পোস্টারে ঢেকেছে ঢাকা - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
পোস্টারে ঢেকেছে ঢাকা - Shera TV
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন

পোস্টারে ঢেকেছে ঢাকা

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শাপলা সরণিতে দাঁড়িয়ে যেদিকেই চোখ যায়, কেবল পোস্টার আর পোস্টার। কোনোটা মেয়র প্রার্থীর, কোনোটা কাউন্সিলর প্রার্থীর। কোনোটা নৌকার, কোনোটা ধানের শীষের প্রতীক সংবলিত পোস্টার। কোনোটা মিষ্টি কুমড়ার; কোনোটা ঠেলাগাড়ি, লাটিম বা ঘুড়ির। কোনোটা ঝুলানো, কোনোটা ছেঁড়া। কোনোটা আবার পলিথিন দিয়ে মোড়ানো, যাতে বৃষ্টিতে ভিজে বা বাতাসে ছিঁড়ে না যায়। কোনো কোনো পোস্টার সুতো ছিঁড়ে রাস্তায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। আবার সুতা ছিঁড়লেও ঝুলে আছে কোনো কোনো পোস্টার।

এ দৃশ্য শাপলা সরণিরই নয়; ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের চিত্রই এখন অভিন্ন। পথ-প্রান্তর, রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছের ডাল- সবই এখন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ঠাসা। এত পোস্টারের দৌরাত্ম্যে বদলে গেছে রাজধানীর চেহারা। নির্বাচন শেষে এসব পোস্টার অপসারণ নিয়ে চিন্তায় আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও। করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, এবার প্রচারে যে লাগামহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সাম্প্রতিক কোনো নির্বাচনে তেমন আর দেখা যায়নি। এই পোস্টার অপসারণ করতেই দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় এক মাস সময় লেগে যাবে। নিয়মিত জনবল দিয়ে কুলাবে না। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর পরিণতি খুবই খারাপ হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বরাবরই সাবধান হতে বলা হয়েছে। ইসির একটি আদেশও আছে। কিন্তু সে আদেশ প্রয়োগ করবে কে?

বদিউল আলম বলেন, অনেক দেশেই পোস্টার-ফেস্টুন ছাড়া নির্বাচন হয়। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রার্থীরা তাদের বিলবোর্ড বা ব্যানার বসিয়ে প্রচার চালান। অনেক দেশে প্রার্থীরা তাদের পরিচিতি সংবলিত বুকলেট ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। সেখানে প্রার্থী সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য থাকে। বাংলাদেশেরও এখন সেদিকে যাওয়া প্রয়োজন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইনে প্রার্থীরা কয়টি পোস্টার ছাপাতে পারবেন, তার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারপ্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১ টাকা ৬৬ পয়সা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২ টাকা ১১ পয়সা ব্যয় করতে পারবেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিজন নির্বাচনের কাজে ২ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে অন্তত ২০ হাজার। এছাড়া ভোটারের সংখ্যাভেদে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আরও ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন। তবে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সাকুল্যে নির্বাচনী ব্যয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এই অর্থের মধ্যে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন-লিফলেট ও ভোটার স্লিপ কত টাকার ছাপানো হবে, তা ইসিতে জানাতে হবে। কোন প্রেস থেকে কতটি ছাপবেন, সেটাও উল্লেখ থাকবে পোস্টার-স্লিপে। কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেশিরভাগই তা মানছেন না। পোস্টারে যত পোস্টার ছাপানোর কথা বলছেন, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি ছাপছেন। নির্বাচন কমিশনও সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে না।

নগরবাসী বলছেন, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীরা একেকজন লাখ লাখ পোস্টার ছাপিয়েছেন। কিন্তু তারা এ তথ্য গোপন করছেন। ২ লাখ টাকার মধ্যে খরচ সীমাবদ্ধ রাখলে রাজধানীতে এত পোস্টার দেখা যেত না। কারণ ২০ হাজার পোস্টার ছাপতেই অন্তত এক লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম এনামুল হক (আবীর) বলেন, তার ওয়ার্ডে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যে সংখ্যক পোস্টার সাঁটিয়েছে, তা দেখেই দিশেহারা হওয়ার অবস্থা। এত পোস্টারের ভিড়ে তার পোস্টার চোখে পড়ছে না। অথচ তিনি নিয়ম মেনেই সবকিছু করছেন। তিনি জানান, বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের দেখা প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে যারা লাখ লাখ পোস্টার যেখানে সেখানে সাঁটাচ্ছেন, তারাই ভবিষ্যতে মেয়র-কাউন্সিলর হবেন। এসব পোস্টারের বর্জ্য সিটি করপোরেশনকেই অপসারণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন সব সময় পরিচ্ছন্ন রাজধানী উপহার দেওয়ার জন্য নগরবাসীর কাছে ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু যারা এর অভিভাবক হবেন, তারাই যদি এভাবে শহর নোংরা করেন, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে- নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা কতটা পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেবেন। তিনি বলেন, এই বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনকে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার সংস্কৃতি বন্ধ করলে নগরবাসীও অনেকটা স্বস্তি পাবেন।

অবশ্য এই পোস্টারের দৌরাত্ম্যের ব্যাপারে কয়েকজন নগরবাসীর বক্তব্য ভিন্ন রকম। গণমাধ্যম কর্মী জাফর আহমেদ বলেন, এ রকম পোস্টার ব্যবহারই বাংলাদেশের নির্বাচনের সৌন্দর্য। এখন যে কেউ ঢাকা শহরে এলে বুঝতে পারবেন, নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন যে একটা উৎসব- তা রাজনীতিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিও। কিন্তু পলিথিন দিয়ে মোড়ানো পোস্টারের ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে ইসির বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুনও অনেক প্রার্থী মানছেন না। যানবাহন, দেওয়াল বা গাছের কাণ্ডে পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে প্রার্থীর অতিউৎসাহী কর্মীরা এ কাজই করছেন। কোন প্রার্থী কত পোস্টার সাঁটাতে পারেন, এ নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা।

সরেজমিন চিত্র :রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের পোস্টার সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই রয়েছে ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম স্বপনের ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকের পোস্টারের দৌরাত্ম্য। এ ছাড়া আছে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ রোকসানা ইসলাম চামেলীর আনারস প্রতীকের পোস্টারের সারি। আছে আরও অনেক প্রার্থীর পোস্টার।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীদের পোস্টারের বাইরে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও পছন্দের প্রার্থীর জন্য পৃথক ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ব্যানার বসানো হয়েছে। এভাবে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষেও কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে এ ধরনের ব্যানার দেখা গেছে। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেও এ রকম নানা ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে এ ধরনের ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে রাজধানী। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, বাড্ডা, বনশ্রী, গোরানসহ সর্বত্র এখন পোস্টারে সয়লাব। অনেক স্থানে এসব পোস্টার ছিঁড়ে পড়ে থাকার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল মোস্তফা বলেন, গত চার বছরে একটি জাতীয় নির্বাচন ও ঢাকায় একটা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হয়েছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতেও নির্বাচন হয়েছে। সেসব নির্বাচনে এত পোস্টার ব্যবহূত হয়নি। তারপরও তা পরিচ্ছন্ন করতে সিটি করপোরেশনকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। এবার আরও বেগ পেতে হবে। যারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন বা নির্বাচিত হবেন, তারা এটা বিবেচনায় রাখলে ভালো হতো।

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360