যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস কেড়ে নিল দুই চিকিৎসকের প্রাণ - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস কেড়ে নিল দুই চিকিৎসকের প্রাণ - Shera TV
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস কেড়ে নিল দুই চিকিৎসকের প্রাণ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা হলেন, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট পরামর্শদাতা ৬৩ বছর বয়সী ডা. আদিল এল তাইয়ার। এল তাইয়ার যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রথম কর্মরত সার্জন। আদিল এল তারার সৌদি আরব, সুদানের পাশাপাশি লন্ডনের সেন্ট মেরি এবং সেন্ট জর্জ হাসপাতালে সহ বিশ্বজুড়ে কাজ করেছিলেন। অন্যজন ডা. আমজাদ এল-হাওরানী। তিনি কান, নাক এবং গলা বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষক ছিলেন। বার্টন ও ডার্বির হাসপাতালের মধ্যে একীভূতকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। হাসপাতালের তহবিল বাড়ানোর জন্য কয়েক বছর আগে তিনি একদল বন্ধুবান্ধব নিয়ে হিমালয়ের আরোহনের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন।

ডা. এল তায়ের পশ্চিম লন্ডনের আইলওয়ার্থের ওয়েস্ট মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৫ মার্চ ও ডা. আমজাদ লেইস্টারের গ্লেনফিল্ড হাসপাতালে ২৮ মার্চ মারা যান।

যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃত প্রথম কর্মরত সার্জন

যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রথম কর্মরত সার্জন ডা. এল তাইয়ারের পরিবার জানিয়েছে, মার্চের মাঝামাঝি সময়ে লক্ষণগুলির বিকাশের পরে তিনি আত্ম-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ২০ মার্চ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি পশ্চিম লন্ডনের আইলওয়ার্থের ওয়েস্ট মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৫ মার্চ মারা যান। ডা. এল তায়ারের চাচাত ভাই ড. হিশাম এল খিদির জানিয়েছেন, করোনভাইরাসটির জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছিলেন এবং তাঁর শেষ দিন নিবিড় পরিচর্যায় কাটিয়েছিলেন। এল খিদির বলেন, তিনি লন্ডনেই থাকতেন, কিন্তু সপ্তাহের মাঝামাঝি মিডল্যান্ডসে কাজ করেছিলেন। অসুস্থ হওয়ার আগের দিনগুলিতে, তিনি মিডল্যান্ডসের একটি হাসপাতালে কাজ করেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কোথায় থেকে এই ভাইরাস পেয়েছেন বলে মনে করেছেন। সম্ভবত কর্মক্ষেত্রেই করোনা আক্রান্ত হন তিনি। আমরা অনুভব করি এই মুহুর্তে চিকিত্সকরা সত্যই এই রোগের জন্য উন্মুক্ত রয়েছেন এবং যা দেওয়া হচ্ছে তার চেয়ে তাদের আরও কিছুটা সুরক্ষা দরকার। তিনি বলেন, আদিল এমন একজন ছিলেন যিনি আমাদের পরিবারের কেন্দ্রীয় ছিলেন। তিনি সবার কাছে সমাদৃত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর থেকে আমি তাঁর সহকর্মী এবং বন্ধুদের কাছ থেকে কয়েকশ পাঠ্য বার্তা পেয়েছি। তারা তাকে খুব মিস করবেন। ডা. এল তায়েরকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সার্জন আব্বাস গাজানফার বলেন,  ড. এল তায়ের অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিবেদিত সার্জন ছিলেন। যিনি তাঁর দুর্দান্ত প্রতিস্থাপনের দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের বহু মানুষকে জীবনের মূল্যবান উপহার দিয়েছিলেন। তিনি একজন দুর্দান্ত সহকর্মী, বিনয়ী ব্যক্তি এবং সার্বিকভাবে সম্ভ্রান্ত মানুষ ছিলেন। সুদানি-ব্রিটিশ সাংবাদিক জিন্যাব বদাভি বলেছেন, করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধে ডা. এল তাইয়ার স্বাস্থ্যসেবার ফ্রন্টলাইনে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি তার জীবন দিয়েই এর মূল্য দিয়েছিলেন। এই ভাইরাস ক্ষমাযোগ্য নয়। এটা আরো নির্মম ও নির্বিচার হতে পারে। বাদাভি বলেন, এল তায়ের অসুস্থ হবার পর যখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তখন একটি অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। কিন্তু এল তায়ের নিজেই হেঁটে এগিয়েছেন। আমরা আশাবাদী ছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার মৃত্যুর কথা কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক এবং চার সন্তান সহ একনিষ্ঠ পারিবারিক মানুষ ছিলেন।

