তুলতে গত ২৮ জুলাই জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ নামে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
তবে মোবাইলের ব্যবহার ও আইসিটি দক্ষতায় নারীরা পিছিয়ে থাকলে ডিজিটাল বিভাগ ও নগর বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিলেটের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীদের একটি বড় অংশ মোবাইল ব্যবহার এবং আইসিটি দক্ষতায় পিছিয়ে থাকলে ‘দেশের প্রথম ডিজিটাল নগর’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন নারী নেত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় মোট জনসংখ্যা ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৮ এবং নারী ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ২৮০ জন।
এদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৮৫ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৬০ হাজার ৬৫৬ জন এবং নারী দুই লাখ ২৪ হাজার ৪৮২ জন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ চলতি বছর দেশজুড়ে ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (জরিপ) করেছে।
জরিপের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারাদেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭১.৪% নিজস্ব মোবাইল ব্যবহার করছেন। তবে সিলেটে এই সংখ্যা মাত্র ৫৮.২%। যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় অনেক কম। সিলেট বিভাগের ৫৮.২% এর মধ্যে হবিগঞ্জের ৬৩.০%, মৌলভীবাজারে ৬১.৭%, সুনামগঞ্জে ৫২.৮% ও সিলেট জেলায় ৫৭.৮% নারী মোবাইল ব্যবহার করছেন।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে আইসিটি দক্ষতা আছে ২.৩% নারীর। এর মধ্যে সিলেটের ১.১% নারীর আইসিটি দক্ষতা রয়েছে। আইসিটিতে সারাদেশে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন সিলেটের নারীরা।
সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জে ০.৪%, মৌলভীবাজারে ১.০%, সুনামগঞ্জে ০.২% ও সিলেট জেলায় ২.০% নারীর আইসিটি দক্ষতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন সুলতানা বলেন, সিলেটের নারীদের মোবাইল ব্যবহার ও আইসিটি দক্ষতায় পিছিয়ে থাকার একটি অন্যতম কারণ শিক্ষা। এই বিভাগে অন্য বিভাগের তুলনায় শিক্ষার হার অনেক কম। তাই তাদের আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করছি আমরা। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিলেটকে ডিজিটাল বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই আইসিটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে সিলেটের নারীরা আইসিটির দক্ষতা ও মোবাইল ব্যবহারে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হল রক্ষণশীলতা ও শিক্ষার অভাব।
তিনি বলেন, এজন্য সিলেট বিভাগের ডিজিটালকরণ থেমে থাকবে না। সিলেট বিভাগ ডিজিটাল হবে। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি। আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সিলেট বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে আইসিটির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র নারীদের আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সিলেটে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।
বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ই-ফাইলিং সাবমিটসহ সরকারি প্রশাসনিক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। দেশের মধ্যে সিলেট বিভাগ ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব