অনলাইন ডেস্ক:
তিন নেত্রীর লায়ে অপরাধ জগতের রানি হয়ে উঠেছিলেন যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন কেএমসি বাহিনী। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ওই তিন নেত্রীর নামও বলেছেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র। ওই তিন নেত্রীর একজন হলেন– ঢাকার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে পাপিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তুহিন। আর সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়েই পাপিয়া অপরাধ জগতের মক্ষীরানী হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে পাপিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বীকারও করেছেন তুহিন।
তবে গত দেড় বছরে পাপিয়ার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন এই সাবেক সংসদ সদস্য। এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। যেখানে দেখা গেছে, কোনো এক আলিশান বাড়িতে পাপিয়াকে নিয়ে প্রবেশ করছেন এক নারী। আর ওই ভিডিওর তারিখ দেখানো হচ্ছে – ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়।
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অনেকেরই দাবি, পাপিয়ার সঙ্গে ওই নারী সাবেক এমপি তুহিনই। এমন ভিডিও দেখে অনেকে প্রশ্ন করছেন, গত দেড় বছর ধরে যোগাযোগ না থাকলে মাত্র ২ মাস ৯দিন আগে পাপিয়া ও তুহিনকে একসঙ্গে দেখা গেল কি করে?
উল্লেখ্য, পাপিয়া প্রসঙ্গে তুহিন বলেছিলেন, ‘১৪ মাস ধরে পাপিয়ার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। পাপিয়ার মুখোমুখি হয়ে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে চাই আমি। আমি দলের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে পাপিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি এটি সত্য। কিন্তু এটি কি কোনো অপরাধ?’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পাপিয়ার সঙ্গে তার ছবিগুলো প্রসঙ্গে তুহিন বলেছিলেন, ‘শুধু আমার সঙ্গে কেন, কার সঙ্গে তার ছবি নেই? এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের পার্টির অনেক নেতার সঙ্গে পাপিয়ার ছবি আছে।’এবার তার সেই বক্তব্যকে মিথ্যা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিওফুটেজটি শেয়ার করা হচ্ছে।
ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডে বারিধারার ওই বাড়ির সামনে সাদা রঙের বিলাসবহুল একটি জিপ এসে থামে। কিছুক্ষণ পরই গাড়ির দুই পাশ দিয়ে নামেন পাপিয়া ও ওই সাবেক নারী সংসদ সদস্য। মিনিট পাঁচেক গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গ্রুপ ফোর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর গাড়ি থেকে শাড়ি পরা আরেক নারী নেমে আসেন। এরপর কয়েকজন নারী ও পুরুষ সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন তিন নারী। এর বেশ কিছু সময় পর ওই বাড়ি থেকে দুজনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
এই ভিডিওর বিষয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বিনা আমন্ত্রণে সাবেক এমপি তুহিন ঢাকার এক ব্যবসায়ীর বাসায় পাপিয়াকে নিয়ে হুমকি ধামকি দিতে যান। এ নিয়ে বাড়ির মালিকের পক্ষে গ্রুপ ফোরের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। এতে ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেই সূত্র।এদিকে পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক মো. কায়কোবাদ কাজী গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপির নাম-পরিচয় ব্যবহার করেই নরসিংদীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও তদবির–বাণিজ্য করেছেন পাপিয়া। এ ছাড়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে পাপিয়া ও তার স্বামী কিছু প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নেন। সেই নিয়োগের ব্যাপারে তদবির করেছিলেন ঢাকার সেই সাবেক নারী সংসদ সদস্য।
পাপিয়ার এসব অপকর্মে বারবারই সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তারের কথাই চলে আসছে।
এদিকে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের প্রভাব খাটিয়ে পাপিয়া নরসিংদীর একটি পোশাক কারখানায় গ্যাস সংযোগ এনে দেয়ার আশ্বাস দেন এবং কারখানা মালিকের কাছ থেকে কোটি টাকা নেন তিনি।
এ ছাড়া নরসিংদীর এক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন বলে তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারেননি। এর পর ওই ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ওই ব্যক্তিতে তাড়িয়ে দেন পাপিয়া।
তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক ওই নারী এমপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন পাপিয়া।
সেরা নিউজ/আকিব