খোলা পাতা:
ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে বাংলাদেশ, যা এ দেশকে আলাদা এক মর্যাদায় নিয়ে যাবে। বহুদিনের স্বপ্ন ছিল আমাদের। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্টের সূচনা করেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে আধুনিক করার যে প্রত্যয় তিনি গ্রহণ করেছেন, তা একধাপ এগিয়ে গেছে। সারা বিশ্ব আজ আধুনিক হচ্ছে, তাহলে কেন পিছিয়ে থাকব আমরা? বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরও আধুনিক হতে হবে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ইতিমধ্যে ই-পাসপোর্টের সুবিধা, নিয়মকানুন ও আবেদনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। বাড়তি ঝুটঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। ই-পাসপোর্ট আসলে কেমন হবে এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। একটি জাতীয় পত্রিকা মারফত জানলাম, বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) মতোই একই রকমের থাকবে ই-পাসপোর্টের বই।
তবে এমআরপি’র বইয়ে প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুটি পাতা থাকে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে বরং পলিমারের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যে কোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারী সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন।
ডিজিটাল ব্যবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এটি চালুর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে জাল পাসপোর্টের সমস্যা দূর হবে। অন্যদিকে প্রবাসীসহ বিদেশগামীদের হয়রানির শিকার হতে হবে না।
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আগের এমআরপি পাসপোর্ট বহনকারীদের ভিসা চেক করার জন্য এয়ারপোর্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে সহজেই ই-গেট পার হওয়া যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে ভ্রমণকারী সহজেই ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। যদি পাসপোর্টে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে গেটে অটোমেটিক লাল বাতি জ্বলে উঠবে। আরেকটি বড় সুবিধা হল, ই-পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করা হয়েছে। আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান হবে আশা করা যাচ্ছে।
এ বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালন করছে পুরো দেশ। বলা যায়, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে জনগণের জন্য সরকারের উপহার এই ই-পাসপোর্ট। উন্নত পাসপোর্ট একটি উন্নত রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রদানে আগ্রহী কিনা তা অনেকটা আধুনিক পাসপোর্টের ওপর নির্ভর করে। যে দেশ যত উন্নত সেদেশের পাসপোর্ট তত উন্নত। বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্ট আধুনিকায়নের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা সাফল্যমণ্ডিত হোক, এই কামনা করছি।