শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে। শনিবার বসবে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন। প্রায় সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন। এখন চলছে নতুন করে দল পুনর্গঠনের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১০ জন বাড়ানো হবে। দলের ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত এই ফোরামের সদস্য সংখ্যা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ জন করা হচ্ছে। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও অধিকসংখ্যক প্রবীণ নেতা এবং অভিজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
এ সময় উপ-কমিটির আরও কিছু প্রস্তাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক উপকমিটির ‘সহসম্পাদক’ পদ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, এখন থেকে আর সহসম্পাদক পদ থাকবে না। উপকমিটির শুধু সদস্য থাকবে। সবগুলো সম্পাদকীয় পদে একজন চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও পাঁচজন করে সদস্য থাকবে। তবে তা অবশ্যই দলীয় সভাপতির অনুমতি নিয়ে নিয়োগ দিতে হবে।
এ সময় বৈঠকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র সংশোধনী উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
এ ছাড়া জেলা-উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের আকার সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, দলের সহযোগী সংগঠন ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর পরিবর্তিত নাম ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ করা, দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদের আবেদন ও নবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্টদের পরিচয়ের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ফোন নম্বর সংযুক্ত করাসহ আরও কিছু ছোটখাটো সংশোধনীও আনা হয়েছে। তবে গঠনতন্ত্রের ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অংশে ‘হিজড়া’ শব্দের স্থলে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ সময় গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগকে দলের নতুন সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবও ওঠে। তবে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক সংগঠনের ‘মহিলা শাখা’ থাকার বিধান না থাকায় মহিলা শ্রমিক লীগকে সহযোগী সংগঠন করার প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
ওই আইনে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের মহিলা কিংবা পুরুষ হিসেবে বিভাজন করা যাবে না। শ্রমিকরা শ্রমিক হিসেবেই বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মৎস্যজীবী লীগের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকে দলীয় ঘোষণাপত্রের খসড়া সংশোধনী প্রস্তাব তুলে ধরেন ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এ সময় ঘোষণাপত্রে ২০১৬ সালের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে গত তিন বছরে বিভিন্ন ঘটনাবলি এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের পরিসংখ্যানগত আপডেট সংযুক্তির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এ ছাড়া শব্দগত কিছু সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান করে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান।
এ সময় জাতীয় সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির দিক তুলে ধরেন বিভিন্ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা। তাদের মধ্যে অভ্যর্থনা উপ-কমিটির পক্ষে মোহাম্মদ নাসিম, অর্থ উপ-কমিটির কাজী জাফরউল্লাহ, মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বাস্থ্য উপ-কমিটির ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির অসীম কুমার উকিল, খাদ্য উপ-কমিটির মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় সম্মেলন সফল করতে এসব উপ-কমিটিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেরা নিউজ/আকিব