অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক:
রপ্তানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা কম ও সঠিক মূল্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি হচ্ছে না। অন্যদিকে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করতে হচ্ছে। এতে করে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় রপ্তানি হয়নি।
যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ১ হাজার ৭০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে ডিসেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা) দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
ঘাটতির এ অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৭৮০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ঘাটতি বেড়েছে ৪২ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
এদিকে, আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৫২৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৩৬০ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবা বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ছিলো (ঘাটতি) ১৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৩.৯৪ শতাংশ ও নিট বেড়েছে ২.৫৭ শতাংশ।
একই সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ডলার। সেই টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে এই ৭ মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.২১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।
জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৩ হাজার ৯১৯ কোটি ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা (এক ডলারে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা ধরে)। এটি আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ডলার কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক রয়েছে। ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে মূলত দুটি কারণে। একটি হলো- সরকার ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু করেছে। অন্যটি হলো- ডলারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এখন ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ২০১৯ সালের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর নির্ধারণ ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। যর্থাৎ পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারে ব্যয় করতে হয় ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। চলতি বছর দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে গত এক বছরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম এক টাকার বেশি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে দেশে ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা এর আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ডলার কম। ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৬৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। তবে মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমলেও বেড়েছে বছরের ব্যবধানে। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন। গত বছরের ওই মাসের তুলনায় এ বছর রেমিট্যান্স ৪ কোটি ১৩ লাখ বা ২.৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১০৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯০৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে ৭ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৯৫ কোটি ডলার বা ১৭.৬৬ শতাংশ।
এদিকে, রেমিট্যান্সের প্রণোদনার অর্থ যেন সহজে প্রবাসীরা পঠাতে পারেন, সেজন্য বেশকিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা অর্থবছর হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
সেরা নিউজ/আকিব