যা ছিল যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া চক্রের নেপথ্যে - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
যা ছিল যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া চক্রের নেপথ্যে - Shera TV
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন

যা ছিল যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া চক্রের নেপথ্যে

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক:
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নেপথ্যের নানা কাহিনি। স্থানীয় এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামে একটি ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করে আসছিলেন এ দম্পতি। এ বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা দু’জন।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পাপিয়া ও তার স্বামী এবং অন্য দুই সহযোগীকে  গতকাল রোববার বিকেলে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সোমবার তাদের আদালতে তোলা হবে।

এদিকে, গতকাল ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল রুমে পাপিয়ার আস্তানায় র‌্যাব অভিযান চালায়। অভিযান চালানো হয় ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের বিলাসবহুল ভবন ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’তে এই দম্পতির দুটি ফ্ল্যাটে। এতে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল দামি বিদেশি মদ ও ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা ও এটিএম কার্ড ১০টি উদ্ধার করা হয়েছে।

মফিজুর রহমান

র‌্যাব জানায়, পাপিয়া ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকলেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। ইন্দিরা রোডে তাদের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের পাশাপাশি নরসিংদী শহরেও রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট। এ ছাড়া তেজগাঁও এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শোরুমে প্রায় এক কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে পাপিয়ার। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে তার। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে।

র‌্যাব জানায়, পাপিয়া ও তার সহযোগীরা অসৎ উদ্দেশ্যে অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। সবশেষ ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের একটি পাঁচতারকা হোটেলের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করেন তারা। ৫৯ দিনে তারা আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করেন। এত অর্থের প্রকৃত উৎস জানতে চাওয়া হলে পাপিয়া কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন নরসিংদীতে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স কিংবা গ্যাসলাইন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। এই দম্পতি পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা ও একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা আদায় করেছেন। ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন পাপিয়া ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা।

গতকাল কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, পাপিয়ার আয়ের আরেকটি উৎস হচ্ছে নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। তারা ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে কম বয়সী মেয়েদের অসামাজিক কাজ করাতে বাধ্য করত। এদের অনেককে নরসিংদী থেকে চাকরি দেওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। পাপিয়ার মোবাইল ফোনে কিছু ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। এই ক্লিপগুলো যে কোনো নারীর জন্য অমর্যাদাকর।

সাব্বির খন্দকার (বায়ে) ও শেখ তায়্যিবা

পাপিয়ার সঙ্গে বিশিষ্টজনের ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, বর্তমান সময়ে কেউ কারও সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে বিষয়টি সাধারণত এড়ানো যায় না। তাই কারও সঙ্গে ছবি থাকলেই এটা প্রমাণ হয় না যে, তার সঙ্গে পাপিয়ার সখ্য রয়েছে।

সম্প্রতি পাপিয়ার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ পায় র‌্যাব। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে র‌্যাবের একটি দল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গত শনিবার সকালে তড়িঘড়ি করে দেশত্যাগের চেষ্টা চালান পাপিয়া। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শনিবার পাপিয়া, তার স্বামী ও তাদের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি পাঁচতারকা হোটেল থেকে চার নারীকে আটক করা হয়।

বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার এই দম্পতির দুই সহযোগীর মধ্যে রয়েছে পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়ি্যবা ও সাব্বির খন্দকার। তাদের কাছে পাওয়া গেছে সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলংকান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন।

নরসিংদীতে তোলপাড় :  স্বামীসহ পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের খবর জানার পরপর নরসিংদীতে তোলপাড় শুরু হয়। গতকাল দিনভর এ খবরই ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’। পাপিয়ার সঙ্গে অনেকের ছবিই গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে পাপিয়ার স্বামী নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান। অনেক আগে থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন পাপিয়ার স্বামী। এলাকায় পাপিয়া ও তার স্বামী নরসিংদী সদর আসনের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক) বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হঠাৎ পাপিয়া এত বড় পদ পাওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, পাপিয়াকে রাজনীতির মাঠে আমদানি করেছেন এমপি নজরুল ইসলাম হিরু। এর দায় দলের অন্য কেউ নেবে না।

এ ব্যাপারে জানার জন্য নরসিংদী সদরের এমপি নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নরসিংদীর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পাপিয়াকে যুবলীগ নেত্রী বানানোর সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিরোধিতা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা তা আমলে নেননি। কাউন্সিল শেষে ঢাকা থেকে পাপিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। অনেক বছর পাপিয়া ও তার স্বামীর নরসিংদীতে তেমন যাতায়াত ছিল না। বছরখানেক ধরে এলাকায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে। কে কারা তাদের প্রশ্রয় দিত তা এলাকায় ‘ওপেন সিক্রেট’। তবে চলাফেরা অস্বাভাবিক থাকায় সাধারণ নেতাকর্মীরা পাপিয়াকে পছন্দ করতেন না।

নরসিংদীর একাধিক রাজনৈতিক নেতা জানান, পাপিয়া যে ঢাকা অভিজাত হোটেল ভাড়া নিয়ে অসামাজিক ব্যবসা চালাতেন এটা অনেকেরই জানা ছিল। তবে প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ওঠবস থাকায় এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছুই বলতেন না।

বহিস্কার : নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। গতকাল যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে সংগঠনের ২২(ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360