সন্তানদের সামনে ছটফট করে মারা গেল বাবা, এগিয়ে এলো না কেউ - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
সন্তানদের সামনে ছটফট করে মারা গেল বাবা, এগিয়ে এলো না কেউ - Shera TV
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

সন্তানদের সামনে ছটফট করে মারা গেল বাবা, এগিয়ে এলো না কেউ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। ষাটোর্ধ এই ব্যবসায়ী কিছুদিন ধরে সাধারণ জ্বর, কাশিতে ভুগছিলেন। পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা করতে এসেছিলেন হাসপাতালে। সঙ্গে ছিলেন তার দুই ছেলে।  উত্তপ্ত গরমের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে পারেননি। কারণ হাসপাতাল ওইদিনের মত আর নমুনা সংগ্রহ করবে না। অনেকটা হতাশ হয়ে তার ছেলেরা তাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাকের আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। মাথা ঘুরে সড়কে পড়ে ছটফট করতে থাকেন।

সন্তানদের চোখের সামনেই মারা যান আব্দুর রাজ্জাক। বাবার মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে পড়েন দুই সন্তান। তাদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে সেখানকার পরিবেশ। বাবার মরদেহ ঢাকার জন্য সন্তানেরা এক টুকরো কাপড় খোঁজে পায়নি কোথাও। সড়কে একটি পোস্টারের ওপর রাখা হয় মরদেহ। ঘটনাটি ঘটে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সামনে।

আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শাহরিয়ার ইমন বলেন, বাবার দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসে সমস্যা ছিল। আর সপ্তাহখানেক ধরে সাধারণ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হচ্ছিলো । আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক তাকে কিছুদিন ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তারই পরামর্শে রোববার ভোরে করোনা পরীক্ষার জন্য  বাবাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। লম্বা লাইন তবুও বাবাকে রেখে আমি লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপ ও গরম বাড়তে থাকে। তিন ঘণ্টা লাইনে দাড়াঁনোর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালো আর টোকন দেয়া হবে না।  তাই করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ হবে না। আমরা তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেই। ঠিক তখনই বাবা বুকে চাপ দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তারপর ছটফট করতে করতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

বাবা যখন সড়কে পড়ে ছটফট করছিলেন তখন তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম। দৌঁড়ে পাশের বারডেম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম কোনো সাহায্য পাইনি। বাবা মারা যাওয়ার পর মরদেহ ঢাকার জন্য এক টুকরো কাপড়ও তারা দেয়নি। পরে সাংবাদিক সজল মাহমুদ ভাই বারডেম থেকে কাপড় সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন।

মৃত দেহের নমুনা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলে যাবো অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। কেউ যেতে রাজি হয়নি। পরে শাহবাগ থানার একজন এএসআই ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স এনে দিয়েছিলেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে ইমন বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর হয়। আমরা দুইভাই বাবার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স তুলতে পারছিলাম না। অথচ পাশে কত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল। তারা কেউ ছবি তুলছিলো, কেউ ভিডিও করছিলো। কেউ একটু সাহায্য করে নাই। পরে আরেক পথচারির সহযোগীতায় মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছি। চোখের সামনে বাবার মৃত্যুর দৃশ্য সারা জীবন মনে থাকবে। এমন মৃত্য যেন কারো না হয়। ইমন বলেন, বাবা হয়তো স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

করোনায় বাবা মারা যাওয়ার কথা না। কারণ তার করোনার উপসর্গ তেমন ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলো পারিবারিক চিকিৎসকের ওষুধে কমে গেছে। শুধুমাত্র মনের সন্দেহে করোনা পরীক্ষা করাতে চেয়েছিলাম। ঢাকা মেডিকেলে বাবার মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। রিপোর্ট আসলে করোনা কিনা সেটি জানা যাবে।

মৃত আব্দুর রাজ্জাককে গত এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডা.রুবায়েত শেখ। তিনি বলেন, রাজ্জাকের সাধারণ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছিল। আমি তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছিলাম। সেগুলো খাওয়ার পর তার শারীরিক উন্নতি হয়েছিলো। তারপরও আমি করোনা পরীক্ষা করার জন্য তার ছেলেদেরকে বলেছিলাম। কারণ করোনা হলে একধরণের চিকিৎসা আর না হলে আরেক ধরণের। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম। আমার পরামর্শেই রোববার তারা করোনা পরীক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তারা পরীক্ষা করাতে না পেরে চলে আসার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। রাজ্জাকের ছেলেরা আমাকে ফোনে সব বলেছে। যতটুকু বুঝতে পারলাম তিনি হার্টঅ্যাটাকেই মারা গেছেন।

আব্দুর রাজ্জাক সড়কে মারা যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার সজল মাহমুদ। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তখন গেঞ্চির কাপড়ের মাস্ক পরা দুটা ছেলেকে দেখেছিলাম। পরে কাজ শেষ করে সেখান থেকে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। তারপর আবার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে এসে দেখি গেঞ্জির কাপড়ের মাস্ক পরা দুই ছেলে কান্নাকাটি করছে। পরে তাদের একজন এসে আমাকে বলে ভাই আমার বাবা হঠাৎ করে মারা গেছেন। লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। কেউ লাশ ধরছে না।

লাশ ঢাকার জন্য একটুকরা কাপড় আনতে বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা পাত্তা দেয়নি। পরে আমি গিয়ে রোগীর একটা বিছানা ছাদর এনে দেই। লাশ বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা অ্যাম্বুলেন্সও পাচ্ছিলো না। পরে শাহবাগ থানার এএসআই খালিদ আনোয়ার একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360