ঘরে বসে কোমর ব্যথা: যা করবেন - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
ঘরে বসে কোমর ব্যথা: যা করবেন - Shera TV
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন

ঘরে বসে কোমর ব্যথা: যা করবেন

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

কোমর ব্যথায় সাধারণত কেউ মারা যায় না। কিন্ত ভুল চিকিৎসায় মারাত্মক ক্ষতি খুবই স্বাভাবিক, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

কোমর ব্যথা সম্পর্কে ভুল ধারণা কিংবা ভুল চিকিৎসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। কিন্তু কোমর ব্যথার সংখ্যা কিংবা মাত্রার তাতে কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

শারীরিক চলাচলে অক্ষমতার সব ধরনের রোগের ভয়াবহতার মধ্যে এক নম্বর কারণ হিসেবে দেখা হয় বিশ্বব্যাপী কোমর ব্যথাকে। গবেষণামতে কোমর ব্যথায় যত ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক না কেন, মোট জনগোষ্ঠীর ২৫-৩০ শতাং মানুষ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সব রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগীর ব্যথা ৮ সপ্তাহের মধ্যে কোন চিকিৎসা ছাড়া কিংবা চিকিৎসা নিয়ে সেরে যাচ্ছে। ৫ শতাংশ রোগীর ব্যথা ১২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।

কিনতু এ সময়ের মধ্যে ব্যথা সেরে যাওয়া রোগীদের ৭০ শতাংশ ভবিষ্যতে পুনরায় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। কোমর ব্যথা সারাজীবনে শুধু একবারই হবে এরকম ধারণা ভুল। কোমর ব্যথা সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতই ব্যাপার, ব্যথায় আক্রান্ত হলে ম্যানেজ করা শিখতে হবে, সময়ের সাথে সাথে ব্যথা কমে যাবে।

কোমর ব্যথার কারণ
বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৯৫ শতাংশ কোমর ব্যথার রোগীদের রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্ত কোমর ব্যথার মারাত্মক কারণ যেমন ক্যান্সার, যক্ষা, কডা ইকুউনা সিনড্রম, ইনফেকশাস ডিজিজেস খুবই নগণ্য।

যদিও মনে করা হচ্ছে মেরুদণ্ডের ক্ষয়, স্পন্ডিলোসিস, ডিস্ক হানিয়েশন, গাউট, আর্থ্রাইটিস, স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস জনিত কারণে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু এ সমস্যাগুলি এমনকি যাদের কোমর ব্যথা নাই তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা পেশাজীবীরা রোগীদের ব্যথা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে না বললে রোগীরা মনে করেন তাদের কোমরে হয়তো মারাত্মক কোন সমস্যা আছে।

প্রচলিত চিকিৎসা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গবেষণায় দেখা যায়, এ যাবতকাল কোমর ব্যথার চিকিৎসায় যত পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক না কেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এ সব চিকিৎসার বেশিরভাগই ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি এ সব চিকিৎসা নিয়েও ভালোর পরিবর্তে খারাপ হওয়ার উদাহরণ আছে অগণিত। কোমর ব্যথা হলে শুধু সুনির্দিষ্ট কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ সবচেয়ে কাযকরী বলে প্রমাণিত।

গ্লোবাল থেলথ এর মাসকুলোস্কেলিটাল বিভাগের নেতৃস্থানীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্রিস মাহের বলেন, “চিকিৎসা পেশাজীবীরা কোমর ব্যথার জন্য অনেক ধরনের চিকিৎসা মাধ্যম চর্চা করে থাকেন। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকারক ব্যথার ওষুধ, এপিডিওরাল ইনজেকশন, সার্জারি, ট্রাকশন ও হিট থেরাপি অন্যতম। অথচ স্বপ্লকালীন সময়ে এগুলো কিছুটা কার্যকরী মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন কার্যকারিতা নেই। কিন্তু উচু মাত্রার ওধুষ সেবনের ফলে রোগীদের বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কিডনির সমস্যাসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা বেড়েই চলছে। এমনকি এপিডিওরাল ইনজেকশনের বিষক্রিয়ায় ও দীর্ঘমেয়াদী উচু মাত্রার ব্যথার ওধুষ সেবনের ফলে মৃত্যূর হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।

