নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর অপরাধ সাম্রাজ্যের রাণী বলা হয়ে থাকে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউকে। অভিজাত হোটেলে সুন্দরী সরবরাহ, তরুণীদের দিয়ে প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইল এসব করেই উত্থান তার। মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, চাকরি দেয়ার নাম করে প্রতারণা সবেই করতেন এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেত্রী। পাপিয়ার অপরাধের সাক্ষী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, যা এখন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়া পিউয়ের মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। এতে রয়েছে রাতের আড্ডায় ঘটা নানা অপকর্মের ভিডিও। বিভিন্ন হোটেলে নাচাগানার আসরে ভিআইপিদের উপস্থিতি ভিডিও করে রেখেছেন পাপিয়া। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে হোটেলে মনোরঞ্জনের বিশেষ মুহূর্ত তাদের অজান্তেই ভিডিও করে রাখতেন পাপিয়া। তার মোবাইল ফোন ঘেটে এগুলো পাওয়া গেছে।
এসব ভিডিওতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার অশ্লীল ছবি রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনীতির নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।
মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলছে।
র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানানন, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন শোরুম ‘কার এক্সচেঞ্জ’ এবং নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলুশন’ নামে গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। তবে এসব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছিল তার প্রধান কাজ। অধিকাংশ সময়ই তিনি নরসিংদী ও ঢাকার বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। চাঁদাবাজির জন্য নরসিংদীতে তার ক্যাডার বাহিনীও আছে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের মূল ব্যবসা ছিল উঠতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীসহ সমাজের উঁচুস্তরের লোকদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেছেন, নরসিংদী ও ঢাকার অনেক তরুণীকে চাকরির নামে তারকা হোটেলে ডেকে পার্টি গার্ল হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
এছাড়া ফেসবুকে প্রকাশ্যে যৌন ব্যবসার গ্রুপ ‘এসকর্ট’ থেকেও সুন্দরীদের সংগ্রহ করতেন পাপিয়া। পরে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করতেন। এসব কুকর্মের বেশকিছু ভিডিও এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
কী আছে এসব ভিডিও ক্লিপে? এমন প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তা বলেছেন, পাপিয়ার মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। অশ্লীল ভিডিও তুলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন পাপিয়া। লজ্জায় কেউ মুখ খুলত না। এসব ভিডিওতে থাকা ৭ জন উঠতি বয়সী তরুণীর সঙ্গে র্যাবের কথা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, টিপসের বাইরে এসব তরুণীকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতেন পাপিয়া। এসব তরুণীকে আইনের আওতায় আনা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের অপরাধের বিষয়টিও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এসব তরুণী যদি ব্ল্যাকমেইলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তবে তাদেরও আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
সেরা নিউজ/আকিব