হিংসা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত বাঙালী - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
হিংসা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত বাঙালী - Shera TV
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

হিংসা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত বাঙালী

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সেরা নিউজ ডেস্ক:
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা অপরের ভালো কিছু সহ্য করতে পারেন না। অপরের ভালো দেখলে মনে মনে খারাপ লাগে। এ খারাপ লাগাটাই হচ্ছে হিংসা। কেউ কেউ আবার তার নিজের থেকে অন্য কারও ভালো থাকা বা সুখে থাকা মেনে নিতে পারেন না। মনে মনে হিংসা করেন। কিন্তু এমন হিংসা করা মূলত এক ধরনের পাপ।

বর্তমানে অনেকেই মনে করেন সমাজে টাকা হলো ন্যায্যতা, সাম্যতা ও মানবিক মূল্যবোধের পরিমাপক। এই অকার্যকর ও ভুল ধারণাকে মনে ধারণ করে ধন-সম্পত্তি বাড়ি-গাড়ী অর্জনের জন্য এতো লোভ ও হিংসার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মনে হিংসা থেকেই বাড়ে শারিরীক ও মানসিক অসুখ। হিংসার মারাত্মক ভয়ানকন থাবা মানুষকে পরিনত করে অমানুষে। সেরা নিউজ এর পাঠকদের জন্য হিংসা ও এর আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হল।

 

মানব ইতিহাসের শুরুর দিককার কথা। পৃথিবীতে মানব পরিবার বলতে তখনো কেবলই হযরত আদম আলাইহিস সালামের পরিবার। হযরত হাওয়া রা.-এর সঙ্গে তাঁর সংসার। তাঁদের সন্তান জন্ম নিত জোড়ায় জোড়ায় এক ছেলে এক মেয়ে। তাদের জন্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ম ছিল এমন জমজ ভাইবোন পরস্পর বিয়ে করতে পারবে না। যাদের জন্ম আগে-পরে, তারা একে অন্যকে বিয়ে করতে পারবে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলের নাম ছিল হাবীল ও কাবীল। কাবীলের সঙ্গে যে বোনের জন্ম হয় সে ছিল অধিক সুশ্রী। তাই নিয়ম ভেঙ্গে কাবীল তাকেই বিয়ে করতে চায়। আর নিয়ম টিকিয়ে তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল হাবীলও। দ্বন্দ্ব নিরসনে তাদেরকে কুরবানী করতে বলা হল। যার কুরবানী কবুল হবে সে-ই তার উক্ত বোনকে বিয়ে করতে পারবে। এর পরের কাহিনী পবিত্র কুরআনের ভাষায়।

اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَ لَمْ یُتَقَبَّلْ مِنَ الْاٰخَرِ قَالَ لَاَقْتُلَنَّكَ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِیْنَ لَىِٕنْۢ بَسَطْتَّ اِلَیَّ یَدَكَ لِتَقْتُلَنِیْ مَاۤ اَنَا بِبَاسِطٍ یَّدِیَ اِلَیْكَ لِاَقْتُلَكَ اِنِّیْۤ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعٰلَمِیْنَ…

যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, কিন্তু তাদের একজনের পক্ষ থেকে তা কবুল করা হল এবং অপরজনের পক্ষ থেকে কবুল করা হয়নি। সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করে থাকেন। তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্যে আমার দিকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তোমার দিকে আমার হাত বাড়াব না। আমি অবশ্যই বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহকে ভয় করি। অবশ্যই আমি চাই, তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ বহন কর, এরপর তুমি দোজখিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর এটাই জালেমদের শাস্তি। অবশেষে তার মন তাকে ভাই-হত্যার বিষয়ে প্ররোচিত করল, এরপর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। সূরা মায়িদা (৫) : ২৭-৩০

পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুসারে, এই হচ্ছে পৃথিবীতে সংঘটিত প্রথম হত্যাকা-। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম অপরাধ। প্রথম এই হত্যাকান্ডের পেছনের কারণও আমরা উপরোক্ত আয়াতসমূহে দেখতে পাই, ‘তোমার কুরবানী কবুল হয়েছে আর আমারটি হয়নি’ এই চিন্তা থেকেই কাবীলের মনে হিংসা জমাট বাঁধতে থাকে আর এর পরিণতিতেই সে তার ভাই হাবীলকে হত্যা করে। যে হিংসা মানুষকে দিয়ে পৃথিবীতে পাপের সূচনা করাল, সে-ই হিংসা জগতে আরও কত শত-সহস্র অনিষ্ট ঘটিয়েছে তার হিসাব কে জানে!

