ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বৃটেনে আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন আইএস বধূখ্যাত শামীমা বেগম। দেশটির স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশন (সিয়াক) তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বলেছে, শামীমা বেগম রাষ্ট্রহীন নন। বংশানুক্রমিকভাবে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাই তার বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়। শামীমাকে আপিল কমিশন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে ওই রায়ে। ওদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের কথা জানিয়েছেন শামীমার আইনজীবী।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, রায়টির কথা শুনেছি। এটি আমাদের মাথাব্যথা নয়।
এটি বৃটেনের মাথাব্যথা। শামীমার জন্ম ইংল্যান্ডে, বেড়ে ওঠাও সেখানে। শামীমা কখনো বাংলাদেশে আসেনি। তার বাবাও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বৃটেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। শুধু চেহারায় মিল থাকার কারণে কাউকে বাঙালি বলার কোনো যুক্তি নেই।
এর আগে শামীমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন দেশটির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। তখন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন শামীমার আইনজীবী। তিনি শামীমাকে বৃটেনে ফেরার সুযোগ দিতেও অনুমতি চান আদালতের কাছে। তবে সিরিয়া গিয়ে আইএস জঙ্গিদের বধূ হিসেবে পরিচিত হওয়া শামীমা মামলার প্রথম ধাপে হেরে গেলেন। এ মামলার রায় দেয় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট মামলার বিচারকাজ হয় এমন আংশিক-গোপন আদালতের একটি ট্রাইব্যুনাল। এর নেতৃত্ব দেন সিয়াক-এর প্রেসিডেন্ট বিচারক এলিজাবেথ লাইং।
২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে কথিত জিহাদের লক্ষ্যে বৃটেন ছেড়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শামীমা বেগম। বর্তমানে তার বয়স ২০ বছর। ট্রাইব্যুনালের রায়ে শামীমার স্বেচ্ছায় বৃটেন ছাড়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদকেও দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, শামীমা বেগম এখন যেখানে আছেন সেখানে তাকে থাকতে বাধ্য করায় সাজিদ জাভিদ কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেননি। তার সিদ্ধান্তের আগেই শামীমা স্বেচ্ছায় বৃটেন ত্যাগ করেন। তাছাড়া, সাজিদ জাভিদের সিদ্ধান্তের কারণেই সে বৃটেনের বাইরে ছিল তাও নয়। রায়ের উপসংহারে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শামীমা যেহেতু বাংলাদেশি নাগরিক তাই বৃটেন তার নাগরিকত্ব বাতিল করলেও তিনি রাষ্ট্রহীন হবেন না। যখন তার বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তখন তিনি বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে বংশানুক্রমে বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই তার নাগরিকত্ব অস্বীকার করতে পারে না বলেও মন্তব্য করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এমন রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে একইসঙ্গে বলেছে যে, এখনো যেহেতু আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তাই আর কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না। আদালত পরবর্তী ধাপে বিবেচনা করবে যে, শামীমা বৃটেনে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হবে এমন দাবি যুক্তিসঙ্গত কিনা।
বর্তমানে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় রোজ নামের এক শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন শামীমা বেগম। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন ছেড়ে কথিত জিহাদের লক্ষ্যে সিরিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এ সময় সঙ্গে স্কুলের দুই বন্ধুকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে তারা তুরস্কে প্রবেশ করে। সেখান থেকে তুর্কি সীমান্ত পার হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই সিরিয়ায় পৌঁছে যান শামীমা। তখন জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদর দপ্তর ছিল সিরিয়ার রাকায়।
সেখানে গিয়ে জিহাদের অংশ হিসেবে এক আইএস জঙ্গিকে বিয়ে করেন তিনি। তার সঙ্গী ছিলেন নেদারল্যান্ডস থেকে আইএসে যোগ দেয়া ধর্মান্তরিত এক জিহাদি। তার সঙ্গে শামীমার তিন সন্তান ছিল। তারা সবাই মারা গেছে। বর্তমানে সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে শামীমা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন বলে দাবি করেন তার আইনজীবী ড্যানিয়েল ফার্নার। এ জন্য তিনি অতিসত্বর শামীমাকে বৃটেনে প্রবেশের অনুমতি দিতে আহ্বান জানান। রায় ঘোষণার পর ড্যানিয়েল বলেন, সিরিয়ায় তার মক্কেলের অবস্থা অত্যধিক গুরুতর। তাই দ্রুতই তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবেন।
সেরা নিউজ/আকিব