সেরা নিউজ ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্রমণ শুরুর পর এটাই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানীর রেকর্ড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে দ্য ডেইলি মেইল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার ভোর ৪টা পর্যন্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের করোনা মহামারির সবচেয়ে প্রাণঘাতী সময়।এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে করোনায় মারা গেছেন অন্তত ৬৬ হাজার ৪১৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮২ জন। দেশ হিসেবে মৃতের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালিতে করোনায় প্রাণ গেছে ২৮ হাজার ৭১০ জনের। অন্যদিকে, আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৮২ জন।
সিএনবিসি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানী হয়েছিল গত ২৩শে এপ্রিল।
ওইদিন প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছিল ২ হাজার ৪৭১ জন। শুক্রবারের হিসাব ওই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) সঙ্গে অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের ফারাক রয়েছে। সিডিসি অনুসারে, ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ২ হাজার ৩৪৯ জন করোনা রোগী। অবশ্য সিডিসি স্বীকার করেছে যে, তারা করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য জানে না।
এদিকে, মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই লকডাউন শিথিল করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্য। শুক্রবার রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর সংবাদের মধ্যেও লকডাউন শিথিল করেছে টেক্সাস। রাজ্যটিতে এখনো ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তা সত্ত্বেও, পুরো রাজ্যজুড়ে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, মুভি থিয়েটার, শপিংমল, জাদুঘর ও লাইব্রেরি মোট সক্ষমতার ২৫ শতাংশ খোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও সুইমিং পুল, বার, ব্যায়ামগার, সেলুন বন্ধের নির্দেশ জারি রয়েছে।
অর্থনীতি সচলে লকডাউন শিথিল করলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ এবট। বলেছেন, টেক্সাসবাসীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিৎ। মুখ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক নয় তবে উচ্চ-ঝুকিতে থাকা ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার স্বার্থে মাস্ক পরা উচিৎ।
ডেইলি মেইল জানায়, আর মাত্র ছয় মাস বাদেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। করোনা মহামারি এর আগ দিয়ে দেশটির অর্থনীতির উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলেও লকডাউন খুলে দেয়া নিয়ে মিশ্র বার্তা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একদিকে তিনি সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মানার প্রচারনা চালাচ্ছেন। আবার একই সময়ে লকডাউন খুলে দেয়ার পক্ষেও সমর্থন জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, লকডাউন খুলে দিতে মিশিগানে বিক্ষোভ হয়েছে শুক্রবার। ওই বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প বলেছে, এরা ভালো মানুষ। কিন্তু তারা ক্ষুব্ধ। তারা তাদের জীবন ফিরে চায়, নিরাপদভাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন তুলে নিলে পরিস্থিতি আরো বেগতিক আকার ধারণ করতে পারে। তবে অর্থনীতি বন্ধ থাকায় দেশটিতে বাড়ছে বেকারত্বের হার। মিশিগানের পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ডেলাওয়ার, ফ্লোরিডা, ইলিনয়, নিউ জার্সি, মেক্সিকো, নিউ ইয়র্ক, টেনেসি ও ওয়াশিংটনেও লকডাউন তুলে নিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
টেক্সাসের পাশাপাশি লকডাউন শিথিলে এগিয়ে রয়েছে জর্জিয়াও। গত সপ্তাহে সেখানে আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে ব্যবসা। নিউ জার্সিও শনিবার লকডাউন কিছুটা শিথিল করে জনগণকে বাইরে বের হতে দিয়েছে। অর্থনীতি সচলের চাপের মধ্যে সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিত থাকা সত্ত্বেও লকডাউন শিথিলের দিকে যাচ্ছে আরো বহু রাজ্য। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকা নিউ ইয়র্কের মেয়র অ্যান্ড্রিও কিয়োমো জানিয়েছেন, অন্যান্য রাজ্যের মতো তাড়াহুড়ো না করে, ধীরে ধীরে লকডাউন তোলা হবে সেখানে।
জন হপকিন্স অনুসারে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৬ হাজার ৪৩০ জন। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৩ জন।
সেরা নিউজ/আকিব