নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের কারণে চীন থেকে সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটগুলোতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে চীন থেকে আমদানি করা অন্য পণ্যের মতো প্রযুক্তিপণ্যের দামও পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে যারা দেশেই এমন পণ্য উৎপাদন ও সংযোজন করে তারা বলছেন, এখনও সংকট হয়নি। আগের মজুত দিয়ে চলছে। তবে সমস্যা দীর্ঘ হল সংকট তৈরি হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল, ওভেন, চার্জারসহ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও পণ্যের যন্ত্রাংশের প্রায় ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। কিন্তু বর্তমানে শিপমেন্ট বন্ধ।কম্পিউটার খাতের অনেকটাই চীন নির্ভরশীল। একই পণ্য ভারত থেকেও আসছে। এখনই বাজারে কিছু কিছু কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থা আরো কিছু দিন থাকলে কম্পিউটারের দাম বেড়ে যাবে। এর মধ্যে মোবাইল হ্যান্ডসেট খাতে বাজারের আকার বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে। এটি প্রতি বছর বাড়ছে। এসব পণ্যের দাম ইতিমধ্যেই আগের চাইতে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোতে বেড়ে গেছে সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্যের দাম। বিশেষ করে কম্পিউটারের মাদার বোর্ড, র্যাম, প্রসেসর, স্যাটা হার্ডডিস্ক, এসএসডি হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই, কুলিং ফ্যান, স্ক্যানার, ডিভিডি রাইটার, কি বোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ, ওয়াই-ফাই রাউটার, প্রিন্টার, টোনার, সিসি ক্যামেরা, ডিভিআর, এলসিডি-এলইডি মনিটর ও মোবাইল এক্সেসরিজসহ প্রায় সব পণ্যের দাম ক্রমেই বেড়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্য করো হাতেই নেই। যেসব দোকানে পণ্য আছে তারাও দাম বেশি রাখছেন।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, জেনারেশন ভেদে মাদার বোর্ডের দাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। র্যামের দামও ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি। হার্ডডিস্কে বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। এছাড়া অন্য সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে বেশি। কি বোর্ড, মাউস, ইউএসবি পেনড্রাইভ, ক্যাবলসহ অন্যান্য মালামালের দাম আগের চেয়ে রাখা হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। রায়ানস কম্পিউটারের এক কর্মকর্তা সেরা নিউজকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই কম্পিউটারের মাদার বোর্ডের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি বোর্ডে দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি প্রায় সব ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের মডেল ভেদেও বেড়েছে দাম।
এদিকে সব ধরনের চায়না মোবাইলের দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোবাইল ফোনের কাভার আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। হেডফোনের দামও ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন তা যাচ্ছে না। মোবাইল গ্লাসের দাম আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হলেও এখন দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। ডাটা ক্যাবল ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। মোবাইলের ব্যাটারির দাম আগে ২৫০ টাকা থাকলেও এখন ৫০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকা। ব্যাটারির দাম ৩০০ টাকা থাকলেও এখন দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা হয়েছে। মোবাইল চার্জার ৯০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন আরও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এছাড়াও দাম বেড়েছে পাওয়ার ব্যাংকের। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির মোবাইল হ্যান্ডসেট ও মোবাইল এক্সেসরিজ বিক্রেতা সাগর সেরা নিউজকে বলেন, চীন থেকে আসা সব ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট, এক্সেসরিজের দাম বেড়ে গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও রেডমি নোট-৮ মডেলের হ্যান্ডসেট বিক্রি করতাম ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ১৬ হাজার টাকায়। অথচ এই সেটের দাম আরো কমার কথা। যেসব এক্সেসরিজ আগে ২ হাজার টাকায় কিনতাম, এখন কিনতে হচ্ছে আড়াই হাজার বা তার চেয়ে বেশি দরে। তিনি বলেন, দোকানগুলোতে পণ্যের মজুদ নেই, সরবরাহও নেই। কোনো দোকানেই নতুন ব্যাটারি নেই। মেমোরি চিপসের দাম ৫০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। টেকনো মোবাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজায়ানুল হক সেরা নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের যন্ত্রাংশের কোনো সংকট তৈরি হয়নি। আগের যা আমদানি করা ছিল তা দিয়েই চলছে। কিন্তু আগামী মাসে সংকট সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি। তার মতে, দেশে বছরে সাড়ে ৩ কোটি মোবাইলের চাহিদা রয়েছে। সংকট শুরু হলে দামেও প্রভাব ফেলবে বলে জানান তিনি।
এদিকে দাম বেড়েছে অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যর। চায়না এলইডি টিভির দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বেড়েছে। নন ব্রান্ড এলইডি ২৪ ইঞ্চি টিভি আগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদম ইলেক্ট্র্রনিক্সের বিক্রেতা সুহৃদ সেরা নিউজকে বলেন, সব ধরনের চীনা ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ওয়াই-ফাই সংযোগে ব্যবহৃত রাউটার আমরা কিনতাম ৬৫০ টাকা, বিক্রি করতাম ৯০০ টাকায়। এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। ক্রেতাদের কাছে ৯৫০ টাকা বিক্রি করতে চাইলেও বাক-বিতণ্ডা হয়। তারা কিনতেও চান না। তিনি বলেন, দোকানে যা আছে, সবই চীনা পণ্য। আর সবকিছুর দামই বাড়তি। বড় আমদানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ইলেক্ট্রনিক ক্যালকুলেটর দেখিয়ে তিনি বলেন, আগে এটি ২৫০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
মোবাইল হ্যান্ডস্টে ব্যবসায় সঙ্কটের আশঙ্কা: করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসা। চীন থেকে আমদানি যোগ্য যন্ত্রাংশের অভাবে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এপ্রিলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চড়া হতে যাচ্ছে হ্যান্ডসেটের মূল্য। প্রায় প্রতিটি হ্যান্ডসেটের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সেরা নিউজ/আকিব