নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ ধাক্কা লেগেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে। সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসে ১০৪ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত ৩৭ মাসের মধ্যে (৩ বছরের বেশি) সবচেয়ে সর্বনিম্ন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এরপর তিন বছরে অর্থাৎ ৩৭ মাসে এতো কম রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এই হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সদ্য বিদায়ী এপ্রিলে প্রায় ৪০ কোটি ডলার কম এসেছে। আর গত মার্চ মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ২৪ কোটি ডলার।
গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসী আয় কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় না বাড়ার কারণে রোববার ৩রা মে পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩.১১ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে ফেলেছে। ফলে প্রবাসীদের হাতে কাজ নেই। অনেকে চলেও এসেছে। তবে যারা এখনও বিভিন্ন দেশে রয়ে গেছেন তারাও ঘরবন্দি। তবে আমদানি ব্যয় কমে আসার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এই অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসীরা এক হাজার ৪৮৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাস থেকেই প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ। যদিও গত ডিসেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অথচ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত দুই মাস ধরে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেসব দেশ থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতেন, সেসব দেশে এখনও লকডাউন চলছে। অনেক প্রবাসী মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদের হাতে কাজ নেই। প্রবাসীদের অনেকেই দেশে চলেও এসেছেন। আর যারা বিভিন্ন দেশে আটকা পড়েছে, তাদের আয় কমে গেছে। যে কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছে ১৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, বিদায়ী বছরজুড়ে প্রবাসী আয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে। ২০১৯ সালের পুরো সময়ে (১২ মাসে) প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের আয় পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে এসেছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার। প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনা, ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধের উদ্যোগ ও ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমায় বৈধ পথে আয় আসা বাড়লেও করোনার কারণে হঠাৎ ছন্দপতন দেখা দিয়েছে।
করোনার বৈশ্বিক মহামারি রূপ নেয়ার পর অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরে এসেছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন প্রবাসী। বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস দিয়েছে করোনা মহামারির কারণে এ বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমবে ২২ শতাংশ।
সেরা নিউজ/আকিব