করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম, খুলছে লকডাউন - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম, খুলছে লকডাউন - Shera TV
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম, খুলছে লকডাউন

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৬ মে, ২০২০

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:

চীনের সঙ্গে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত আর ৯ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনাম। কিন্তু এরপরও দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১২ জন এবং মৃতের সংখ্যা শূণ্য। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের ২৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।

দেশটিতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর প্রায় এক মাস কেটে গেছে এবং ইতোমধ্যেই সবকিছু খুলতে শুরু করেছে।

বিবিসি নিউজের অ্যানা জোন্স লিখেছেন কীভাবে ‘বাড়তি’ পদক্ষেপ নিয়ে ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশে এখনও সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে, কিন্তু ভিয়েতনাম, শুরু থেকে সংক্রমণের হার যখন কম ছিল, তখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।

তবে এর জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে দেশটিকে, মূল্যও দিতে হয়েছে এবং যেধরনের কঠোর পদক্ষেপ তারা নিয়েছিল, তার নেতিবাচক দিকও ছিল।

সবচেয়ে বড় কথা, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ভিয়েতনামের এই সাফল্য থেকে অন্য দেশগুলোর শিক্ষা নেওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্য দেশগুলো সেই সুযোগ মিস করে গেছে। এখন এসব দেশে সংক্রমণ ক্রমশই বাড়ছে এবং তা চূড়ায় পৌঁছানোর পথে রয়েছে।

চরম কিন্তু প্রয়োজনীয়’ পদক্ষেপ

ভিয়েতনামে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক অংশীদার সংস্থার ড. টড পোলাক যিনি কাজ করেন হ্যানয়ে, তিনি বলেন, ‘যখন এধরনের অজানা ও সম্ভাব্য বিপদজনক একটা জীবাণুর বিরুদ্ধে আপনি লড়াইয়ে নেমেছেন, তখন বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়া অনেক ভাল। এই ভাইরাস স্বল্প পরিসরে ছড়ালেও দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বড়ধরনের চাপের মুখে পড়বে জেনে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ গোড়াতেই ভাইরাস ঠেকাতে ব্যাপক পরিসরে উদ্যোগ নেয়।

জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও রোগ শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার ‘চরম পর্যায়ে পদক্ষেপ’ নেয়া শুরু করে দেয়। রহস্যময় নতুন এই নিউমোনিয়া রোগে তখন উহানে মারা গেছে মাত্র দুজন। সেই পর্যায়ে তাদের প্রস্তুতির শুরু।

জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে সেখানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়, যখন উহান থেকে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে দেখতে হো চি মিন সিটিতে যান। ভিয়েতনাম তখন থেকেই শুরু করে দেয় তার জরুরি কালীন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

‘তারা এত দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যা তখন মনে হয়েছিল বেশি কঠোর- বেশি বাড়াবাড়ি, কিন্তু পরে দেখা গেছে সেটা সুবিবেচনার কাজই ছিল,’ বলেছেন অধ্যাপক গাই থোয়েটস্, যিনি হো চি মিন সিটিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক এবং কাজ করেন সরকারের সংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচিতে।

ভিয়েতনাম এমন সব পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যা নিতে অন্যান্য দেশের সময় লেগে যাবে কয়েকমাস। তারা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনে, চীনের সাথে সীমান্ত এলাকায় পর্যবেক্ষণ কঠোর করে এবং কিছুদিনের মধ্যে সীমান্ত পথে চলাচল পুরো বন্ধ করে দেয়। সীমান্ত এবং অন্যান্য নাজুক জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয়।

জানুয়ারির শেষে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে স্কুলগুলো বন্ধই ছিল। তখনই স্কুলের ছুটি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে তা খুঁজে বের করতে ব্যাপক জনশক্তি নিয়োগ হয়, প্রচুর অর্থবল ব্যবহার করা হয়।

‘ভিয়েতনামকে আগেও বহু রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করতে হয়েছে,’ বলছিলেন অধ্যাপক থোয়েটস্। যেমন ২০০৩ সালে সার্স থেকে শুরু করে ২০১০য়ে এভিয়ান ফ্লু, এছাড়াও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া হাম ও ডেঙ্গু।