ড. এল তায়ের ১৯৮২ সালে খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।  ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। সেখানে তিনি পশ্চিম লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ২০০০ সালে সৌদি আরব যাওয়ার আগে টুটিংয়ের সেন্ট জর্জ হাসপাতালে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি জেদ্দার কিং ফাহাদ জেনারেল হাসপাতালে তিন বছর কাজ করেছেন। ২০১১ সালে ড. এল তায়ের একটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম স্থাপনে সহায়তার জন্য তার জন্মভূমি সুদান ফিরে যান। সেখানে খার্তুমের ইবনে সিনা হাসপাতালে কাজ করেছেন। এরপরে তিনি আবার যুক্তরাজ্যের সেন্ট জর্জ হাসপাতালে লোকাল সার্জন হিসাবে কাজ করেন।

হিমালয় আরোহনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ডা. আমজাদ

কুইনস হসপিটাল বার্টনে কানের, নাক এবং গলা (ইএনটি) সার্জন ও এনএইচএসের পরামর্শদাতা ৫৫ বছর বয়সী ডা. আমজাদ এল-হাওরানী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হবার পরে শনিবার সন্ধ্যায় লেইস্টারের গ্লেনফিল্ড হাসপাতালে মারা যান। তিনিও করোনা আক্রান্ত রোগিদের নিয়ে কাজ করছিলেন।

ডা. আমজাদ এল-হাওরানী, তাঁর সহকর্মীদের কাছে আমজেড নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী আমজাদ ডাক্তারি পেশাকে সাধকের ভূমিকায় দেখতেন। রোগীদের প্রতি নিবেদিত এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হিসেবে পরিচিত ডা. আমজাদ পেশাজীবনে হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আরোগ্য করেছেন। পাশাপাশি তিনি কান, নাক এবং গলা বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষক ছিলেন। বার্টন ও ডার্বির হাসপাতালের মধ্যে একীভূতকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। দুটি ক্লিনিকাল দলকে একত্রিত করতে সহায়তা করেছিলেন। তিনি লিচফিল্ডের স্যামুয়েল জনসন কেন্দ্র সহ স্টাফর্ডশায়ারের কয়েকটি হেলথ সাইট পরিচালনায় ছিলেন। হাসপাতালের তহবিল বাড়ানোর জন্য কয়েক বছর আগে তিনি একদল বন্ধুবান্ধব নিয়ে হিমালয়ের আরোহনের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কর্মক্ষেত্রে তিনি সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন।

ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ ডার্বি অ্যান্ড বার্টনের (ইউএইচডিবি) চিফ এক্সিকিউটিভ গ্যাভিন বয়েল বলেন, আমি এমজেড এল-হাওরানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই। লেসেস্টার এনএইচএস ট্রাস্টের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালগুলিতে তার ভূমিকার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই। ইউএইচডিবি পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে চাই। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে দু:খিত। একজন মূল্যবান ও প্রিয় সহকর্মীকে হারিয়ে পুরো ইউএইচডিবি পরিবার শোকাবিভূত। এনএইচএসের জাতীয় চিকিত্সক পরিচালক প্রফেসর স্টিফেন পাওস গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা আমজাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এনএইচএস একটি পরিবার এবং আমরা সকলেই আমাদের যে কোনও সহকর্মীর ক্ষয়ক্ষতি গভীরভাবে অনুভব করি। এই ভাইরাসের সাথে আমরা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি তা সম্পর্কে কেউ সন্দেহ করতে পারে না। আমজাদের মৃত্যু কেবল একটি পৃথক মানব ট্র্যাজেডি নয়, আমাদের সবাইকে এই সঙ্কটকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

এল-হাওরানির পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁর সবচেয়ে বড় আবেগ ছিল তাঁর পরিবার এবং তার পেশা। তিনি উভয়ের জন্যই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর উপর পরিবার ও পেশার এতগুলি দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি সবসময় আন্তরিক ছিলেন। তিনি একজন সহানুভূতিশীল, যত্নশীল ও প্রেমময় ব্যক্তি ছিলেন। আমজাদকে হারানো আমাদের পরিবারের জন্য বড় বিপর্যয়। তাঁকে ছাড়া জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। এল-হাওরানির ছেলে আশরাফ বলেছেন, আমার বাবার বেশিরভাগ সময় পেশার প্রতি নিবেদিত ও পরিবারের প্রতি উত্সর্গীকৃত ছিল। তিনি আমাকে শ্রদ্ধা ও সাম্যতার তাৎপর্য শিখিয়েছিলেন। আমি যে জিনিসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না সে সম্পর্কে চিন্তা না করার বিষয়েও তিনি জোর দিয়েছিলেন। তিনি অন্যের প্রশংসার তোয়াক্কা করেননি।তার কর্মের ইতিবাচক প্রভাবে সন্তুষ্ট হতেন। তিনি যা অর্জন করেছেন তার জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। তিনি যেভাবে চাইতেন সেভাবে জীবনযাপন করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360