অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আঁতুড়ঘর সাউথ ডাকোটার একটি শূকরের মাংস প্রস্তুতকারী কারখানা। স্মিথফিল্ড কোম্পানির এ কারখানাটি থেকে সংক্রমণ দাবানলের মতো ছড়িয়েছে। জুলিয়া নামের এক মার্কিন নাগরিকের সচেতনতায় কারখানাটি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের এ অঘোষিত গল্প শুক্রবার তুলে ধরেছে বিবিসি।
জুলিয়া ২৫ মার্চ তার ফেসবুক পেজ থেকে আরগাস ৯১১ নামের একটি অ্যাকাউন্টে বার্তা লিখেছিলেন, ‘আপনি কি দয়া করে স্মিথফিল্ড নিয়ে তদন্ত করবেন?’
আরগাস ৯১১ হল স্থানীয় পত্রিকা আরগাস লিডারের ফেসবুক পেজ। আরগাস ৯১১ জানায়, ‘ওই কারখানায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে এবং তারা কারখানাটি চালু রাখার পরিকল্পনা করছে।’ সাউথ ডাকোটার বিগ সিঅক্স নদীর তীরে অবস্থিত আটতলার এ কারখানাটি যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম শূকরের মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এখানে দৈনিক সাড়ে ১৯ হাজার শূকর হত্যা করে তার মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কারখানাটিতে তিন হাজার ৭০০ কর্মী কাজ করেন।
জুলিয়া আবার লেখেন, যাদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে তারা কী করেন। আরগাস ৯১১ জানায়, আমরা খতিয়ে দেখব। এরপরের দিনই স্মিথফিল্ডের কর্মচারী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয় আরগাস লিডারের ওয়েবসাইটে।
কোম্পানিটির মুখপাত্রের বরাতে খবরে বলা হয়, ওই কর্মীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে; কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে কারখানাটি খোলা রাখা হয়। কারখানা খোলার রাখার যুক্তি তুলে ধরেন স্মিথফিল্ডের নির্বাহী প্রধান কেনেথ সুলিভান। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, খাদ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের ৪০ হাজার মার্কিন টিম সদস্য, হাজার হাজার আমেরিকান কৃষক পরিবার এবং আমাদের অন্যান্য বহু অংশীদারদের ভ‚মিকা রয়েছে। এরপর থেকে স্মিথফিল্ড কারখানায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। ৮০ থেকে ১৯০, এরপর ২৩৮Ñ এভাবে বাড়তে থাকে।
অবশেষে ১৫ এপ্রিল সাউথ ডাকোটার গভর্নর কার্যালয়ের চাপে কারখানাটি বন্ধ করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের নতুন আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। এখানের ৬৪৪ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে আরও বহু মানুষে ছড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে এ রাজ্যের ৫৫ শতাংশ করোনা আক্রান্তই ওই শূকর কারখানার সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইউএসএস থিওডোর রুসভেল্ট নৌজাহাজ ও ইলিনয় রাজ্যের শিকাগো শহরের কুক কাউন্টির কারাগারে আক্রান্তের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে স্মিথফিল্ড কারখানা। ওই কারখানার এক কর্মী হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর সেখানে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পায়।
স্মিথফিল্ডের শ্রমশক্তির সিংহভাগই মিয়ানমার, ইতিওপিয়া, নেপাল, কঙ্গো ও এল সালভেদরের মতো দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থী ও অভিবাসী। সেখানে অন্তত ৮০ ভাষাভাষী কর্মী কাজ করেন। ঘণ্টায় তাদের আয় ১৪ থেকে ১৬ ডলার।
সেরা নিউজ/আকিব