করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব আজ টালমাটাল। এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। বিশেষ করে বিমান চলাচল খাত আজ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। সব এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ এখন গ্রাউন্ডেড। আকাশে উড়োজাহাজহীন এক বিশ্ব- এও কি ভাবা যায়। দুঃস্বপ্ন নয়। এটিই এখন নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
এই করোনাকালের মধ্যেই বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দিচ্ছে। খুব শিগগির এয়ারলাইন্সগুলোও তাদের ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে আশা করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে ফ্লাইট চালুর আগে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সুপারিশ।
৯/১১ পরেও বহু ধরনের নিয়ম কানুন মেনে এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছিল। এবারও হয়তো মানুষের চিরাচরিত ভ্রমণ নিয়মনীতির অনেক কিছু বদলে ফেলতে হবে। করোনাভাইরাসকে নব্য সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে বিশেষজ্ঞরা নতুন নিয়ম মেনে এয়ারলাইন্সগুলোকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর পরামর্শ দিয়েছেন।
এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক উড়োজাহাজে চলাচলের নতুন নিয়ম-কানুন সমূহ। উড়োজাহাজের ওঠার আগে চেক-ইন আর আগের মতো দ্রুততার সঙ্গে হবে না। সামাজিক দূরত্ব, যাত্রী ও তার ব্যাগের স্যানিটেশন, প্রত্যেকটি লাইনের দূরত্ব বেড়ে যাওয়া (সামাজিক দূরত্বের কারণে) এবং বোর্ডিংয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষাসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। একটি উড়োজাহাজের যাত্রী অফলোড হওয়ার পর সুরক্ষা রীতি মেনে পুরো কেবিন ক্লিনিং ও স্যানিটাইজেশন করার কাজটিও হবে সময় সাপেক্ষ।
যেসব পরিবর্তন আসছে ভবিষ্যতের আকাশ যাত্রায় ডিজিটাল টেকনোলজি ও অটোমেশন প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিমানবন্দরগুলোতে বাধ্যতামূলক বিভিন্ন টাচপয়েন্ট কমিয়ে বায়োমেট্রিক বোর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেখানে যাত্রীর মুখই হবে একমাত্র পাসপোর্ট। এরই মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কান্তাস ও ইজিজেট এ ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করছে।
আরও যেসব বিষয় বিবেচনাধীন রয়েছে সেগুলো হলো- কোনো লাউঞ্জ সুবিধা বা কেবিন ব্যাগ থাকতে পারবে না। এছাড়া অটোমেটিক আসন উন্নীতকরণ, ফেস মাস্ক, সার্জিক্যাল গ্লাভস, সেলফ চেক-ইন, সেলফ ব্যাগ ড্রপ অফ, ইম্যুনিটি পাসপোর্ট, অন স্পট ব্ল্যাড টেস্ট এবং স্যানিটেশন ডিস-ইনফেকশন টানেলের ব্যবস্থা থাকছে।
বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোতেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বলছে, হিথ্রো, জেএফকে, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর অনলাইন চেক-ইন ও কন্টাক্টলেস পেমেন্ট সিস্টেম চালু করবে। বিমানবন্দরগুলোতে বায়োমেট্রিক চেক-ইন ছাড়াও যাত্রীদের ব্যাগ ট্রাভেল বাবলস অথবা ডিসইনফেকশন টানেলে ফেলা, করিডর ও কনকোর্সে সামাজিক দূরত্বের চিহ্ন রাখা, যাত্রী লাইনের জায়গা বাড়ানো, হ্যান্ড স্যানিটেশন স্টেশন ও থার্মাল স্ক্যানিং বসাতে হবে। যাত্রীদের মধ্যে যারা পুরোপুরি ফিট তারাই শুধু ভ্রমণের অনুমতি পাবেন।
বোর্ডিং ব্যবস্থাপনা উড়োজাহাজের বোর্ডিংটাও স্পর্শহীন হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম চালু করা দরকার। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোতে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এছাড়া উড়োজাহাজের ভেতরে ব্লক সিট রাখা, মাস্ক রাখাসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক জিনিস রাখতে হবে। এরইমধ্যে এয়ার ফ্রান্স ও ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএম এসব ব্যবস্থা চালু করেছে। আশা করা যায়, অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোও এসব করবে। সেই সাথে সব যাত্রীকে এক সঙ্গে খাবার সরবরাহের পদ্ধতি পাল্টে ফেলার কথাও বলা হচ্ছে। হংকং এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে সবাইকে এক সঙ্গে খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
কি হতে পারে অন্য দেশে ঢোকার প্রক্রিয়া কিছু বিমানবন্দর যেমন হংকং ও ভিয়েনাতে যাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করেই তাদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন ( আইএটিএ) থার্মাল স্ক্যানিং টেস্টের সুপারিশ করছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকা বলছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইজিজেট ও ভার্জিন আটলান্টিক যাত্রীদের জন্য প্রি-স্ক্রিনিং পদ্ধতি চালু করেছে।
যদিও এখন পর্যন্ত এ ধরনের টেস্ট অথবা স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এজন্য এয়ারলাইন্সগুলো এ বিষয়ে সমন্বিত আইন চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। তাছাড়া যাত্রীদের গায়ের তাপমাত্রা ও কোভিড-১৯ উপসর্গ যাচাইয়ের জন্য কারা দায়বদ্ধ থাকবেন সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
এয়ারলাইন্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ফার্ম সিমপ্লিফ্লাইং বলছে, বিমানবন্দরের ভেতরের হেলথ স্ক্রিনিং করতে হয়তো নতুন ফেডারেল হেলথ এজেন্সিকে কাজে লাগাতে হতে পারে।
দি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন বলছে, আগামী মাসে এয়ারলাইন্সগুলোতে ধীরে ধীরে যাত্রী আসা শুরু করবে। বিশেষ করে শুরুতে অভ্যন্তরীণ রুটসমূহে, এরপর পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মানুষের যাতায়াত শুরু হবে এবং সবশেষে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটসমূহে যাত্রীরা চলাচল আরম্ভ করবে। দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) বিশ্বাস করে, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ভ্রমণকারীরা যারা তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ তারাই হবে প্রথম দিকের ভ্রমণকারী।
সেরা নিউজ/আকিব