বাড়ছে চালের দাম - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
বাড়ছে চালের দাম - Shera TV
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

বাড়ছে চালের দাম

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পর্যাপ্ত চালের সরবরাহও আছে। তারপরও বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। বাজারে সব ধরনের চালের কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অসাধু চক্রের কব্জায় দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। এ চক্রের কারসাজিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম একের পর এক বাড়ছে। পিয়াজের বাজার বেসামাল করে রাখার পর চক্রটি এখন হাত দিয়েছে চালে। এদিকে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম কমছে।

অথচ মিলারদের কারসাজিতে সব ধরনের চাল কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার পর চালের দাম এক দফা বেড়েছিল। গত ৩১শে জানুয়ারি চালের রপ্তানি মূল্যের ওপরে ১৫% প্রণোদনা দেয়ার পর দাম ফের বাড়তে শুরু করে। চলতি সপ্তাহে চালের দাম আবারো আরেক দফা বেড়েছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে প্রধান পাইকারি বাজার কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও দিনাজপুরেও ধান-চালের দাম বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল রপ্তানির ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আপাতত কোনো প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত রয়েছে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, চাল রপ্তানি শুরু হলে চালের দাম আরো বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। রপ্তানির অনুমতি নিতে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরু ও সুগন্ধী চাল রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। এমনিতেই বাজারে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সরু চালের দাম বাড়ছিল। রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার পর সরু চালের দাম কেজিতে হঠাৎ করে ৩-৪ টাকা বেড়ে গেছে।

এ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের আয়ের সব টাকা চলে যাচ্ছে খাওয়া খরচে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন, চাল তো চীন থেকে আমদানি করতে হয় না। তাই চালের বাজারে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ার কথা নয়। তারপরও কেন বাড়ছে? চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকদেরকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো সেই শক্তিশালী কারসাজি চক্রই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় অধরাই থেকে গেছে চক্রটি। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়ায় বলে তারা মনে করেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা বলেন, কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্য সরকার চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে রপ্তানির অনুমতি সচল রাখা সঠিক হবে না। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চাল রপ্তানির অনুমতি না দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, গত এক মাসে শুধু সরু চালের দামই ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সরু চালের কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। মোটা চালের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা ছিল এক মাস আগে। তা বেড়ে এখন ৩৫ টাকা হয়েছে। অন্যান্য চালের দামও কমবেশি বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল মজুত আছে।

এদিকে কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও দিনাজপুরে ধান-চালের দাম পাইকারি বাজারে প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। কুষ্টিয়ার মোকামে মিনিকেট চালের দাম আবার বাড়ছে। ইতিমধ্যে গত দুই সপ্তাহে ২ টাকা বেড়েছে। মিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যমতে, গত রোববার কুষ্টিয়ার খাজানগরের মোকামে মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা দরে। মিলগেটেই ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে ৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, আমরা চাল রপ্তানির অনুমতি চেয়েছিলাম কৃষক ও দেশের স্বার্থে। এখন সরকার কেন চাল রপ্তানির অনুমতি আটকে দিয়েছে, তা বুঝতে পারছি না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এটি স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে একজন আরেকজনের দোষ দেয়। বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব সরকারের। কোনো কারসাজি হলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কাওরান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা ও রনি রাইস এজেন্সির মালক রনি জানান, মিনিকেট প্রতিকেজি বিক্রি করছি ৪৭ থেকে ৫৫ টাকা। নাজির শাইল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। আটাশ ৩৩ থেকে ৩৮ টাকা। পাইজাম ৩২ টাকা। আর গুটি স্বর্ণা (মোটা) ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে।

অন্যদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট (সাধারণ) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। মিনিকেট (উত্তম) বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪-৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা, এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩২-৩৫ টাকা।

কাওরান বাজারের পাইকারি আড়ত আল্লহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলাররা কারসাজি শুরু করেছে। তারা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে চালের অর্ডার দিলে তারা বাড়তি রেট আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। তাই সে দামেই আমাদের আনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে।

বাজারে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসারের জরুরি খরচ বাদ দিয়ে খাবারের জন্য যে টাকা রাখা হয়, তা দিয়ে পুরো মাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। ফলে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360