ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
নিউ ইয়র্কে স্বস্তিতে নেই প্রবাসীরা। বাড়ছে আতঙ্ক। এই আতঙ্কের কারণ হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের হামলা। নিউ ইয়র্কের প্রবাসীদের ওপর হামলা বেড়েই চলেছে। এতে গত কয়েক বছরে মারা গেছেন অন্তত ৭ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে কয়েকজন রয়েছে সিলেটি। আর সাম্প্রতিক সময়েও বেড়েছে হামলার সংখ্যা। পরপর কয়েকটি হামলার ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে এই আতঙ্ক নেমে এসেছে।
নিউ ইয়র্কে বসবাসরত কয়েকজন প্রবাসী জানিয়েছেন, টার্গেট করে কৃষ্ণাঙ্গরা হামলা করছে। হামলায় কয়েকজন প্রবাসী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তারা জানান- গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক শহরে পরপর তিনটি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হাতে আহত হন নারীসহ তিনজন । হামলা করে কৃষ্ণাঙ্গরা পালিয়েও গেছে।
গত ১২ই ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসগামী ৬ নম্বর ট্রেনের যাত্রী রাবেয়া বেগমকে ছুরিকাঘাত করে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তরা। কাজ থেকে ফেরার পথে ১৩৮ স্ট্রিট ব্রুক এভিনিউ স্টেশনে এ হামলা হয়। রাবেয়ার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটে। ১১ই ফেব্রুয়ারি রাতে নিউইয়র্কের ওজনপার্কে কৃষ্ণাঙ্গের হাতে আহত হয়েছেন কণ্ঠশিল্পি আব্দুল আলীম। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হাতে তিনি গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুল আলীমের বাড়ি বিয়ানীবাজারের কসবাগ্রামে।
৯ই ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে ওজনপার্কে শাহাব উদ্দিন নামের আরেক বাংলাদেশিকে রক্তাক্ত জখম করে দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ। শাহাবের স্বজনরা জানিয়েছেন ‘মুসলিম’ বলে ‘হেইট ক্রাইমের’ শিকার হয়েছেন তিনি। পরে তাকে জ্যামাইকা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। শাহাব উদ্দিনের বাড়ি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার চারাবইগ্রামে।
নিউইয়র্কের ওজনপার্ক এলাকায় কয়েক বছর আগেও পৃথক ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল ইসলাম, ইমাম আকুঞ্জী ও তার সহযোগী নিহত হন। গত বছর আরো এক বাংলাদেশী হামলায় নিহত হন। এর আগে সেখানে মিজানুর রহমান নামে এক বাংলাদেশি ফটোসাংবাদিক নিহত হন।
২০১৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের হিলসাইডে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে রেজওয়ান কিবরিয়া নামে একজন বাংলাদেশী নিহত হন। তার বাড়ি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সন্দ্বীপ জেলার গাছুয়া ইউনিয়নে। সন্ধ্যারাতে দুই অজ্ঞাত বন্দুকধারী বাসায় ঢুকে গুলি ছুঁড়ে তাকে হত্যা করে। একই বছর ২রা অক্টোবর দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের হামলায় বাংলাদেশী তারেক আজিজ রকি আহত হন। স্থানীয় সময় মধ্যরাতে নিউইয়র্কের ওজনপার্কের ৭৭ স্ট্রিট লিবার্টি আর গ্ল্যানমোরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত আজিজের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে। ২০১৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে বাংলাদেশী মো. শাহেদ উদ্দিন নিহত ও আরো এক বাংলাদেশী আহত হন। আহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট। তার পিঠে গুলি লাগে। নিহত শাহাব যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বাবর উদ্দিনের ছেলে।
এই ঘটনার প্রায় ৫ বছর আগে একই এলাকার একটি নাইট ক্লাবের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা নজমুল ইসলামকে। ২০১৮ সালের ৩রা মার্চ নিউইয়র্কে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন আজিজুর রহমান নামে এক বাংলাদেশী। স্থানীয় সময় ভোরবেলা কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুই কৃষ্ণাঙ্গ ও এক শেতাঙ্গ যুবকের হামলায় তিনি আহত হন। এর আগের বছর একই এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হামলায় নাজমা আক্তার নামে এক বাংলাদেশী নারীর মৃত্যু হয়।
২০১৭ সালের ১৯শে মে সন্ধ্যারাতে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে জেরম এভিনিউ সংলগ্ন ১২১৫ এন্ডারসন এভিনিউতে সুপন চৌধুরী নামের বাংলাদেশী কৃষ্ণাঙ্গদের হামলার শিকার হন। একই বছর ২৭শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যারাতে নিউইয়র্ক ব্রঙ্কসের ক্যাসেলহিল এবং স্টার্লিং এভিনিউর কর্ণারে মো. খবির উদ্দিন ভূইয়াকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে আহত করে। খবির উদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। ২৮শে সেপ্টেম্বর কুইন্সের জ্যামাইকায় কৃষ্ণাঙ্গের হামলার শিকার হন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায়।
একই এলাকার পার্ক চেস্টারে হামলার শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশী মুজিবুর রহমান। এসব ঘটনা হেইট ক্রাইম বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কে বসবাসকারী সালেহ টিটু। তিনি জানান- এসব ঘটনায় রীতিমত আতঙ্ক নেমে এসেছে বাংলাদেশী কমিউনিটিদের মধ্যে। ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় নিউইয়র্কের ওয়েস্ট চেস্টার এভিনিউ এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন ক্যাবচালক আতাউর রহমান। হামলাকারীরা তাকে রক্তাক্ত জখম করে। আতাউর রহমানের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর গ্রামে।
তারও কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন আব্দুল আহাদ। নিহত আহাদের বাড়ি বিয়ানীবাজারের ছোটদেশ গ্রামে। নিউইয়র্কের পুলিশ সতর্ক থাকলেও বাংলাদেশি ও সিলেটীদের উপর কৃষ্ণাঙ্গ হামলা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। নিউয়র্কের কমিউনিটি নেতা বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এন্ড ইয়থ সার্ভিসেস ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট মিসবাহ আবেদীন জানিয়েছেন- সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে সকলকে পুলিশের কাছে বেশি বেশি অভিযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি ১৩ই ফেব্রুয়ারি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বৈঠক করেছি। পুলিশ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব