বিশেষ প্রতিবেদক:
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার ফুলচাষিরা। আড়াই থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়ে ক্ষেতের ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত ফুলচাষিরা।
কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি এসএম টিপু সুলতান জানান, ২৭ বছর ধরে তিনি ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। ঢাকায়ও তার ফুলের ব্যবসা রয়েছে। তিনি মোট ১৭ বিঘা জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, ভুট্টা ফুল ও চন্দ্র মল্লিকা ফুল রয়েছে। ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার পিস লিলিয়াম ফুলের বীজ আনেন। আর এসব ফুল থেকে বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন তিনি। আসছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দু’টিতে তিনি একাই ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি দাবি করেন, চলতি বছরে ঝিনাইদহ জেলা থেকে দুই দিবসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুলচাষি মিজানুর রহমান ৫ কাঠা, একই এলাকার মোহাম্মদ আলী ও এমদাদুল হক দুই ভাই মিলে ৮ কাঠা, আব্দুল আলীম ৫ কাঠা জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন।
সরজমিন বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহনযোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে। সারা দেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো।
বালিয়াডাঙ্গা গোপীনাথপুর গ্রামের ফুল ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, তিনি ফুলচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ফুল ক্রয় করে থাকেন। বাজার ভালো হলে দামও ভালো পান তিনি। তিনি জানান, কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার আবাদ করা ফুল যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, খুলনা, যশোর, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর, নওগাঁ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলাতে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করীম বলেন, ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে কালীগঞ্জে সবচেয়ে ফুলচাষ বেশি হয়। চলতি বছর ২০৮ হেক্টর জমিতে ৮০০ জন কৃষক ফুলের আবাদ করেছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ফুলচাষিদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।
সেরা নিউজ/আকিব