নিউজ ডেস্কঃ
সিনেমা কিংবা গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন নাটকীয় দৃশ্য জনমনে প্রভাব ফেলে এটা সমাজবিদরা সবসময়ই বলে থাকেন। যার প্রভাব আরো বেশি পরিলক্ষিত হয় শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে। টিভিতে দেখা সিনেমাটিক চরিত্র তারা বাস্তবে প্রয়োগ করতে চায়।
এমনই এক নাটকীয় দৃশ্যের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ছোট্ট বন্ধুকে তার কয়েকজন ‘অবুঝ’ বন্ধু মিলে হত্যার চেষ্টা করে। ভারতীয় ‘সনি এন্টারটেইমেন্ট টেলিভিশন’ চ্যানেলে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে প্রভাবিত হয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরাফাতকে তারই বন্ধুরা নৃশংসভাবে হত্যার চেষ্টা করে।
গত রোববার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি আখক্ষেতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। পরে সেই রাতে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে।
ঈশ্বরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অসিত কুমার বসাক জানান, আরাফাত (ছদ্মনাম) কিছুদিন আগে তার একজোড়া চাকাযুক্ত জুতো দুই হাজার ৫০০ টাকায় সহপাঠী রাব্বীর (ছদ্মনাম) কাছে বিক্রি করে। পুরো টাকা বাকি থাকায় আরাফাত বারবার টাকার জন্য রাব্বীকে চাপ দিচ্ছিল। তাই রাব্বী তার সহপাঠী রাসেল (ছদ্মনাম) ও রাকিবকে (ছদ্মনাম) নিয়ে আরাফাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
এসআই জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার দুপুরে আখ খাওয়ার কথা বলে তারা আরাফাতকে গ্রামের একটি আখক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রড় দিয়ে আরাফাতের মাথায় আঘাত করা হয়। উপর্যুপরি আঘাতে তার মাথার মগজ বেরিয়ে যায় এবং কান কেটে যায়।
অসিত কুমার বসাক আরও জানান, ঘটনার অনুসন্ধানে তারা অভিযুক্ত শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিশুরা জানায়, ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরাফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। পরে ঘটনায় ব্যবহৃত রডটি রাব্বী একটি পুকুরে ফেলে দেয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পরে শিশুদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আখক্ষেত থেকে আরাফাতকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার মাথায় গুরুতর জখম ছিল। প্রথমে তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় আরাফাতের বাবা আকমল মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাতের বাবা জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে আরাফাতের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তারা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি থানায় অভিযোগ করেন। আরাফাত প্রতিদিন অভিযুক্তদের সঙ্গে খেলা করত। তাই প্রথমেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তারা পুলিশের কাছে ঘটনা খুলে বলে।
আরাফাতের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা বলেন, ‘সে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। মাথায় অনেকগুলো সেলাই দেওয়া হয়েছে। উপর্যপুরি আঘাতে মাথার মগজ বেরিয়ে এসেছে। জ্ঞান ফেরার পর ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া লাগতে পারে। এজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
তবে রামেকের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয়। তার চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, রামেক হাসপাতালের চিকিৎসাতেই শিশুটি পরিপূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠেবে।’