অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ মোকাবিলার সময় অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগ দেশটিতে অবস্থিত অস্থায়ী ভিসাধারীদের এক নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার অস্ট্রেলিয়ানদের স্বাস্থ্য, ব্যবসা, চাকরি ও খাদ্য সরবরাহ সুরক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো জনস্বাস্থ্য। এ জন্য দরকার ভাইরাসটিকে দ্রুত নির্মূল করা। এই সংকটময় সময়ে সরকার অস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য কিছু শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জনস্বাস্থ্যের সব পরামর্শ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সবাইকে যথাসম্ভব আইনানুগ বৈধ অবস্থায় থাকতেও বলা হয়েছে। তবে কেউ যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হন, সেই ব্যক্তির ভিসার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
নির্দেশিত কিছু ভিসার সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন তুলে ধরা হলো—
ভ্রমণ ভিসাধারী
অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ ভিসায় বর্তমানে ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। ভ্রমণ ভিসায় শুধু অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমান দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দেশটিতে অনেক বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে। এ ছাড়া আন্তরাজ্য সীমান্ত বন্ধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক এখন অস্ট্রেলিয়ায়। এ প্রেক্ষাপটে সব ভ্রমণ ভিসাধারীর অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পরও যদি কেউ অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতে হয়, তাহলে তাঁকে অবশ্যই বৈধভাবে থাকতে বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ভিসা শেষ হওয়ার আগেই নতুন আরেকটি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি কারও ভ্রমণ ভিসায় “No Further Stay” অর্থাৎ ৮৫০৩, ৮৫৩৪ বা ৮৫৩৫ শর্ত থাকে এবং ভিসার মেয়াদ দুই মাসেরও কম থাকে, তবে প্রথমে এই শর্ত মওকুফের জন্য আবেদন করতে হবে। আর যদি এই শর্ত না থাকে, তবে সরাসরি আরেকটি ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া, কোনো কারণে কারও ভিসার মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে দ্রুত অভিবাসন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসাধারী
শিক্ষার্থী ভিসার শর্তে সরকার সাধারণ সময়ের চেয়ে নমনীয়। কাউকেই সরাসরি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়নি। শুধু যাঁরা নিজের খরচ বহন করতে অক্ষম, তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন। এ ছাড়া, ক্লাসে উপস্থিতি বা অনলাইন শিক্ষার ব্যবহারে অনেক শর্তই সাময়িক শিথিল করেছে অভিবাসন বিভাগ। তা ছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৪০ ঘণ্টা কাজের সীমাবদ্ধতা সাময়িকভাবে শিথিল করেছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আন্তর্জাতিক ছাত্র যাঁরা বয়স্ক পরিচর্যা খাতে কাজ করছেন, তাঁরা পাক্ষিক ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করতে পারবেন। তবে যাঁরা উচ্চ চাহিদার কারণে দেশটির প্রধান সুপারমার্কেটগুলোতে কিছুদিন ধরে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেছেন, তাঁদের আগামী ১ মে থেকে আবারও ৪০ ঘণ্টায় ফিরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, যেসব শিক্ষার্থী প্রচণ্ড অর্থকষ্ট আছেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাঁদের সীমিত সহযোগিতা করছে।
অস্থায়ী কর্ম ভিসাধারী
কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি সাময়িক বন্ধ হয়ে থাকে আর এ কারণে কারও কাজ না থাকে, তাহলে তাঁদের ভিসার বৈধতা বজায় থাকবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক ব্যবস্থা অনুযায়ী তাঁদের ভিসা বাড়ানোর সুযোগ পাবে। ব্যবসায়ীরা ভিসা শর্ত লঙ্ঘন না করে বা ব্যবসায়ের মালিকের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে ভিসাধারীর কর্মঘণ্টা হ্রাস করতে সক্ষম হবে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কেউ যদি স্থায়ীভাবে চাকরি হারান, তবে তাঁকে বিকল্প হিসেবে ৬০ দিনের মধ্যে অন্য নিয়োগকর্তার সন্ধান করতে হবে। তবে এর মধ্যে নিয়োগকর্তা হিসেবে অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান না পেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া, অন্যান্য কোনো কারণে যদি কেউ অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যেতে না পারেন, তাহলে দ্রুত দেশটির অভিবাসন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত অস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগের ওয়েব লিঙ্কে ।
আটকে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য দূতাবাসের উদ্যোগ
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়েছেন কয়েক শ ভ্রমণ ভিসাধারী। তাঁদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য হাইকমিশনের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের ৩ টি টেলিফোন নম্বরে +৬১ ৪১০ ৬১৬ ৮০৩, +৬১ ৪১৬ ২৮৫ ০৬৯, +৬১ ৪৭৬ ০২৫ ০৩২ এবং সিডনিতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের +৬১ ৪২৪ ২৩৭ ৪২২, +৬১ ৪৮০ ২৫৫ ৬২৮ এই নম্বরে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় তথ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হাইকমিশন ওয়েব পোর্টালে একটি অনলাইন নিবন্ধনের লিংক দিয়েছে। এই লিঙ্কে বাংলাদেশিদের নিবন্ধন করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব