প্রাচীনকালে দূরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে মানুষ ধোঁয়ার সিগন্যাল থেকে শুরু করে কবুতরের পায়ে চিরকুট বাঁধা, দূত দিয়ে চিঠি পাঠানো এবং পরবর্তীতে ডাকমাধ্যমে চিঠি, টেলিগ্রাম ইত্যাদি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে। এখন মানুষ যেকোনো প্রান্ত থেকেই স্রেফ মুঠোফোনের ডায়ালে চেপে একে অন্যকে খুঁজে নিচ্ছে। আর চিঠির ব্যবহার হ্রাস করে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে ইমেইল। ইমেইল থাকতে কেউ ডাকে চিঠি ফেলে তা পৌঁছানোর অপেক্ষা করতে চায় না। মুহূর্তের ব্যবধানে মেইল পৌঁছে যায় প্রাপকের কাছে, এবং বেজে ওঠে নোটিফিকেশন।
কিন্তু মেইলের এই নিশ্চিত আর তাৎক্ষণিক ডেলিভারি সিস্টেমে অভ্যস্ত হতে পারেননি বেশিরভাগ বাংলাদেশি ইমেইল ব্যবহারকারী। তাই মেইল পাঠানোর পরেও দেখা যায়, পাঠানোর পর মেইলের প্রাপককে ফোন দিয়ে, ‘মেইল পাঠিয়েছি, চেক করেন!’ না বললে সেই মেইলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে। মেইলের সাথে তাৎক্ষণিক ফোন না এলে ইনবক্স চেক করার প্রয়োজন খুঁজে পান না কেউ।
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইমেইল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুগল বাংলাদেশের ইমেইল ব্যবহারকারীদের এই ফোন দিয়ে মেইল পাঠানো নিশ্চিত করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে অবগত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে জিমেইল ব্যবহারকারীদের জন্য গুগল চালু করতে যাচ্ছে এই নতুন ‘মেইলও পাবেন কলও পাবেন’ সার্ভিস। এতদিন মেইল করার পর ফোন দিয়ে প্রেরককে জানাতে হতো এই মেইল পাঠানোর কথা। এই সার্ভিসের মাধ্যমে প্রাপক তার ইনবক্সে মেইল ঢুকতে ঢুকতেই একদম গুগল থেকেই পেয়ে যাবেন মেইল প্রাপ্তির ফোনকল।
এ ব্যপারে গুগলের ব্যর্থ সোশ্যাল মিডিয়া গুগল প্লাসে একটি ফেক প্রোফাইল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সিইও সুন্দর পিচাই বলেন, ‘ইনবক্সে নতুন ইমেইল আসলে “ইউ হ্যাভ গট মেইল” নোটিফিকেশনই মানুষকে জানানোর জন্য যথেষ্ট বলে ভাবতাম। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যাচাই করে আমরা মুখোমুখি হয় অন্য এক চ্যালেঞ্জের। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমরা জেনেছি, মেইল পাঠানোর পর কল না দিলে সেই ইমেইলকে অবাঞ্চিত ভেবে ফেলে রাখা হয় ইনবক্সে। ইমেইল দিলে কেন ফোনেও জানাতে হবে, তার কারণ আমরা গুগল করেও জানতে পারিনি। তাই বাংলাদেশে এই সার্ভিস আনতেই হল। এখন মেইল ইনবক্সে ঢোকার আগেই আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে কল দিয়ে জানিয়ে দিবো “ভাই মেইল এসেছে, চেক করেন!” এতে করে ইমেইল প্রেরককে ফোন করে মনে করিয়ে দেয়ার ঝামেলায় আর যেতে হবে না!’
এই নতুন ফিচার পেয়ে খুশি বাংলাদেশি মেইল ব্যবহারকারীরাও। মোবাইলের ব্যালান্স খরচ করে আর কাউকে মেইলের খবর জানাতে হবে না, এ ব্যাপারটি নিয়েই আনন্দের আর সীমা নেই তাদের। তবে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, অসংখ্য টার্মস এন্ড কন্ডিশনসের মাঝে এটির জন্যও আলাদা কোন খরচ গুগল নিয়ে নিতে পারে। সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।