সেরা নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার পর থেকেই একের পর এক দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে বিষয়টা যেন কিছু শরীর সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এতদিন যত খারাপ খবর শোনা হয়েছে, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কোনো সংবাদ শুনতে হবে মানুষকে, তা যেন কল্পনাতেও ছিল না। রীতিমত আঁতকে উঠতে হলো সারা বিশ্বকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটনের এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ৭০ জন বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ফক্স নিউজ জানিয়েছে এ খবর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বৃদ্ধাশ্রমটি অনেক পুরনো হিসেবে পরিচিত।
স্টেট ও ফেডারেল কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন, ঠিক কিভাবে এই প্রাণঘাতি ভাইরাসটি বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশ করেছে! একই সঙ্গে কেন এতবেশি মৃত্যু ঘটছে, যা চলমান- সে বিষয়টাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা আক্রান্ত এসব বৃদ্ধরা সম্পূর্ণ চিকিৎসা বঞ্চিত হয়েছেন।
ম্যাসাচুসেটসের এই বৃদ্ধাশ্রমটির নাম হলিওক সোলজার্স। শুধু ওই ৭০জনের মৃত্যু দিয়েই শেষ হচ্ছে না সম্ভবত হলিওক সোলজার্সের করুন পরিণতি। কারণ সেখানে এখনও বাকি থাকা ৮২জন বৃদ্ধও আক্রান্ত করোনাভাইরাসে। শুধু তাই নয়, আশ্রমটিতে থাকা ৮১জন কর্মচারিও আক্রান্ত কোভিড-১৯ এ। মোটকথা জীবিত ও মৃত মিলিয়ে বৃদ্ধাশ্রমটিতে যত ব্যাক্তি ছিলেন বা রয়েছেন- সবাই করোনায় আক্রান্ত।
অ্যাডওয়ার্ড ল্যাপয়েন্তে নামক এক ব্যক্তির শ্বশুর থাকেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক।’ তার শশুরও করোনা আক্রান্ত। ল্যাপয়েন্তে জানিয়েছেন, এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা আরো মানুষ মারা যেতে পারেন। তিনি বলেন,‘এখানে বাকি যারা রয়েছেন, তারা আর কখনও সুযোগ (জীবিত থাকার) পাবেন কি না সন্দেহ।’ কারণ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর প্রতিদিনই আসছে ওই বৃদ্ধাশ্রম থেকে।
হলিওক সোলজার্স বৃদ্ধাশ্রমে দায়িত্ব পালন করা জোয়ান মিলার নামে এক নার্স জানিয়েছেন, ‘কর্মী সংখ্যা কম থাকার কারণেই মূলত দ্রুতগতিতে ভাইরাসটা সেখানে ছড়িয়েছে। কর্মী সঙ্কটের কারণে এক ইউনিটের কর্মীরা অন্য ইউনিটে যেতে বাধ্য হচ্ছিলেন। এদের অনেকের কাছেই সঠিক পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ছিল না। এ কারণেই ওই সব কর্মীদের মাধ্যমে ভাইরাসটা ট্রান্সমিট হয়েছে সব বৃদ্ধদের মধ্যে। এক সময় একটা ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে কোনো কর্মী না থাকায়। প্রবীণদের সেখান থেকে সরিয়ে আরো কাছাকাছি করে বিল্ডিংয়ের অন্য প্রান্তে রাখা হয়েছিল।
বৃদ্ধরা কিভাবে থাকতেন, সে বর্ণনাও দিয়েছেন জোয়ান মিলার। তিনি বলেন, ‘একজন বৃদ্ধ আরেকজনের ওপরে থাকতেন ৷ তারা জানিয়েছেন কে পজিটিভ কিংবা কে পজিটিভ নয়- তা জানা ছিল না। তারা এক গ্রুপে থাকতেন তার ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। এরপরেই ঘটনা সবার সামনে আসে।’
হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসের মুখপাত্র ব্রুক কারানোভিচ, জানিয়েছেন গত সোমবারও সেখানে ১০৬জন ছিলেন। তারা প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত। এর আগে মার্চের শেষের দিকে সেই বৃদ্ধাশ্রমে চিলেন ২৩০ জন বৃদ্ধ। এরপর থেকে ৪৩জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাকিদের বেশিরভাগের শরীরেই করোনাভাইরাস মৃদু ও মধ্যম মানের সংক্রমণ দেখাচ্ছিল। কারোর জ্বর ছিল কারোর কাশি যেটা অনেকের সারছিল বলে মনে হয় আবার অতি বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সেটা নিউমোনিয়ায় পরিণত হয়েছিল।
জোয়ান মিলার বলেন, ‘আমরা সবাই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছি। কিন্তু আমরা কর্মীরা রয়েছিল খুব সংখ্যায়।’ বৃদ্ধাশ্রমের যে সুপারিটেন্ডেন্ট ছিলেন, বেনেট ওয়ালশ, তাকে বাধ্যতামূলকভাবে তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ম্যাসাচুসেটসের গভর্ণর চার্লি বেকার, অ্যাটর্নি জেনারেল মাউরা হিলি এবং সিভিল রাইটস ডিভিশনের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ঘোষণা দিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দেখা হবে।
সেরা নিউজ/আকিব