দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের - Shera TV
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:১০ অপরাহ্ন

দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত রাজধানীবাসী। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে নিত্যপণ্যের কেনাকাটা ছিল লাগামহীন। বাজারে ছিল অতিরিক্ত ভিড়। ক্রেতার এই বাড়তি চাপেই পণ্যের দাম লাগামহীন বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু রাজধানী নয়, গতকাল সারাদেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ গতকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, গত দুই দিনে ১৬টি পণ্যের দর প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এক দিনে পেঁয়াজ ও দেশি রসুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এই বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে ছুটির দিনেও বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর পরেও পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা,
মাছ-মাংস, ডিম, চিড়া-মুড়িসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ফলে এ সুযোগ নিতে ভুল করেননি ব্যবসায়ীরা। তারা লাগামহীনভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে একদিনেই পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

 

প্রধান খাদ্যপণ্য চাল আগের দিনের তুলনায় কেজিতে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ হিসাবে গত তিন দিনে চালের দাম কেজিতে গড়ে ১২ টাকা বাড়ল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা। নিরুপায় হয়ে এই মোটা চালের ভাতই খান সাধারণ মানুষ।

 

তিন দিন আগে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা ছিল এই মোটা চালের দাম। এখন বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও সরু চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ব্র্যান্ডের সরু চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় উঠেছে। চাল এখন কেজি হিসাবে সামান্য বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগই বস্তা হিসাবে কেনাবেচা হচ্ছে। বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়ে মিনিকেট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা।

 

এছাড়া বস্তায় মিনিকেট লেখা থাকলেও উত্তরবঙ্গের মিল থেকে আনা গুটি ও স্বর্ণা চাল এখন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে ছিল। তবে বাজারভেদে চালের দামের ভিন্নতা থাকায় দামের ব্যবধানও বেড়েছে। শুধু চাল নয়, বেড়েছে আটার দামও। কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে আটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। খোলা চিকন মুড়ির দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা ও খোলা চিড়া ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।

হঠাৎ করে আবারও পেঁয়াজের ঝাঁজে অতিষ্ঠ ক্রেতা। গতকাল ভোররাতে মিরপুর-১নং পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে ক্রেতা ভিড় করেছেন বলে জানান বিক্রেতা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, তখনও ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। সকাল হলে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। ওই সময়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। সূর্য ওঠার পরে ক্রেতার ভিড় ঠেলে পণ্য দেওয়া দায় হয়ে পড়ে। এর পরে এক লাফে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় উঠে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম আরও বাড়তে থাকে। তখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বেচাকেনা হয়। ভর দুপুরে ক্রেতার ঢল নামায় চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তখন অনেক আড়ত ফাঁকা হয়ে যায়। ওই সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়।

 

এই পেঁয়াজ গতকাল খুচরায় ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার খুচরায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। শুধু পেঁয়াজ নয়, মওসুমের দেশি রসুন খুচরায় ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। আমদানি করা রসুন ও আদার কেজি দেড়শ’ থেকে ১৬০ টাকা ছিল। একদিনেই তা বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা হয়েছে।

 

এই বাজারে দুপুরে পণ্যের দাম তদারকি জোরদার হলে তখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। বাজার অভিযানে মোকাম থেকে বাড়তি দামে পণ্য আনার চালান দেখান ব্যবসায়ীরা। এই বাজারের আড়তদার শাহজাহান সেরা নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আড়াইশ’ বস্তা পেঁয়াজ আনলেও সকালের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। তখন আবার লালকুঠি মোকাম থেকে আরও এক ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে আসেন। তাও দুপুরের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হওয়ায় বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের দোষে বাজার দুষ্ট হয়েছে। ক্রেতারা স্বাভাবিক আচরণ করলে বাজারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
গতকাল দুপুরে এই বাজারের ৮ থেকে ১০টি আড়ত ফাঁকা হয়ে যায়। এখানে পেঁয়াজ ও আলু বিক্রি হচ্ছিল। এই কেনাবেচার চিত্র শুধু মিরপুর-১নং বাজারে নয়, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউনহল, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, কাপ্তানবাজার, শান্তিনগর, মহাখালী, মগবাজারসহ রাজধানীর সব বাজারে প্রায় একই চিত্র দেখা যায়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই আতঙ্কের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়বেন। তারা আশঙ্কা করছেন, বাজারে যত সহজে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, তত দ্রুত কমানো দূরূহ হবে। ব্যয় বৃদ্ধির ভোগান্তি আরও বাড়বে।

 

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান সেরা নিউজকে বলেন, এই ভাইরাসের আক্রমণ কতদিন থাকবে, তা অনিশ্চিত। এ জন্য ক্রেতাদের সংযত হওয়া প্রয়োজন। একসঙ্গে অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাজার অস্থির করলে ভোক্তাকেই খেসারত গুনতে হবে। এ জন্য আতঙ্কিত না হয়ে ভোক্তাদের স্বাভাবিক আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা উচিত, যাতে বাজার পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়।

 

মিরপুরের পীরেরবাগ বাজারে ব্যবসায়ী মো. শাহদাৎ হোসেন সেরা নিউজকে বলেন, যে ক্রেতা আগে সপ্তাহে দুই কেজি আটা নিয়েছেন, তিনি এখন এক বস্তা আটা নিচ্ছেন। গত দু’দিনে ৪০ বস্তা আটা বিক্রি করেছেন। অন্য শুক্রবারে তিনি দু’চার বস্তা আটা বিক্রি করে থাকেন। শুধু আটা নয়, ডাল, তেল চিনি, সাবান, হ্যান্ডওয়াশসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কিনছেন। ক্রেতাদের আচরণ দেখে মনে হয়, এক বছরের পণ্য এক দিনে কিনতে চান। তা না হলে বস্তা ভরে ডাল কিনে বাসায় নেওয়ার তো কোনো মানে নেই। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, এখন সকালে পণ্য আনলে দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

 

রাজধানীর বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মসুর ডাল দেশি ১১৫ থেকে ১২০ এবং আমদানি মোটা মসুর ডাল ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়, যা দু’দিন আগেও দেশি ১০০ থেকে ১০৫ ও আমদানি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ছিল। এ হিসাবে কেজিতে মসুর ডালের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে। আর ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে।

 

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। খোলা সয়াবিন লিটারে ১৫ টাকা বেড়ে ১০৫ টাকা হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ছিল। এখন তা ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ৫ লিটার আগে ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। এখন তা বেড়ে ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা। দোকানিরা বলেন, বাজারে তেল পর্যাপ্ত নেই। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়েছে। এতে পাইকারি বাজারে ৮৫ টাকা কেজি খোলা সয়াবিন ১৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৮ হাজার টাকা হয়েছে। এ কারণে খুচরায় দাম বেড়েছে।

 

বাজারে মাছের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিলভার কার্ফ ২২০ টাকা, মাঝারি মানের রুই ও কাতল ৪০০ টাকায় উঠেছে। অন্যান্য মাছের দামও বাড়তি। বেড়েছে ডিমের দাম। ডজনে ২০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং গরুর মাংস কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে আবারও ৫৮০ টাকা হয়েছে।

 

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360