‘সরকার এবং দেশটির মানুষ সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় অনেক অনেক বেশি অভ্যস্ত, ধনী দেশগুলোর থেকে এ ব্যাপারে তারা সম্ভবত অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তারা জানে কীভাবে এগুলো মোকাবেলা করতে হয়,’ বলেন অধ্যাপক থোয়েটস্।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি এসে ভিয়েতনাম দেশটিতে ঢোকা প্রত্যেক মানুষকে এবং দেশের ভেতর পজিটিভ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।

এর খরচের বেশিটাই বহন করে সরকার। যদিও কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা সেভাবে বিলাসবহুল ছিল না। ভিয়েতনামে বাড়ি একজন মহিলা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে যান সেসময়- কারণ তিনি মনে করেছিলেন ভিয়েতনামে থাকাই বেশি নিরাপদ হবে- তিনি বিবিসির ভিয়েতনাম বিভাগকে বলেছিলেন যে, প্রথম রাতে তাদের শোবার জন্য শুধু একটা মাদুর দেয়া হয়েছিল। কোন বালিশ বা কম্বল ছিল না। একটা বড় ঘর যেখানে খুবই গরম ছিল সেখানে দেয়া হয়েছিল মাত্র একটা পাখা।

রোগের লক্ষণ নেই কিন্তু জীবাণু বহন করছে তাদের থেকে সুরক্ষা

অধ্যাপক থোয়েটস্ বলছেন ব্যাপক পরিসরে মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো এই সাফল্যের পেছনে একটা বড় কারণ। কেননা যত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে তাদের অর্ধেকের রোগের লক্ষণ ছিল না, কিন্তু তাদের শরীরে ভাইরাস ছিল অর্থাৎ তারা ছিল যাদের বলা হচ্ছে ‘অ্যাসিম্পটোমেটিক’ ।

কোয়ারেন্টিনে যাদের নেয়া হয়েছিল, তাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তারা অসুস্থ হোক বা না হোক। অধ্যাপক থোয়েটস্ বলছেন পরীক্ষা করা না হলে ভিয়েতনামে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত রোগীদের শতকরা ৪০ ভাগ জানতোই না যে তাদের শরীরে ভাইরাস রয়েছে।

এখন জীবাণুবহনকারী (অ্যাসিম্পটোমেটিক) রোগীর সংখ্যা যদি এত বেশি হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে করণীয় একটাই, যেটা ভিয়েতনাম করেছে, তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, এদের ভেতরে যদি আটকে রাখা না হতো, তাহলে এরা বাইরে ঘুরে বেড়াতো এবং অন্যদের সংক্রমিত করতো। আর দেশটিতে একজনও মারা না যাবার পেছনে এটাই ব্যাখ্যা।

বাইরে থেকে যারা সেসময় ভিয়েতনামে ফিরছিল তাদের বেশিরভাগই ছিল শিক্ষার্থী, পর্যটক, অথবা ব্যবসার কারণে ভ্রমণকারী। এরা বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা সেভাবে ছিল না।

ফলে এদের নিজেদের পক্ষেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ভাল সক্ষমতা ছিল। আর তাদের পক্ষে বয়স্ক কোন আত্মীয়কে এই ভাইরাসে সংক্রমিত করার সুযোগও ছিল না। ফলে দেশটির স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা অল্প কিছু সংখ্যক গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়াদের চিকিৎসায় মন দিতে পেরেছিল।

ভিয়েতনামে দেশ জুড়ে কখনই লকডাউন দেয়া হয়নি। কিন্তু কোথাও গুচ্ছ সংক্রমণের খবর আসলেই কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যানয়ের উত্তরে সন লই এলাকায় হাতে গোণা কয়েকজন সংক্রমিত হবার পরই ওই এলাকা ও আশপাশের ১০ হাজারের বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। একই পদক্ষেপ নেয়া হয় রাজধানীর কাছে হা লই নামে আরেকটি এলাকায় যেখানে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ১১ হাজার মানুষকে। একটি হাসপাতালকেও রোগী ও কর্মীসহ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এই অবরোধ ভেঙে কাউকে দু সপ্তাহ পর্যন্ত বেরতে দেয়া হয়নি যতক্ষণ না তারা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে, সেখানে আর একজনও সংক্রমিত রোগী নেই। বিবিসি।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360