অনলাইন ডেস্ক:
চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের একটি কার্যকরী এবং নিরাপদ ভ্যাকসিন আনার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দেশটি প্রতিশ্রুতিশীল অন্তত ছয়টি ভ্যাকসিন এক থেকে দেড় লাখ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। ব্যাপক এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মার্কিন এই প্রকল্প যদি সফল হয় তাহলে ভ্যাকসিন তৈরির অতীত কমপক্ষে ১০ বছরের রেকর্ড সময়কে মাত্র কয়েক মাসে নামিয়ে আনবে। বিশ্বজুড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত ও ৩ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনাভাইরাস মহামারির লাগাম টানতে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো নিজেদের ভ্যাকসিন ব্যর্থ হলে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নেটওয়ার্ক এবং ডাটা প্রতিযোগীদের সঙ্গে শেয়ার করার বিষয়ে রাজি হয়েছেন।
মার্কিন এই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, যেসব ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে ছোট পরিসরের পরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো আগামী জুলাই মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হবে।
এই গবেষণায় এবার এক লাখ থেকে দেড় লাখ মানুষকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে জানিয়ে সিয়াটলের ফ্রেড হাটচিনসন সেন্টারের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ল্যারি কোরি বলেছেন, যদি ভ্যাকসিনের সুরক্ষা সমস্যা দেখা না দেয়, তাহলে কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের পরিচালক ডা. ফ্রান্সিস কলিনস বলেন, গত মাসে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কোভিড-১৯ থেরাপিউটিক ইন্টারভেনশনস অ্যান্ড ভ্যাকসিনস (অ্যাকটিভ) নামের এই প্রকল্প ঘোষণা দেয়া হয়। ভ্যাকসিন আনার গতি ত্বরান্বিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা হোয়াইট হাউসের অপারেশন র্যাপ স্পিড কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত। যেসব ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে প্রাণীর দেহে পরীক্ষায় সফল হয়েছে, সেগুলোই মানব দেহে প্রয়োগে অগ্রাধিকার পাবে।
কলিনস এবং কোরি বলেন, প্রাণীর পর ভ্যাকসিন সাধারণত প্রথমবার ছোট পরিসরে সুস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে পরীক্ষা চালানো হয়। পরে ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত হলে তা ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা করা হয়। এই সময় হাজার হাজার মানুষের দেহে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা হয়।
তারা বলেন, এরপরই কেবলমাত্র প্রস্তুতকারীরা লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে পারেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে সেসব প্রক্রিয়ার অনেকগুলোই বাদ দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্য এবং শেষ ধাপের ট্রায়াল বাদ দিয়ে চূড়ান্ত ধাপের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে বৃহৎ পরিসরের এই পরীক্ষার সুরক্ষা ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান এ দুই মার্কিন বিজ্ঞানী। ভ্যাকসিন তৈরির এই দ্রুতগতির প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে অনেক মার্কিনির। কোরি বলেন, যদি ভ্যাকসিন এবং প্লেসবো গ্রুপগুলো সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে, তাহলে অত্যন্ত কার্যকর একটি ভ্যাকসিন ছয় মাসের মধ্যেই পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে একটি কার্যকর ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় ৯ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
কোনও কোম্পানি করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন আনতে পারলে এর উৎপাদনে কোটি কোটি ডলার সহায়তা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন সরকার।
দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য করোনার সম্ভাব্য ছয়টি ভ্যাকসিন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং মেডিক্যাল কমিউনিটির মধ্যে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আফ্রিকাতেও এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী কোলিনস।
এই তালিকায় এগিয়ে রয়েছে দেশটির ওষুধপ্রস্তুতকারক জায়ান্ট কোম্পানি মডার্নার তৈরিকৃত করোনা ভ্যাকসিন। আগামী জুলাইয়ে মডার্নার এই ভ্যাকসিনটিই সবার আগে ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনিকা কোম্পানির তৈরির ভ্যাকসিনটিও এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন কোলিনস। বৃহস্পতিবার মার্কিন সরকার বলেছে, তারা অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ৩০ কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবেন।
কলিনস বলেন, মডার্নার ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যে মানব দেহে পরীক্ষার মাঝামাঝি স্তরে রয়েছে। এছাড়া জনসন অ্যান্ড জনসন, সানোফি, মার্ক অ্যান্ড কোংয়ের ভ্যাকিসনও মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আরও ১৪টি ভ্যাকসিনের নাম রয়েছে। কিন্তু এসব ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষায় যাওয়ার আগে প্রাথমিক পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন কলিনস। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনগুলো রোগকে বাড়িয়ে তোলে কিনা পরীক্ষায় সেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকলে তা রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সেটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
হোয়াইট হাউসের করোনা কমিটির প্রধান ও দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফওসি বলেন, যদি সবকিছু ঠিকভাবে এগোয়, সব তারা একত্রে জ্বলে উঠে, তাহলে আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির মধ্যে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
সেরা নিউজ/আকিব