নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস এখন পর্যন্ত প্রাণ কেড়েছে চার পুলিশ সদস্যের। গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন পুলিশ সদস্য। সারা দেশে সর্বমোট আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭৭ জনে। যা গতকাল ছিলো ৫৩৮। গত ২৩শে এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২১৮। গত ২৮শে এপ্রিল ছিলো ৩৯২ জন। এভাবে প্রতিদিনই পুলিশে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।
কোয়ারেন্টাইনে আজ পর্যন্ত রয়েছেন ১ হাজার ২শ’ ২৫ জন।
গতকাল কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ১ হাজার ১শ’১৭ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসোলেশনে আছেন ১৭৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ঢাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। কর্মকর্তারা বলছেন, আতঙ্ক নয় বরং সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে যে চার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের চার জনই ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে একজন ছিলেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে। ডিএমপিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৮ পুলিশ সদস্য। গত ২৪ ঘন্টায় ডিএমপিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন পুলিশ সদস্য।
পুলিশের পরিবহন, প্রোটেকশন, উন্নয়ন, গোয়েন্দা, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, আটটি অপরাধ বিভাগসহ ২২টি বিভাগের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের তালিকায় একজন অতিরিক্ত উপ কমিশনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কনস্টেবলসহ ১২ জন নারী সদস্যও রয়েছেন।
সচেতনতার বিষয়ে ডিএমপির থানা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ইচ্ছে থাকলেও নিজেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখা যায় না। উদহারণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, কোথাও কোনো লাশ পড়ে থাকলে সেটা মর্গে নিয়ে যেতে এখন কেউ এগিয়ে আসবে না। পুলিশকেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
এছাড়াও হাট-বাজার বসার সময় নিয়ন্ত্রন, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মানুষের চলাফেরার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাছাকাছি যেতে হয় পুলিশ সদস্যদের। কোথাও কোনো অপরাধ মূলক কর্মকা- ঘটলে পুলিশকেই যেতে হয়। কিছু না ঘটলেও দিনে রাতে বাইরে ডিউটি করতে হয়। সবকিছু করতে গিয়ে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেয়া কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা।
সূত্রমতে, ঢাকার পরেই আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন চার সদস্য। পুলিশ সদর দপ্তর এই চার সদস্যের পরিবারের পাশে রয়েছে। তিন জানান, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৯শে এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০)। তিনি ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনের সময় করোনায় সংক্রমিত হন। পুলিশের মধ্যে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তারপর দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল খালেক ও ট্রাফিক কনস্টেবল আশেক মাহমুদ। আজ সকালে মারা যান স্পোশাল ব্রাঞ্চের এসআই নাজির উদ্দীন। তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
সেরা নিউজ/আকিব