স্পোর্টস ডেস্ক:
দীর্ঘ ৫ বছর নেতৃত্ব দেয়ার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এখনো তিনি অবসরে যাননি। খেলবেন সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবেই। তবে অধিনায়কত্বকে বিদায় জানানোর দিনে বললেন অনেক কথা। তার কথপোকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত কি আপনিই নিয়েছেন?
মাশরাফি: হ্যাঁ, নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত আমিই নিয়েছি।
প্রশ্ন: পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে কারো নাম বললেন?
মাশরাফি: কারো নাম বলা তো কঠিন। এটা অবশ্যই বোর্ডের (বিসিবি) সিদ্ধান্ত যে কে হবে। সিনিয়র যারা আছে, সাকিব তো বাইরে।
আমি নিশ্চিত যে বাকি তিনজন (তামিম, মুশফিক, মাহমুুদুল্লাহ) যারা আছে, তাদের অধিনায়কত্ব করার সক্ষমতা আছে।
প্রশ্ন: নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা কঠিন ছিল?
মাশরাফি: অধিনায়কত্ব জিনিসটাকে আমি কখনোই এমন গুরুত্বের জায়গায় আনিনি। আমি গর্বিত যে আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলি বা খেলেছি। অধিনায়কত্ব করার সুযোগ আমাকে বিসিবি দিয়েছে, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কখনো হয়েছে কখনো হয়নি।
প্রশ্ন: কোনো অভিমান ছিল ?
মাশরাফি: আপনারা সব সময় যদি এগুলো বের করতে চান খুব খারাপ। আমি আগেই বলেছি, অভিমান বা রাগ কেন দেখাবো।
প্রশ্ন: সাকিব না ফেরা পর্যন্ত আপনার থেকে যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল?
মাশরাফি: ২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন অধিনায়ক আনার সময় হয়েছে। আমি অতো ভাবতে পারি না। আজ (গতকাল) সকালে মনে হয়েছে যে যথেষ্ট হয়েছে। তবে আমাকে নিয়ে যে কথাগুলো হয়েছে, আমি আশা করবো এই কথাগুলো যেন শক্ত থাকে। পরের অধিনায়ক কিন্তু ২০২৩ এর, এমন না যে এক বছরের জন্য। হুট করে যেন খারাপ করলেই কাউকে যেন বাদ না দেয়া হয়। যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে। আমি সিদ্ধান্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তারা যেন পরে পেশাদারিত্ব নিয়ে তা করে।
প্রশ্ন: এই পর্যন্ত পথ চলা কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল?
মাশরাফি: আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে রাত পর্যন্ত সব কিছু পেয়ে যান তাহলে আপনার জীবনের মূল্যটা কী থাকলো? মানুষ হিসেবে প্রত্যেকটা কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমি উপভোগ করি সব যখন বিপক্ষে থাকে। সবকিছু যখন পক্ষে থাকে তখন আমার কাছে মনে হয় জীবনের মূল্য কিছুই না।
প্রশ্ন: মুশফিককে শেষ ওয়ানডেতে না রাখাটা আপনি কতটা সমর্থন করেন?
মাশরাফি: এগুলো কিন্তু ছোটোখাটো টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত। এগুলো অধিনায়কও নিতে পারে না। বাংলাদেশ জেতার পেছনে তার অবদান অনেক। তাই ও যেন মানসিক চাপে না থাকে সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেয়াল রাখা উচিত। এই যে একটি প্রক্রিয়া এটা যদি মুশফিকের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে আলোচনা করা হয়, যদি বোঝানো সম্ভব হয়, মানে বোর্ড থেকে মুশফিকের একটা সিদ্ধান্তে আসা বা তাকে জানিয়ে দেয়া। যেটাতে মুশফিকও মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকবে, এবং বোর্ডের পরিকল্পনাও সফল হবে।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি?
মাশরাফি: সব থেকে কষ্টের ছিল ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ১ রানের হার। ওই রাতটা পুরো দলের জন্যই বীভৎস ছিল। আমরা সবাই হোটেলে এসে করিডোরে বসে ছিলাম। অধিনায়ক হিসেবে প্লেয়ারদের দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। তার পরও অনেক চ্যালেঞ্জিং পিরিয়ড গিয়েছে, লাস্ট বিশ্বকাপ অবশ্যই। তবে আমি বলবো প্রত্যেকটা হারই আমার জন্য কঠিন ছিল।
প্রশ্ন: নানা সময় সমর্থক থেকে শুরু বোর্ডের ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলেছে?
মাশরাফি: যেভাবেই হোক আমি বলবো যে তারা (বোর্ড) আমাকে হেল্প করেছে। আর যে কঠিন প্রক্রিয়ার কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আপনি যখন ভালো করবেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনাকে আস্থা দেখাবে, আস্থা রাখবে। আমরা যখন নামি তখন কিসের জন্য নামি বাংলাদেশের জন্য নামি। যখন আমার ভুল ধরা হয় তখন স্বাভাবিকভাবে আমি কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারি না। মনে হয় যে হয়তোবা আমি ভুলই করেছি। কিন্তু এটা যদি আমার পরিবারের জন্য হতো যে পরিবারের জন্য মাঠে নামছি তাহলে হয়তো আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম। কিন্তু নামটা যখন বাংলাদেশ নিয়ে নামি আসলে তর্কের জায়গা থাকে না।
প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে দূতের যে সম্মান তা কতটা মিস করবেন?
মাশরাফি: আপনি যেটা বললেন দূতের মতো, আমি আসলে যখন খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেছি তখনও এটা ফিল করিনি। অধিনায়ক হয়েছি তখনো না। আমারতো আরেকটা পরিচয় আমি এমপি সেটাও আমি ফিল করিনি। কারণ রেড পাসপোর্ট নিইনি, আমি গাড়ি নিইনি, বাড়ি নিইনি কিছুই নিইনি। আমি আসলে এসব থেকে সবসময় দূরে থাকতেই পছন্দ করেছি। অধিনায়ক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার সম্ভাব্য সবকিছুই কিন্তু ছিল এই চেয়ারকে ঘিরে। যখনই আমি এটা পেলাম তখনই ওটা শেষ লেখা হয়ে গেছে। চেয়ারটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা উচিত পজিটিভ ওয়েতে। জিনিসটাকে এভাবে দেখি।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের পাশে থাকবেন কিনা?
মাশরাফি: দেখেন আমি সবসময় বলেছি আজ আমি যা কিছু করেছি সবই ক্রিকেট দিয়ে। ক্রিকেট যদি শেষ করতে না পারতাম তাহলে হয়তো মাছের ব্যবসা করতে হত কারণ আমার পারিবারিক ব্যবসা কিন্তু মাছের, মানে ঘের টের আছে (হাসি)। এবং সামনে আমার যে পরিকল্পনা তার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে অবশ্যই ক্রিকেট।
সেরা নিউজ/আকিব