স্পোর্টস ডেস্ক:
শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, লম্বা রেসের তেজি ঘোড়া। বল হাতে সাফল্যই তাকে পাদ-প্রদীপের আলোয় পৌঁছে দিয়েছিল। ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাতিও জুড়ে গিয়েছিল।
শুরুতে মোস্তাফিজের বলে ছিল প্রচন্ড ধার, সুইং, স্লোয়ার আর কাটারের মিশেলে ভরা সেই ধারালো বোলিং খেলতে গিয়ে অনেকেই ঘেমে নেয়ে উঠেছেন। কাটার, স্লোয়ার আর সুইংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা অহরহ বিভ্রান্ত হয়েছে অকাতরে উইকেটও দিয়ে এসেছেন।
কিন্তু যতই সময় গড়াচ্ছে ততই কেমন যেন আলো কমে যাচ্ছে। বলে শুরুতে যে ধার ছিল, সে ধারও গেছে কমে। এখন মোস্তাফিজ হয়ে পড়েছেন সাদা বলের বোলার। ২০২০ সালে বোর্ড যে ১৭ ক্রিকেটারের সাথে চুক্তি করেছে, তাতে মোস্তাফিজ দুই ক্যাটাগরিতে জায়গা পাননি।
বোর্ড তাকে শুধু সাদা বলের জন্য বেতনভুক্ত করেছে। অর্থাৎ বোর্ড ধরেই নিয়েছে মোস্তাফিজ এখন শুধু সীমিত ওভারের ফরম্যাটে কার্যকর। টেস্টে কার্যকর নন। লাল বলে মোস্তাফিজকে বিবেচনাতেই আনা হয়নি।
মোস্তাফিজ নিজে কি ভাবছেন এ নিয়ে? তার উপলব্ধি কি? তিনি কি এখন আর নিজেকে টেস্ট বোলার ভাবেন না? শুধু সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বল করতে চান?
আজ বুধবার প্রাইম ব্যাংকের অনুশীলনে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে মনে হলো মোস্তাফিজ টেস্ট আর ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চান। তাইতো যখন প্রশ্ন করা হলো, ‘আপনি কি শুধু সাদা বলে খেলতে চান?’ তখন মোস্তাফিজের চিবুক শক্ত করা জবাব, ‘আমি সব বলেই খেলতে চাই।’
তার অন্যতম বোলিং অস্ত্র ছিল কাটার; কিন্তু মাঠে দেখাই যাচ্ছে, সেই কাটার আর আগের মত কাজ করছে না। কোথায় সমস্যা হচ্ছে? এমন প্রশ্নর জবাবে মোস্তাফিজ মানতে নারাজ যে কাটার আগের মত কাজ করছে না। নিচের বক্তব্য তাই বলে দিচ্ছে।
‘আমার মনে হয় পরিবর্তন হয়নি। এখনো পর্যন্ত দেশে খেলা হলে আমার বলের গ্রিপ ভালোই হয়। বাইরে তো এমন আহামরি হয় না। দুই-তিনটা জিনিস আমি চেষ্টা করতেছি। যেমন ইয়র্কারটা আমি আগের মত আত্মবিশ্বাস পাই না। চেষ্টা করছি যে, কি করলে আমার ভালো জায়গায় হবে। কাটারটা তো আছে, সঙ্গে আরও ভেতরে ঢুকানো।’
এক সময় তিনি ছিলেন অপরিহার্য্য। দলের সেরা ও সবচেয়ে কার্যকর বোলিং অস্ত্র। তাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবা যেত না। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রায়ই ড্রপ হচ্ছেন। নিয়মিত একাদশে জায়গা মিলছে না। এ থেকে কি শিক্ষা পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মোস্তাফিজ অকপটে স্বীকার করেছেন, তিনি আগের অবস্থায় নেই।
‘আমার জন্য ভালো, আরও উন্নতির জায়গা আছে এটা বুঝতেছি। এটা আমার শিক্ষা যে, আমি এখন যোগ্য নই। সুতরাং আমাকে আরও কাজ করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে।’
শুরুতে দারুন ছন্দে ছিলেন। যশ খ্যাতি, আইপিএলে সাফল্য। এখন এসব কমেছে। খারাপ লাগে না? মোস্তাফিজের জবাব, ‘কষ্ট দেয় আরকি। চলতেছে চলুক। না, ও রকম আহামরি না। কিছু না কিছুতো দেশের জন্য করছি। এখন অনেকে অনেকভাবে নেয়। মাঝে মাঝে অনেক সাংবাদিকরাও বাজে-বাজে কথা বলেছেন। সমস্যা নাই। আমি চেষ্টা করছি, কি করলে আরও ভালো জায়গায় যেতে পারব। শুধু আমার জন্য নয়। আমি একটু ভালো করলে দেশের জন্যই ভালো, উপকার হবে।’
প্রশ্ন করা হয়েছিল দেশে নাকি বাইরে কোথায় আপনার জন্য ভালো? উত্তরে মোস্তাফিজ দেশ ও বিদেশের প্রসঙ্গে না গিয়ে উইকেটের চরিত্র বোঝানোর চেষ্টা করেন। বলতে চান, ‘শতভাগ ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট নয়, মোটামুটি স্পোর্টিং পিচটাই তার পছন্দ। ’
তাইতো মুখে এমন কথা, ‘কিছু কিছু উইকেট আছে, আপনি দেখলে বুঝবেন ৩৫০ রান হবে। এখন আরেকটা মনে করেন ২৫০ রান হবে। আমার জন্য ২৫০ রানেরটা ভালো হবে। কিছু কিছু সময় ভালো খারাপ থাকতেই পারে। আমার পছন্দের উইকেট থাকতেই পারে। উত্থান-পতন থাকবেই ক্রিকেটে। এটাই মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নিতে না পারেন, তাহলে সে বড় খেলোয়াড় হতে পারবে না। আমার মনে হয় কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছিল। এখনা আবার কিছুটা ভালো হচ্ছে । আসলে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। আরও অনুশীলন করতে হবে। আমার মনে হয়, সার্জারির পর হাতটা একটু পরিবর্তন হয়েছে, আহামরি কোন পরিবর্তন নয়। ওটা ঠিক হয়ে যাবে।’
সেরা নিউজ/আকিব