কি হিংসা?
হিংসা একটি মারাত্মক আবেগ। ব্যাক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
হিংসা একটি বিপজ্জনক আবেগ এটি আপনার মনের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে, এমনকি অন্যের সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে, আপনার পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে, এমনকি চরম ক্ষেত্রে খুনের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। আপনার মনের মানুষের সাথে অন্য ছেলে বা মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক অনিয়ন্ত্রিত উদ্বেগ এবং ক্রোধ বাড়াতে পারে।

হিংসার  কারন ?

আরেকজনের কোনো নিআমত দেখে তা বিলুপ্তির কামনা করা হিংসার প্রথম ধাপ। এর পরের ধাপ হচ্ছে, মনে যখন কারও প্রতি হিংসা জন্ম নেয় তখন এর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। তা হতে পারে তার কোনো ক্ষতি করার মধ্য দিয়ে, হতে পারে তার কোনো ক্ষতিতে আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এসব যেহেতু তার কর্ম। তাই এর কারণে সে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে তখনো, যদি সে তার হিংসার কথা মুখে প্রকাশ করে ফেলে। যেমন অন্যের অনেক টাকা, দামি বাড়ি-গাড়ী দেখে হিংসা করছি। তার ক্ষতি কামনা করছি। নিজে অর্জনের চেষ্টা করছি না। পরিশ্রম করছি না। আবার অর্থও যে জীবনের সবকিছু নয় সেই জানচর্চাও নিজের ভিতরে নাই। এক নারী অন্য নারীর শাড়ী-গহনা দেখে হিংসা করছে। আসলে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারিত সিরিয়াল, নাটক, সিনেমা দেখে দেখে লাভ কতটুকু হয় জানিনা। তবে, মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে।
হিংসা বিরক্তিকর বোধ থেকে শুরু করে এই হতে পারে যে আপনার স্বামী অন্য মহিলার প্রশংসা করছেন বা আপনার স্ত্রী অন্য পুরুষের দিকে তাকাচ্ছেন, যা আসলে নেই তা কল্পনা করতে। যেভাবেই হোক হিংসা আপনার সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আপনি হিংসুকের অংশীদার হন বা আপনার স্ত্রী যদি খুব হিংসুটে হয় তাহলে অযৌক্তিক এবং অতিরিক্ত হিংসা অবশেষে আপনার দাম্পত্য সম্পর্ককে ধ্বংস করতে পারে।

অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে হিংসা বলা হয়। হিংসার পিছে পিছে আসে বিদ্বেষ। কোনো কারণে কারও প্রতি শক্রুভাবাপন্নতা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখার নাম বিদ্বেষ। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার বিষয়টি বদভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। লোভ মানুষের অধপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। যেহেতু লোভ একটি নৈতিক ক্রুটি, তাই এই বিষয়টি সর্ম্পকে জানা প্রয়োজন। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়।

হিংসুকের পরিণতি :
হিংসার জ্বলন্ত আগুনে হিংসুক নিজে যেমন জ্বলে পুড়ে শেষ হয়, সেই সাথে আরো দশজনকেও পোড়ায়। হিংসা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যধি, যায় ফল অত্যন্ত বিষময় ও ক্ষতিকর৷ হিংসা সামাজিক বন্ধন গুলোর ভাঙ্গন সৃষ্টি করে ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের অবজ্ঞা ও পাশ্চাৎপদতার সর্বনিন্ম স্তরে পৌঁছে দেয়৷ হিংসা এমন এক জ্বলন্ত আগুন যা চোখে দেখা যায় না৷

সেই আগুনে হিংসুক নিজে জ্বলে-পুড়ে মরে৷ হিংসুক ব্যক্তি অপরের সুখ-শান্তি সইতে পারেনা৷ হিংসুক লোক নিজেকে বীরত্ববোধ মনে করে৷ হিংসুক লোক সবসময় ভাবে আমি’ই সেরা আর সব নগণ্য৷ হিংসুক ব্যক্তি জীবনে সুখ-শান্তি ভোগ করে যেতে পারেনা৷ আর পারবেই বা কি করে, হিংসার আগুনে নিজেই জ্বলতে থাকে সারাজীবন৷ পৃথিবীর মানবকুলের সব ধর্মই হিংসাকে পরিহার করার কথা বলা হয়েছে৷

 

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360