সার্জারিকে কোমর ব্যথার সর্বশেষ চিকিৎসা মনে করা হলেও এর কার্যকারিতা প্রশ্নমুখী এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাপক। বিশেষজ্ঞরা রোগীদের বিছানায় শুয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিশ্রাম নিতে বলেন, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিওি নেই এবং অপ্রয়োজনে গণহারে মেরুদণ্ডের ইমেইজিং এমআরআই, এক্সরে করতে পাঠান। এমআরআই-এর তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও এক্সরে-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। কিন্তু এমআরআই-তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন না কোন সমস্যা দেখা যায়, যার সাথে হয়তো কোমর ব্যথার কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এর ওপর ভিত্তি করে সার্জারিসহ নানাবিধ জটিল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য ৬৪ শতাংশ এমআরআই ফলস পসিটিভ।

কোমর ব্যথার সাথে মেরুদণ্ডের সরাসরি সংযোগ আর মেরুদণ্ড যেহেতু রোবাস্ট অর্গান, তাই এর সাথে মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল বিষয়সমূহ যুক্ত। যার জন্য বিশেষজ্ঞদের পেথমেকানিক্স জানতে হয়। পেথমেকানিক্স জানতে হলে মেরুদণ্ডের বায়মেকানিক্স, মুভমেন্ট সাইন্স, স্ট্রাকচারাল ও ফাংশনাল এনাটমি জানতে ও বুঝতে হয়। আর এসব বিষয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সুচারুভাবে শিখতে হয়, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা অতি অল্প সময়ে রোগীকে ব্যথামুক্ত করে প্রমাণিত ও সবচেয়ে কাযকরী সুনির্দিষ্ট কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

কোমর ব্যথা প্রতিরোধ
কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করা সত্যিই কঠিন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের এলাইনমেন্ট/পজিশন, হার-পেশীর সক্ষমতা এবং মেরুদণ্ডের স্টেবিলিটি ঠিক রাখতে পারলে কোমর ব্যথা থেকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকা যায়। এই ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা আপনার মেরুদণ্ড ও টোটাল বডি অ্যাসেসমেন্ট করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন (লাইফ স্টাইল রুটিন) দিতে পারেন।

করোনা পরিস্থিতিতে কোমর ব্যথায় যা করবেন
=> পরিচিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছে ফোনে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।

=> কোমরকে ২-৩ দিনের জন্য পূর্ণ বা আংশিক বিশ্রাম দিতে পারেন। কিন্তু বিছানায় শুয়ে পূর্ণ বিশ্রাম নিষেধ। যতটা সম্ভব স্বাভবিক জীবনযাপন করতে হবে এবং সচল থাকতে হবে।

=> যেসব কারণে ব্যথা বাড়ে (যেমন নিচে বসা, সিঁড়িতে ওঠা-নামা করা, লো কমডে বসা, সামনে ঝুঁকে কাজ করা, লম্বা সময় বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা ইত্যাদি) কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলুন। আর যেভাবে রাখলে ব্যথা কম লাগে, সেভাবে রাখার চেষ্টা করুন।

=> ব্যথার স্থানে ব্যথার ধরন ও কারণ অনুযায়ী ব্যথার ক্রিম লাগিয়ে সুতার তোয়ালে দিয়ে ২০ মিনিট গরম সেঁক ও ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিনে ৩ থেকে ৪ বার দিতে পারেন। অথবা প্রয়োজনে শুধু গরম বা ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিতে পারেন।

=> হাঁটা বা চলাফেরার সময় কিছু দিন কোমরের করসেট ব্যবহার করতে পারেন।

=> পুষ্টিকর ও এন্টিটক্সিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখুন।

=> প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো নিয়মিত করুন। সুনির্দিষ্ট ব্যয়ামগুলি নিরূপণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে করতে পারেন। থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ভুল হলে আপনার ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

=> সাধারণ মানের ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন, তারমধ্যে প্যারাসিটামলই সবচেয়ে ভালো। প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।

=> কোমর ব্যথায় যেকোন চিকিৎসা নেওয়ার আগেই তার প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা এবং অপকারিতা ভালোভাবে জেনে নিন।

ডা. দলিলুর রহমান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পেইন, ফিজিওথেরাপি ও স্পোর্টস ইঞ্জুরি বিশেষজ্ঞ। e-mail: [email protected]

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360