ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনায় লণ্ডভণ্ড ইতালি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জীবনের পাশাপাশি জীবিকা তথা সামগ্রিক অর্থনীতি বাঁচাতে দেশটি একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জোসেফ কোঁতের নেতৃত্বাধীন সরকার কঠিন শর্তে ইতালিতে থাকা অবৈধ ৫ লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ক্রান্তিকালীন এ সূযোগটি বাংলাদেশিরাও নিতে পারেন। তবে এতে চটজলদি কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে অভ্যন্তরীণ অনেক বাধা রয়েছে, যা জরুরি ভিত্তিতে দূর করতে হবে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নানা কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের প্রথম বাধা হচ্ছে পাসপোর্ট। প্রায় অর্ধেক অবৈধ বা অনিয়মিত বাংলাদেশির পাসপোর্টে জটিলতা রয়েছে।
তাদের নাম, বয়স এবং ঠিকানা সংশোধনীর আবেদন ঝুলে আছে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ঢালাও এমন সংশোধনী বারণ। দূতাবাস চাইলেও পাসপোর্ট অফিস নতুন নীতিমালা না করে বা বিদ্যমান নীতিমালা স্থগিত না হলে এটি দিতে পারবে না। দ্বিতীয়তঃ এমপ্লয়ার সংক্রান্ত জটিলতা। তৃতীয়তঃ ক্যাটাগরি ঠিক করে দেয়ার কারণে হোটেল-মোটেলে কর্মরত বাংলাদেশিরা আবেদন করতে পারবেন না। যদিও দালালচক্র এ নিয়ে অসত্য প্রচারণা এরইমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ অবশ্য বলছেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে আরও বুঝতে হবে। নিডবেইজ বা প্রয়োজনের নিরিখে বৈধকরণের এ সিদ্ধান্তের পরবর্তী ধাপগুলোতে নিশ্চয়ই ক্লারিফিকেশন বা স্পষ্টতা আসবে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আলোচনা এবং রাজনৈতিক বিতর্কের পর গত বুধবার বৈধকরণের ওই ফাইল চুড়ান্তভাবে অনুমোদন করে ইতালির মন্ত্রীসভা। ওই দিন বিকালে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে অবৈধদের বৈধকরণের একটি খসড়া প্রকাশ করে মন্ত্রীপরিষদ। এতে শুধুমাত্র দুটি ক্যাটাগরির শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার কথা বলা হয়। টার্গেট ধরা হয়- কৃষিখাতে কর্মরত তিন লাখ আর বাসাবাড়ি ও বৃদ্ধাশ্রমে কর্মরতদের মধ্যে দুইলাখ, সর্বমোট পাঁচ লাখ। বৈধকরণের শর্তও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। বলা হয়, চলতি বছরের ৮ মার্চের আগে থেকে যারা কন্ট্রাক্টসহ কৃষিকাজ করে আসছেন তারাই মূলত বৈধ হতে পারবেন। একই নিয়মে যারা বাসাবাড়িতে ও বৃদ্ধাশ্রমে ৮ মার্চের আগে থেকে কন্ট্রাক্টসহ কাজ করছেন তারাও বৈধতা পাবেন। তবে এক্ষেত্রে কাজের কন্ট্রাক্ট যতদিন থাকবে ততদিনের জন্যই এ বৈধতা পাওয়া যাবে। যদিও পরবর্তীতে কাজের মাধ্যমে স্টে পারমিট আবার নবায়ণ করা যাবে। এক্ষেত্রে কর্মস্থলের মালিকের মাধ্যমে কাজের উপযুক্ত প্রমাণসহ চারশ ইউরো সরকারি ফি জমা দিয়ে ১ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তাছাড়া গতবছরের ৩১ অক্টোবরের আগে যাদের স্টে পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর কোনো কারণে নবায়ণ করতে পারেননি, তারাও বৈধতার আবেদন করতে পারেবেন। এ জন্য তাদের ১৬০ ইউরো করে দিয়ে ছয় মাসের জন্য বৈধতার সুযোগ পাবেন। তবে নির্ধারিত সময় শেষে তাদের পারমিট নবায়ণের অপশন থাকবে।
খসড়ায় এটাও বলা হয়, যদি কোনো শ্রমিক বা মালিকের বিরুদ্ধের ফৌজদারি মামলা থাকে তবে তিনি সূযোগটি গ্রহণ করতে পারবেন না। মিলানে বাংলাদেশ কমিউনিটির পরিচিত মুখ স্থানীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল আহমেদ মনে করেন-করোনার কারণে ইতালি যে কঠিন সময় পার করছে তার মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া এ নিয়ে এক মাসের বেশি সময় বিতর্ক হয়েছে। চুড়ান্ত বিচারে দেশটির কৃষিমন্ত্রী তেরেসা বেল্লানোভার যুক্তি জয়ী হয়েছে। তার প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর মন্ত্রীপরিষদকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে তিনি আনন্দে কেঁদেছেন। বলেছেন- দেশের করোনা পরবর্তী খাদ্যসংকট দূর করতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও এই সিদ্ধান্তের কারণে ভবিষ্যতে দেশের কৃষিখাত ব্যাপকভাবে অগ্রসর হবে।
ইতালি সরকারের অন্যান্য সিদ্ধান্ত: ইতালিতে প্রায় কোটি মানুষের বাস। করোনার কঠিন সময়ে বৈধ-অবৈধ সবার কথা বিবেচনায় ৫৫ বিলিয়ন ইউরোর একটি ডিক্রি চূড়ান্ত করেছে কোঁতের সরকার। এই ডিক্রিতে বলা হয়েছে যারা সাময়িকভাবে কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাসায় আছেন তাদের মুল আয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থ সরকারি ভাবে প্রদান করা হবে। বেবি সিটারের একটি বোনাস দেয়া হবে বলেও ডিক্রিতে উল্লেখ আছে। বেকারদেরকে বিশেষ তহবিলের আওতায় এনে অর্থ প্রদান করা হবে। যা ইতালিতে বিরল এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেক প্রশংসিত হয়েছে সরকারের বেকারদের অর্থ দেয়ার পলিসি। এরকম অনেক গুলো সেক্টর নির্ধারণ করে বিশাল বাজেটের এই ডিগ্রি ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য মাসব্যাপী বাকবিত-া হলেও ১২ মে, ২০২০ মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইতালির কোয়ালিশন সরকারের দুই রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে বিস্তৃত আলোচনা এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানা গেছে।
সেরা নিউজ/আকিব