অনলাইন ডেস্ক:
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। এরই মধ্যে তার মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক এমপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পাপিয়ার। নানা তদবির ও কাজ বাগিয়ে নিতে প্রভাবশালীদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানায়।
গত রোববার পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমন চৌধুরীকে তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়ি্যবাকে এক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। নানা অপকর্মের ব্যাপারে বিমানবন্দর থানা পুলিশ পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের বড় বড় কাজ মোটা অঙ্কের কমিশনের ভিত্তিতে পাইয়ে দেওয়ার দেনদরবার করতেন পাপিয়া ও তার স্বামী। যাকে যে কায়দায় ম্যানেজ করা যায়, সেটা ব্যবহার করতেন তিনি। কেউ প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিলে তাকে কৌশলে প্রতারণার জালে বন্দি করতেন। একটি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা পাপিয়া পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকা ও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তাকে রাজধানী ও নরসিংদীতে মাদক-বাণিজ্যে সহায়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
পাপিয়াকে সহায়তা দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তাও। তাদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন পাপিয়া। তুহিনের সঙ্গে পাপিয়ার চ্যাটিংয়েও এ বিষয়ক তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শীর্ষ নেত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার তথ্য রিমান্ডে উঠে এসেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন ভিকটিমকে পাপিয়ার মুখোমুখি করা হয়। পাপিয়া তাদের সঙ্গে প্রতারণার করার কথা স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নরসিংদীর একজন এমপির সঙ্গেও পাপিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্র্রভাবশালীর মাধ্যমেই নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈধ-অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়ে আসছিলেন তিনি। নিজে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। এ ছাড়া পাঁচ তারকা একাধিক হোটেলে নিয়মিত পার্টি দিতেন তিনি। ঢাকা ও নরসিংদীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক পাপিয়ার বাবা একজন অটো গ্যারেজের মালিক। বাবার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না।
সাবেক এমপি ও যুব মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন সমকালকে বলেন, ২০১৭ সালে পাপিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফোনে কথা হয়। আবার মেসেঞ্জারে চ্যাটিংও হয়। সংগঠনের জেলা নেত্রী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে তার মধ্যে এমন ‘কুৎসিত’ কিছু রয়েছে তা জানা ছিল না। পাপিয়ার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করার পরও কেউ বলেনি যে সে খারাপ। এখন অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। ১৪ মাস ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কয়েকবার ফোন করলেও পাপিয়া তাতে সাড়া দেয়নি। হয়তো ওর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বলেই এড়িয়ে চলত। পাপিয়ার সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। প্রয়োজনে ওর সামনে আমাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।’
তুহিন আরও বলেন, ‘যাচাই-বাছাই না করে সরল বিশ্বাসে মিশেছি, এটাই আমার দোষ। ও অনেক আগে আমার বাসায় আসত। একবার পাপিয়াকে শাড়ি উপহার দিয়েছিলাম। সংগঠনের নেত্রী হিসেবে সেটা দিতেই পারি। ও একবার আমার কাছে টাকা ঋণ চায়। তবে ওই সময় টাকা না থাকায় দিতে পারিনি। যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর মনে করেছি টাকা ধার না দেওয়ায় হয়তো আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’
সেরা নিউজ/আকিব